ঢাকা : নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ে বিএনপি বিভ্রান্তমূলক বক্তব্য দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেছেন, বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের বাজারেও এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। তবে বাজারের এই সংকট থাকবে না এবং অল্প সময়ের মধ্যেই দ্রব্যমূল্য পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবো।
মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) এক বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপি নেতাদের লাগাতার মিথ্যাচার ও অপপ্রচারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি এ বিবৃতি দেন।
বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি নেতারা প্রায় এক দশক ধরে তথাকথিত গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত করার নামে সরকার পতনের কথা বলে আসছে। ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের মতো আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ভয়ংকর পরিণতির হুমকি দিচ্ছে। বিএনপি নেতাদের এটা ফাঁকা আওয়াজ ছাড়া আর কিছু নয়। বাংলার জনগণ তাদের দুরভিসন্ধিমূলক ফাঁকা আওয়াজে বিভ্রান্ত হয় না এবং কোনো দিন হবেও না।
তিনি বলেন, সরকার পতনের চক্রান্ত বাস্তবায়নে তারা দেশের অভ্যন্তরে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশবিরোধী ও জনগণের স্বার্থ পরিপন্থী নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকায় এ দেশের জনগণ তাদের চূড়ান্তভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও যুদ্ধাপরাধীদের পৃষ্ঠপোষকতা, অর্থ পাচার, এতিমের টাকা আত্মসাৎ, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা, সিরিজ বোমা হামলা, সংখ্যালঘু নির্যাতন, হত্যা-ক্যু-ধর্ষণের রাজত্ব কায়েম, ধ্বংসাত্মক রাজনীতি ও অগ্নিসন্ত্রাসের কারণে বিএনপির বিরুদ্ধে জনগণ ব্যালট রায়ের মাধ্যমে বার বার নীরব অভ্যুত্থান সংঘটিত করেছে।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি প্রশ্নে বিএনপির এ বক্তব্যের জবাবে আওয়ামী সাধারণ সম্পাদক বলেন, দীর্ঘ ২ বছরের বেশি সময় বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের ভয়াবহ বিস্তারের কারণে বিশ্বের অপর দেশের সাথে আমদানি-রপ্তানির স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হওয়া, বেশ কিছু আমদানি নির্ভর দ্রব্যের সংশ্লিষ্ট দেশে উৎপাদন কম হওয়া এবং করোনার অভিঘাত কাটতে না কাটতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনের নানা টানাপড়েন ও নিষেধাজ্ঞার ফলে বিশ্ববাজারে অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি ঘটেছে। অন্যান্য দেশের মতো যার বিরূপ প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের বাজারেও। সেই সাথে রয়েছে অসাধু মহলের ষড়যন্ত্র মুনাফা লোভী মজুদদারগোষ্ঠীর অপতৎপরতা।
কাদের বলেন, তবে দেশবাসী ভুলে যায়নি, অতীতে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ভয়াবহ পরিস্থিতির স্মৃতি। উত্তরবঙ্গে মঙ্গায় না খেয়ে মানুষের মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার দুর্বিষহ কষ্টের কথা। তাদের শাসনামলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনগণের নাভিশ্বাস উঠেছিল। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বিএনপির সেই চরম ব্যর্থতার লজ্জাজনক অধ্যায় দেশবাসীর স্মৃতির মানসপট থেকে মুছে যায়নি।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর এবং জনগণের স্বার্থ সংরক্ষণকে অগ্রাধিকার দিয়েই বর্তমান সরকারের সকল পরিকল্পনা ও কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ইতোমধ্যে আমদানি পর্যায়ে তেল, চিনিসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর শুল্ক কমানোর জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
মন্ত্রী বলেন, বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় ভোজ্য তেলের বর্তমান মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে এবং কেউ অতিরিক্ত দাম রাখলে ১৬১২১ নাম্বারে ফোন করে অভিযোগ করার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি অসাধু মুনাফা খোর মজুদদারদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। হাজার হাজার টন ভোজ্য তেল উদ্ধার হচ্ছে। আমরা আশা করি, বাজারের এই সংকট থাকবে না এবং অল্প সময়ের মধ্যেই দ্রব্যমূল্য পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবো। আমরা বিএনপিকে বিভ্রান্তিকর মন্তব্য ও অপপ্রচার থেকে বিরত থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।
সোনালীনিউজ/এমটিআই