ঢাকা : জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপিকে সরকারবিরোধী আন্দোলন বা রাজনীতির মাঠ দখলের সুযোগ দেবে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
এ মুহূর্তে সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথের যেকোনো কর্মসূচি প্রতিহত করতে কঠোর অবস্থানে থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবেও আওয়ামী লীগ কঠোর অবস্থান নেবে।
ধারণা করা হচ্ছে, এমাস থেকেই উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে দেশের রাজনীতির মাঠ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছে। দলটি কিছু কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নেমেছে। এসব কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে রাজনীতির মাঠ অনেকটা উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। কিছু জায়গায় সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আগেই বলা হয়েছে শোকের মাস আগস্টের কারণে মাঠের কর্মসূচি থেকে বিরত রয়েছে দলটি। তবে এ মাস থেকে তারা মাঠে থাকবে এবং আন্দোলনের নামে কেউ সহিংসতা তৈরির চেষ্টা করলে তা কঠোরভাবে মোকাবিলা করা হবে।
সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজনীতির মাঠ দখলে রাখতে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে আওয়ামী লীগ।
নির্বাচনের আগে প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি যাতে রাজনীতির মাঠ দখলে নিতে না পারে সেজন্য আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে রাজপথে অবস্থান করবে। কোনোভাবেই বিএনপিকে তারা রাজপথ দখলে নিতে দেবে না। রাজপথ বিএনপির দখলে গেলে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগের পরিস্থিতি তৈরির আশঙ্কা রয়েছে বলে তারা মনে করছেন।
গত ৩০ আগস্ট এক প্রেস ব্রিফিংয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পদাক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তিকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি আবারও দেশে নৈরাজ্য তৈরির অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। বিএনপি আরেকটি ওয়ান ইলেভেনের দুঃস্বপ্ন দেখছে। আমরা রাজনৈতিকভাবে সব কর্মসূচি মোকাবিলা করবো। কর্মসূচিতে সহিংসতার উপাদান যুক্ত হলে তা জনগণের জানমাল রক্ষায় সরকার কঠোরভাবে দমন করবে।
বিএনপির আন্দোলন মানে সহিংসতা, জনগণের সম্পদে আগুন দেওয়া, তাই তাদের কোনো অপকর্ম আওয়ামী লীগ বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দেবে না।
এদিকে আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন। এ সম্মেলনের আগে ওয়ার্ড পর্যায় থেকে জেলা পর্যন্ত কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ জায়গাগুলোতে সম্মেলন করবে দলটি। গত মার্চ থেকে এ সম্মেলন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। শোকের মাস আগস্টের কারণে এ কার্যক্রম বন্ধ ছিল। সেপ্টেম্বর থেকে পুরোদমে এ কার্যক্রম শুরু হবে। আওয়ামী লীগে ৭৩টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৩৯টি জেলার সম্মেলন ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। আর উপজেলা সম্মেলন হয়েছে প্রায় ৩৩৩টি। বাকি সম্মেলনগুলোর আয়োজনের পাশাপাশি মাঠের কর্মসূচিও থাকবে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা জানান।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই বিএনপি সরকারবিরোধী আন্দোলনের কথা বলে আসছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো আন্দোলন দাঁড় করাতে পারেনি। তবে নির্বাচন সামনে রেখে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা করছে দলটি। বিশ্বব্যাপী চলমান অর্থনৈতিক সংকটের সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন দিক থেকে বাংলাদেশেও একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির ষড়যন্ত্র হয়েছে।
আন্দোলনের নামে বিগত ২০১৩ সালের মতো সহিংস পরিস্থিতি তৈরি করার ষড়যন্ত্র রয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের কাছে তথ্য রয়েছে। রাজপথের কর্মসূচির সুযোগ নিয়ে বিএনপি অতীতের মতো একটা বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে পারে। এ কারণে আগে থেকেই সরকার ও আওয়ামী লীগ কঠোর অবস্থান নিয়েছে বলে তারা জানান।
যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার প্রশাসনিকভাবে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। আন্দোলনের নামে যেকোনো সহিংসতা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে কঠোরভাবে দমন করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলেও তারা জানান।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, বিএনপি আন্দোলন করবে এটা নতুন কোনো কথা নয়, দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছে। তাদের আন্দোলন যদি শান্তিপূর্ণ হয় সেটা ভালো কথা।
কিন্তু সহিংসতা, নৈরাজ্য বা যেকোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালালে সেটা সরকার কঠোরভাবে দমন করবে। আর আওয়ামী লীগও তার জায়গা থেকে মাঠে অবস্থান করে এ ধরনের নৈরাজ্য রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করবে।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আন্দোলনের সক্ষমতা বিএনপির নেই। তারা একটা বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে চাচ্ছে। তারা বিশ্ব মন্দাকে পুঁজি করে একটা সংকট তৈরির মাধ্যমে দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার পাঁয়তারা করছে। তারা রাজনীতি করছে না, দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। এসব করে অতীতে জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া পার পাইনি। এ ধরনের দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড সরকার রুখে দেবে। এর জন্য যা যা পদক্ষেপ নেওয়ার দরকার সরকার নেবে।
সোনালীনিউজ/এমটিআই