ঢাকা : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সব আন্দোলনের নেতৃত্ব দেবেন বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার (৩ অক্টোবর) সকালে গুলশানে কাজী জাফর প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির সঙ্গে সংলাপ শেষে তিনি এ কথা বলেন।
ফখরুল বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ শেষে সরকার হটাতে গণআন্দোলন শুরু করা হবে।
সংলাপের আলোচনার বিষয়ে তুলে ধরে বিএনপির এই নেতা বলেন, সরকারবিরোধী গণ-আন্দোলনের দফা ঠিক করা, খালেদা জিয়াসহ রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি, নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর, নতুন ইসি গঠনসহ নানা বিষয়ে কথাও হয়েছে।
সংলাপে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দারের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেন। মূলত সরকার বিরোধী প্লাটফর্মে আরো শক্তিশালী করতেই এই সংলাপ করছে বিএনপি।
এদিকে, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুকে অগ্রাধিকার দিয়ে যুগপৎ আন্দোলন করতে কল্যাণ পার্টির সঙ্গে ঐক্যে পৌঁছেছে বিএনপি।
রোববার (২ অক্টোবর) বিকালে কল্যাণ পার্টির সঙ্গে দ্বিতীয় দফা সংলাপ শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্যে আমরা যে কয়েকটি প্রধান বিষয় নিয়ে আন্দোলন শুরু করব সেই দাবিগুলোর বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। বিশেষ করে নির্বাচনকালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের ব্যাপারে আমরা ঐক্যে পৌঁছেছি।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফা সংলাপের কারণ তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রথম দফা সংলাপে আমরা নীতিগতভাবে একমত হয়েছিলাম যে, একটা যুগপৎ আন্দোলনে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলব। দ্বিতীয় দফা সংলাপে আমরা কোন কোন দাবিতে বা কোন কোন ইস্যুতে আন্দোলন করব সেই বিষয়ে আলোচনা করে ঐক্যে এসেছি। দ্বিতীয় দফায় আওয়ামী লীগ ছাড়া সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের দরজা খোলা বলে জানান তিনি।
আজ ২০ দলীয় জোটের দুটি শরিকের সঙ্গে সংলাপ করবে বিএনপি। বেলা ১১টায় গুলশান কার্যালয়ে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ও সন্ধ্যায় এলডিপির সঙ্গে দলটির প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) অলি আহমদের বাসায় হবে এ সংলাপ।
প্রথম দফায় ২২টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করে বিএনপি। সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে বেশ কিছু প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। সেই প্রস্তাবগুলোসহ দলের কর্মপরিকল্পনা যুক্ত করে একটা খসড়া তৈরি করে বিএনপি। আগামীদিনের আন্দোলন ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেলে করণীয় রয়েছে এ খসড়ায়। দ্বিতীয় দফা সংলাপে রাজনৈতিক দলের কাছে এ খসড়া তুলে দেওয়া হবে। এরপর তাদের নতুন কোনো প্রস্তাব থাকলে তা যুক্ত করা হতে পারে। সংলাপ শেষে সবার মতামতের ভিত্তিতে তৈরি করা হবে চূড়ান্ত রূপরেখা। যা জাতির সামনে তুলে ধরবে দলটি।
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে কল্যাণ পার্টির সঙ্গে এই সংলাপ হয়। এতে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। অন্য সদস্যরা হলেন-দলটির মহাসচিব আবদুল আউয়াল মামুন, কেন্দ্রীয় নেতা নুরুল কবির পিন্টু, আব্দুল্লাহ আল হাসান সাকিব, রাশেদ ফেরদৌস সোহেল মোল্ল্যা, মাহবুবুর রহমান শামীম, জামাল হোসেন, আবু হানিফ, আবু ইউসুফ। বিএনপির মহাসচিবের সঙ্গে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান।
সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের মির্জা ফখরুল আরও বলেন, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে তার মাধ্যমে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আমরা একমত হয়েছি। একই সঙ্গে আমরা গণতন্ত্রের আপসহীন নেত্রী খালেদা জিয়াসহ সব নেতাকর্মীর মুক্তি এবং যাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে সেই মামলা প্রত্যাহারের বিষয়েও একমত হয়েছি।
এ সময় কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, সংলাপে আমরা জানতে চেয়েছি যুগপৎ আন্দোলন কবে? তবে আমরা তারিখটা প্রকাশ না করতে একমত হয়েছি। একটা বাংলা শব্দ বলতে পারি, চমক আছে। আপনারা মেহেরবানি করে তার জন্যে প্রস্তুত থাকতে পারেন। আমি একজন রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা। আমি মনে করি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যে সংগ্রাম সেটা আরেকটি মুক্তিযুদ্ধ। সেখানে বীর মুক্তিযোদ্ধা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম খানসহ আমাদের যারা ভালোবাসেন তাদের সবাইকে নিয়ে এই যুদ্ধে লড়ব এবং জয়ী হব। এখানে জয় ব্যতীত অন্য কোনো বিকল্প নেই।
সোনালীনিউজ/এমটিআই