বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আশ্রয় দিয়ে মানবাধিকারের কথা বলা লজ্জা: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: আগস্ট ১, ২০২৩, ০৪:৪৮ পিএম

ঢাকা : নানা অজুহাত দেখিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুই খুনিকে ফেরত না দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা সরকারের সমালোচনা করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

শোকের মাস অগাস্টের প্রথম দিন মঙ্গলবার (১ আগস্ট) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালনের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এখনও বঙ্গবন্ধুর খুনিরা বিভিন্ন দেশে লুকিয়ে আছে এবং আমরা দুটো কেইস জানি। একজন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আছে, আরেকজন কানাডায় আছে। বাকি তিনজনের খবর আমরা ঠিক জানি না।

যারা আত্মস্বীকৃত খুনী, তারা যে ওখানে আছে। আর ওই সমস্ত দেশ মানবিকতার কথা বলে, মানবাধিকারের কথা বলে, কিন্তু আত্মস্বীকৃত খুনিকে ওরা ওখানে রেখেছে। তাদের জন্য এটা লজ্জার।

দুই দফায় ছয় জনের ফাঁসি কার্যকর হলেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাকি পাঁচ খুনি এখনও রয়েছে অধরা।

তারা হলেন- আব্দুর রশীদ, শরীফুল হক ডালিম, মোসলেম উদ্দিন, রাশেদ চৌধুরী ও এবিএমএইচ নূর চৌধুরী।

এর মধ্যে রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে এবং নূর চৌধুরী কানাডায় অবস্থান করছেন। বাংলাদেশ বারবার দাবি জানালেও তাদের ফেরত পাঠানো হয়নি।

বাকি তিনজনের কোনো খোঁজ এখন পর্যন্ত পায়নি সরকার কিংবা গোয়েন্দারা। মোসলেম উদ্দিন ভারতে আছেন বলে গত বছর পত্রিকায় খবর এলেও তার ‘সত্যতা নিশ্চিত’ হতে পারেনি বাংলাদেশ সরকার।

[204179]

বাংলাদেশের স্বাধীনতার চার বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়।

একদল সেনা কর্মকর্তা এই হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্ব দিলেও এর পেছনে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কথা আওয়ামী লীগ নেতারা বরাবরই বলে আসছেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর উল্টো যাত্রা শুরু হয়েছিল। খুনিদের বাঁচাতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল, তাদের নানা পদ দিয়ে পুরস্কৃতও করা হয়েছিল।

১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর ইতিহাসে চিহ্নিত কালো ওই অধ্যাদেশ বাতিলের পর জাতির পিতার খুনের বিচারের পথ খোলে।

এর মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী মহিতুল ইসলাম ধানমন্ডি থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

ওই মামলায় ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর ঢাকার তখনকার জেলা ও দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল ১৫ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন।

আপিলের রায়ে এই ১৫ জনের মধ্যে তিনজন খালাস পান। যে ১২ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে উচ্চ আদালত, তাদের একজন আজিজ পাশা পলাতক থাকা অবস্থায় দেশের বাইরে মারা যান বলে খবর আসে।

বাকি ১১ জনের মধ্যে সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ, মহিউদ্দিন আহমদ, এ কে বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন বন্দি অবস্থায় আদালতে রিভিউ আবেদন করলে তা খারিজ হয়ে যায়।

এরপর ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি ওই পাঁচজনের ফাঁসি কার্যকর হয় ঢাকার কারাগারে। বাকি ছয়জন পলাতক থেকে যান।

তার প্রায় ১০ বছর পর গত বছরের ৭ এপ্রিল ভোরে পলাতক ৬ জনের একজন ৭২ বছর বয়সী আব্দুল মাজেদকে ঢাকার গাবতলী থেকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় সরকার।

তখন গোয়েন্দারা বলেছিলে, মাজেদ এতদিন ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পালিয়েছিলেন, করোনাভাইরাস মহামারীর সময় দেশে ফেরেন।

পলাতক মাজেদের আপিলের সুযোগ ছিল না। তবে রাষ্ট্রপতির কাছে তিনি প্রাণভিক্ষার চেয়ে আবেদন করেছিলেন। তা নাকচ হওয়ার পর কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ২০২০ সালের ১২ এপ্রিল তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সঙ্গে দুই খুনীকে ফেরত পাঠাতে বহুবার আলাপ হলেও তারা বিভিন্ন রকম ‘বাহানা’ দিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।

তিনি বলেন, “কানাডার সাথে বহু আলাপ হয়েছে। আমরা কোর্টে গিয়েও নূর চৌধুরী সম্পর্কে জানতে চেয়েছি, তথ্য দেয় নাই। একটা না একটা বাহানা করে, এখন বড় বাহানা হচ্ছে যে আমরা আমাদের কোর্টে ওকে ফাঁসি দিয়েছি, ফাঁসির রায় হয়েছে।

তবে, স্কোপও আছে। সে এখানে এসে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারে। সেই সুযোগও আছে। কিন্তু কানাডা বলে, যে সমস্ত দেশে ফাঁসির আইন আছে, সেই সমস্ত দেশে তারা পাঠাবে না।

নূর চৌধুরী কী হিসাবে কানাডায় অবস্থান করছেন, তাও সেদেশের সরকার না জানানোর কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সে কি কানাডার নাগরিক না এখনো অবৈধ অভিবাসী, সেটাও তারা ঠিক করে বলে না।

কোর্ট যদিও তাদেরকে আদেশ করেছে, তার স্ট্যাটাস বল। সেটাও তারা বলে না, লুকিয়ে রেখেছে, প্রটেকশন দিয়ে রেখেছে।

এর আগে বাংলাদেশের অনুরোধে যুক্তরাষ্ট্র খুনি মহিউদ্দিনকে ফেরত পাঠালেও রাশেদ চৌধুরীর বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, “তারা কোনোদিন বলে না যে, পাঠাবে না। কিন্তু তারা বলেছে যে এটা কোর্টে আছে, অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে আছে।

অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় আমাদের কাছে কিছু তথ্য চেয়েছিলেন, কীভাবে বিচার হয়েছিল তার প্রক্রিয়া জানতে চেয়েছিলেন… আমাদের বিচারটা খুব স্বচ্ছ হয়েছে, যথাযথ আইন অনুসারে হয়েছে। আমরা সেসব তথ্য জানিয়েছি অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি ‘অ্যাটর্নি জেনারেলকে দেখিয়ে দেন’ মন্তব্য করে মোমেন বলেন, “এই করে করে উনারা পাশ কাটিয়ে যান। আর অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে আমাদের কোনো অ্যাপয়েন্টমেন্টও দেওয়া হয় না। এটা খুবই দুঃখজনক।”

পেশাগত দায়িত্বে দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকা মোমেন বলেন, আমেরিকার মত দেশ, যেখানে আইনের শাসন বলবৎ আছে। আইনের শাসনের জন্য সবসময় সোচ্চার। সেই রকম একটা দেশ খুনিকে আশ্রয় দিয়ে রাখছে।

একটা খুনি না, আরেকটা খুনি ওখানে আছে। আল বদর রাজাকার, আরেকটি ওখানে আছে। খুনিদেরকে আশ্রয় দিয়ে রাখছে, এটা আমার কাছে খুব তাজ্জব মনে হয়। কারণ আমেরিকা হচ্ছে আইনের দেশ, সেখানে একটা বেআইনি লোককে আশ্রয় দিয়ে রাখছে, এটা দুঃখজনক।

শোকের মাস উপলক্ষে এদিন ফরেন সার্ভিস একাডেমি প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারের ১৬ সদস্যের নামে ১৬টি গাছ লাগানো হয়।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনসহ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে অংশ নেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই