ঝুলে গেল খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ২, ২০২৩, ০৩:০৬ পিএম
ফাইল ছবি

ঢাকা : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার বিষয়ে গত কিছুদিন ধরে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা চলছিল। সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে কথাবার্তা বলে তার পরিবারও আশাবাদী হয়ে উঠেছিল।

তাদের ধারণা ছিল, শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এবার বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিবে সরকার। সরকারের তরফ থেকেও ইঙ্গিত দেয়া হচ্ছিল-খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য করা পরিবারের আবেদন ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

তবে রোববার (১ অক্টোবর) বেগম জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার আবেদন বাতিল করে আইন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিদেশ যেতে হলে খালেদা জিয়াকে জেলে গিয়ে আবার আদালতে আবেদন করতে হবে।

সরকারের এই অবস্থানকে রাজনৈতিক ‘নির্মমতা’ বলে উল্লেখ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিএনপি। বেগম জিয়ার আইনজীবীদের দাবি, খালেদা জিয়াকে সরকার নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি দেয়ায় এখানে আদালতের কোনো বিষয় নেই।

[208112]

সরকার চাইলেই নির্বাহী আদেশে তাকে মুক্তি এবং বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ করে দিতে পারে। সরকারের অবস্থান পরিষ্কার হওয়ায় বেগম জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি আবারো ঝুলে গেলো। বিএনপির এটা ছিল দীর্ঘদিনের একটি দাবি।

বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে এর আগেও একাধিকবার বিদেশে চিকিৎসার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছিল। এবারের মতো বিগত আবেদনগুলোও নাকচ করে দিয়েছিল সরকার।

খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের অভিযোগ, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদন আইনগতভাবে বিবেচনা না করে, প্রতিবারই রাজনৈতিকভাবে বিবেচনা করা হয়েছে।

বিএনপি মনে করছে, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি এখন সরকারের বিদায়ের ওপর নির্ভর করছে। আন্দোলনে এই সরকারকে বিদায় করতে না পারলে খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দরজা খুলবে না। তাই এখন আন্দোলনের মাধ্যমেই এই ইস্যুর সুরাহা করবে দলটি।

[208114]

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, চলমান এক দফার আন্দোলনের সাথে এখন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও চিকিৎসা ইস্যুটি জোরালোভাবে সম্পৃক্ত হতে পারে। এর ফলে সরকারবিরোধী আন্দোলন বড় ধরনের মোড় নিতে পারে।

বিএনপি নেতারা বলছেন, সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে যে আন্দোলন চলছে, এই আন্দোলনের সাথে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিও জড়িত।

জানা গেছে, চলমান এক দফার আন্দোলনে দলীয় চেয়ারপারসনের মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি এখন জোরালোভাবে সম্পৃক্ত করবে বিএনপি। এই ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি দেয়া হতে পারে। এ ক্ষেত্রে জোটগত ছাড়াও দলীয়ভাবেও কর্মসূচি আসতে পারে। আজ সোমবার অনুষ্ঠেয় দলের স্থায়ী কমিটিতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

লিভার জটিলতা ছাড়াও ৭৮ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ফুসফুস, কিডনি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। গত ৯ আগস্ট গুলশানের বাসা ফিরোজায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে মেডিক্যাল বোর্ডের সিদ্ধান্তে তাকে বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৫৩ দিন ধরে তিনি ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা: তালুকদারের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ড তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছে।

খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছেন, বোর্ডের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বেগম জিয়ার লিভার প্রতিস্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে।

[207835]

সেজন্য তাকে দ্রুত বিদেশে উন্নত মাল্টিডিসিপ্লিনারি সেন্টারে পাঠানো দরকার। দুর্নীতির দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দী হন। দুই বছরের বেশি সময় কারাবন্দী ছিলেন তিনি।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পরিবারের আবেদনে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছিল।

এরপর পরিবারের আবেদনে ছয় মাস পরপর তার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছে সরকার। সর্বশেষ গত ১২ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ আরো ছয় মাস বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এমটিআই