ঢাকা: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আজ বুধবার রাজধানী ঢাকায় পূর্বঘোষিত সমাবেশ করবে বিএনপি। বেলা ২টায় অনুষ্ঠেয় এ সমাবেশ থেকে এক দফা আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি হিসেবে জনসমাবেশ অথবা মহাসমাবেশের ঘোষণা আসতে পারে বলে দলের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। আজকের সমাবেশ থেকে সরকারকে কড়া বার্তা দেওয়া হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ও নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন এবং দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দল এবং জোট গত বছরের ডিসেম্বর থেকে যুগপৎভাবে রাজপথে আন্দোলন করে আসছে। বিএনপি ছাড়াও সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোট আজ বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে নিজ নিজ ব্যানারে সমাবেশ করবে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আমাদের প্রতিটি কর্মসূচিই শান্তিপূর্ণ। বুধবার অনুষ্ঠেয় শান্তিপূর্ণ সমাবেশ নিয়ে সরকারের দিক থেকে নানাভাবে অপপ্রচার চালাননো হচ্ছে। নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশ গায়েবি মামলা দিচ্ছে এবং গ্রেপ্তার করছে। আমরা মনে করি, এ সবে কোনো কাজ হবে না। চলমান আন্দোলন বিজয়ের সিংহদুয়ার অভিমুখে অগ্রসর হচ্ছে। ঢাকাবাসীসহ বিএনপির সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী-সমর্থকদের সরকারি চক্রান্ত ও অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে বুধবারের জনসমাবেশ সফল করতে আহ্বান জানাচ্ছি।’
[209171]
বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের উদ্যোগে দুপুর ২টায় নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠেয় সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ দলের কেন্দ্রীয় এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা বক্তব্য রাখবেন।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্যসচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সদস্যসচিব লিটন মাহমুদের পরিচালনায়
অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ বলেন, আমরা আশা করি, এই জনসমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে সফল করতে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সার্বিকভাবে সহযোগিতা করবে।
দলীয় সূত্র জানায়, পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবিতে শেষবারের মতো সরকারকে কড়া বার্তা দিতে চায় বিএনপি। গত সোমবার দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ঢাকায় আজ বুধবারের সমাবেশের প্রস্তুতি এবং নতুন কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আজকের সমাবেশ থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হলেও কর্মসূচি চূড়ান্ত করবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ট সূত্র বলছে, আজকের সমাবেশ থেকে রাজধানীতে আগামী ২৭ অথবা ২৮ অক্টোবর ঢাকায় জনসমাবেশ বা মহাসমাবেশ নামে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। সেখান থেকে লাগাতার কর্মসূচি পালন করবে দলটি।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, দুর্গাপূজার পরে নতুন কর্মসূচি আসছে। সেটা গতানুগতিক কর্মসূচি হবে না। কঠিন এবং কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
একদফা দাবিতে ১৯ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রথম ধাপে রোডমার্চ ও সমাবেশ কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি, যা ৫ অক্টোবর চট্টগ্রাম অঞ্চলে রোডমার্চের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। চট্টগ্রামের রোডমার্চের সমাপনী সমাবেশ থেকে দ্বিতীয় ধাপের টানা কর্মসূচি ঘোষণা করেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ৯ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া কর্মসূচি ঢাকায় জনসমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। ওইদিন বিএনপি মহাসচিব বলেছিলেন, ঢাকার জনসমাবেশ থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। সেই কর্মসূচিই হবে শেষ কর্মসূচি।
জানা গেছে, আজ নয়াপল্টনের সমাবেশ কেন্দ্র করে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। এ সমাবেশকেও ঐতিহাসিক করতে চায় দলটি। সেজন্য ঢাকা মহানগরসহ আশপাশের জেলা থেকেও বিপুল সংখ্যক দলীয় নেতাকর্মীকে অংশ নিতে বলা হয়েছে। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হক বলেন, ‘ঢাকাসহ সারাদেশে দুর্গাপূজার পর আন্দোলন কর্মসূচি আসছে। সেই কর্মসূচি বাস্তবায়নে দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রয়েছে। এবারের কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি থাকবে।’
সমমনা দল : যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোট আজ বুধবার রাজধানীতে একই দাবিতে সমাবেশ করবে। এর মধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চ বিকাল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে, ১২-দলীয় জোট বিকাল ৩টায় বিজয় নগর পানির ট্যাংকের সামনে, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট বিকাল ৫টায় পুরানা পল্টন আলরাজী কমপ্লেক্সের সামনে, এলডিপি বিকাল ৩টায় কারওয়ানবাজারে এফডিসিসংলগ্ন দলীয় অফিসের সামনে, লেবার পার্টি বেলা ১১টায় পুরানা পল্টন ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সামনে সমাবেশ করবে।
এমএস