চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম-১১ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৩৯ নম্বর দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন। ব্যবসায়ী এই আওয়ামী লীগ নেতার কৃষি থেকে বছরে আয় দেড় কোটি এবং একই পেশায় তার স্ত্রীর আয় ৩৫ লাখ টাকা।
শুধু ব্যবসায়ী সুমন নন, বর্তমান সরকারের শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী কৃষি থেকে বছরে আয় করেন ৩৭ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫০ টাকা।
অন্য ব্যবসায়ী নেতা এমএ লতিফ একই খাত থেকে বছরে আয় করেন ১৯ লাখ ১৫ হাজার ৮৪৭ টাকা। মনোনয়নপত্রের সঙ্গে প্রার্থীদের দাখিল করা হলফনামায় এমনই তথ্য উপস্থাপিত হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার ছিল আসন্ন সংসদ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। মনোনয়নপত্রের সঙ্গে প্রার্থীদের সম্পদ বিবরণী ও আয়ের তথ্য দাখিল করতে হয়। দাখিল করা সেই হলফনামায় দেখা যায়, নগদ টাকায় এগিয়ে রয়েছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী নেতা এমএ লতিফ।
[212408]
চট্টগ্রাম-১১ আসনের গত তিনবারের নির্বাচিত এ সংসদ সদস্য চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি ছিলেন দীর্ঘদিন। বর্তমানে তার ছেলে ওমর হাজ্জাজ চেম্বার সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন।
ব্যবসায়ী এ নেতার কাছে নগদে সবচেয়ে বেশি ২ কোটি ৩৭ লাখ ৯০ হাজার ৮৬১ টাকা রয়েছে। এ ছাড়া তার স্ত্রীর নামে নগদে রয়েছে ৫২ লাখ ২৯ হাজার ২৩০ টাকা। তিনি ব্যবসা থেকে বছরে ২০ লাখ ৭২ হাজার ৬৪৪ টাকা আয় করলেও কৃষিতে আয় করেন ১৯ লাখ ১৫ হাজার ৩৪৪ টাকা। তবে স্থাবর সম্পত্তির কৃষিজমির পরিমাণের ঘরে কোনো উপাত্ত নেই।
এমএ লতিফের সঙ্গে এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন। পেশায় ব্যবসায়ী এ নেতাও কৃষিতে বছরে আয় করেন দেড় কোটি টাকা এবং তার স্ত্রী আয় করেন ৩৫ লাখ টাকা। তবে বাড়ি ভাড়া বাবদ ৬৬ লাখ ৬৪ হাজার, ব্যবসা থেকে ৩০ লাখ ৩৪ হাজার, বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বছরে আয় হয় ২০ লাখ ৯৫ হাজার টাকা।
চট্টগ্রাম-৯ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সন্তান মহিবুল হাসান চৌধুরী বর্তমান সরকারের শিক্ষা উপমন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন। আইনে উচ্চতর ডিগ্রি থাকলেও তিনি কৃষিতে বছরে আয় করেন ৩৭ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫০ টাকা। পেশার সম্মানী হিসেবে আয় করেন ১৪ লাখ ৫২ হাজার ১০৮ টাকা, চাকরি থেকে ১০ লাখ ৩৮ হাজার, অন্যান্য খাতে আয় করেন ১৬ লাখ ৬৩ হাজার ১৭০ টাকা।
এ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জাতীয় পার্টির সোলায়মান আলম শেঠ। শেঠ গ্রুপের স্বত্বাধিকারী এ নেতার কাছে নগদ টাকা রয়েছে ১ কোটি ২৩ লাখ ৪৭ হাজার ৬৬ টাকা। এ ছাড়া ব্যাংকে ও বিভিন্ন মাধ্যমে থাকা অর্থের পরিমাণ ৩ কোটি ৬৫ লাখ ৮৭ হাজার ৫৫০ টাকা। তার সম্পদের আর্থিক মূল্য ১৫ কোটি ৪ লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৮ টাকা।
চট্টগ্রাম-১০ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ২০১৩ সালে বিএনপি থেকে নির্বাচন করে জয়ী হওয়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এম মনজুর আলম। ব্যবসায়ী এ নেতা ২০টি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পরিচালক ও চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন।
মনজুর আলমের কৃষি খাতে বার্ষিক আয় ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা, এ ছাড়া বাড়ি ভাড়া ও ব্যবসা থেকে আয় করেন যথাক্রমে ৭২ লাখ ২২ হাজার ১৫৬ ও ২০ লাখ ৭৫ হাজার ৮৫০ টাকা। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত থেকে বছরে ৭৫ লাখ ৯৩ হাজার ৫০২, পেশা থেকে সম্মানী ১ লাখ ৪৪ হাজার ও খালি জায়গার ভাড়া বাবদ ১২ লাখ ৮৩ হাজার ৫৬৮ টাকা আয় করে তিনি।
এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনীত অন্য প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চু ব্যবসা থেকে বছরে আয় করেন ১৭ লাখ ৯৪ হাজার ৫৮০ টাকা। ব্যবসায়ী এ নেতার কাছে নগদে রয়েছে ১১ লাখ ৩ হাজার ৪৮৪ টাকা। নিজের নামে ৩ কোটি ৫০ লাখ ৬১ হাজার ৫০০ টাকার অকৃষি জমি থাকলেও স্ত্রীর নামে একটি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে, যার মূল্য ২৫ লাখ ২০ হাজার টাকা।
চট্টগ্রাম-৮ আসন থেকে আওয়ামী লীগের টিকিটে নির্বাচন করছেন সংসদ সদস্য নোমান আল মাহমুদ। ঠিকাদার এ নেতার বছরে আয় ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। নিজের কাছে ১৯ লাখ ৭৫ হাজার ৭৩১ টাকা নগদ অর্থ থাকলেও স্ত্রীর কাছে রয়েছে ২৯ লাখ ৭ হাজার ৪১৪ টাকা।
অন্যদিকে এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আবদুচ ছালামের বার্ষিক আয় ৯৪ লাখ ৫২ হাজার ১৩৯ টাকা। পেশায় ব্যবসায়ী এ নেতা ২০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অংশীদার। তিনি সম্পদ বিবরণীতে দেখিয়েছেন স্ত্রীর আয় ১৫ লাখ ৮১ হাজার ২৩০ টাকা। এ ছাড়া তিনি ২ কোটি ৬৮ লাখ ৬৩ হাজার ২৬৬ টাকার কৃষিজমির মালিক। যৌথ পরিবার হিসেবে ছয় ভাগের এক ভাগ হিসেবে দালান-কোঠা ও বাণিজ্যিক ভবনেরও অংশীদার।
এমটিআই