ঢাকা : প্রতিবার নির্বাচনের আগে বিএনপির জ্বালাও-পোড়াও বন্ধে তরুণদের নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সজীব ওয়াজেদ জয়।
তিনি বলেছেন, জামায়াত-বিএনপির ভোটার যত কমতে থাকবে, আমাদের জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস তত কমতে থাকবে। আপনারা যদি প্রতি নির্বাচনে নৌকাকে ভোট দেন, তাহলে এখন যেমন জামায়াত বলে কিছু নাই, ভবিষ্যতে বিএনপি বলেও কিছু থাকবে না। আর সেইদিন বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে।
শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) রাতে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ‘লেটস টক’অনুষ্ঠানের ৫১তম পর্বে তরুণদের মুখোমুখি হয়ে নিজের ভাবনা তুলে ধরার পাশাপাশি তরুণদের নানা জিজ্ঞাসার উত্তর দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও আওয়ামী লীগের গবেষণা শাখা সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) এর প্রধান সজীব ওয়াজদ।
সেখানে স্মার্ট বাংলাদেশের ভাবনা আর প্রযুক্তি নিয়ে যেমন অনেকে প্রশ্ন করেন, স্বাভাবিকভাবেই আসে রাজনীতি আর নির্বাচনের প্রসঙ্গ।
২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশ পণ্ড হয়ে যাওয়ার পর থেকেই দফায় দফায় হরতাল ও অবরোধের মত কর্মসূচি দিয়ে আসছে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেওয়া বিএনপি এবং তাদের দীর্ঘদিনের মিত্র জামায়াতে ইসলামী।
আর এই হরতাল-অবরোধের মধ্যে প্রতিদিনই যানবাহনসহ বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন দেওয়ার খবর আসছে। গাড়িতে অগ্নি সংযোগের সময় পেট্রোলবোমাসহ ধরা পড়ছে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের কর্মীরা। সিআরআই-এর হিসেবে এসব নাশকতায় দৈনিক ক্ষতির পরিমাণ ৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বেশি।
[212417]
২০১৩-১৫ সালেও একইভাবে ব্যাপক নাশকতা হয় বিএনপি-জামায়াতের কর্মসূচির মধ্যে। ‘অগ্নি সন্ত্রাসে’ পুড়ে মারা যায় শতাধিক মানুষ।
এমন সব সহিংসতা ভবিষ্যতে ‘স্বাভাবিক ঘটনা’ হয়ে উঠবে কিনা, তা সজীব ওয়াজেদের কাছে জানতে চান এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক।
জবাবে বিএনপি-জামায়াতকে ‘সন্ত্রাসী দল’ অ্যাখ্যা দিয়ে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ ধরনের সহিংসতা ও সন্ত্রাস বন্ধে আসন্ন নির্বাচনে তরুণদের নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান সজীব ওয়াজেদ।
তিনি বলেন, "গত তিন নির্বাচনে পর্যালোচনা করে দেখেছি। এদেরকে এভাবে যানবাহনে আগুন দিতে একটি শ্রেণি উৎসাহ দিচ্ছে। বিদেশি, বিশেষত ওয়েস্টার্ন কিছু রাষ্ট্রদূত। ঠিক নির্বাচনের আগে তারা অতিরিক্ত কথা বলা শুরু করে। এই যে জামায়াত একটি যুদ্ধাপরাধীদের দল, জঙ্গি দল। তাদেরকে জঙ্গি সন্ত্রাসী বলবে না। এ ক্ষেত্রে মানবাধিকারের কোন চিহ্ন নেই।
বিএনপি আগুন জ্বালাচ্ছে, মানুষ পোড়াচ্ছে। কিন্তু বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল তারা বলবে না। উল্টো আরও স্পেস দিতে হবে, যায়গা দিতে হবে- আরও মানুষ পোড়াও, আরও মানুষ মারো। আমি তরুণদের বলব, তারা যেন বিদেশিদের থেকে সাবধান থাকে। তারা চায় বাংলাদেশ যেন গরিব দেশ হয়ে থাকে। তাদের হুকুম মত চলে।
জ্বালাও-পোড়াও বন্ধ করতে হলে তরুণদের ভূমিকা রাখতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে যদি আমরা জ্বালাও-পোড়াও বন্ধ করতে চাই, তাহলে সহজ সমাধান হল বিএনপি-জামায়াতকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করে দেন। সেটা যেহেতু সম্ভব নয়, তাই আরেকটা উপায় আছে। সেটা হল- নৌকাকে ভোট দিন।
স্বাধীনতার চার বছরের মধ্যে ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট সেনাবাহিনীর একদল কর্মকর্তা ও সৈনিকের হাতে সপরিবারে জীবন দিতে হয় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে।
তার পরিবারের ছয় বছরের শিশু থেকে শুরু করে অন্তঃসত্ত্বা নারীও সেদিন ঘাতকের গুলি থেকে রেহাই পায়নি।
লেটস টক অনুষ্ঠানে এক করুণ প্রশ্ন রাখেন, ১৯৭৭ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিনা বিচারে গণ ফাঁসি দিয়ে তার চাচা এক বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করে। এর বিচার কি কখনও পাওয়া যাবে না?
উত্তরে দুঃখ প্রকাশ করে সজীব ওয়াজেদ বলেন, এটা জিয়াউর রহমানের আমল আমাদের দেশের বিরাট একটা কালো দাগ ছিল। আজকে যারা মানবাধিকারের কথা বলে, তারা এটা বলে না জিয়াউর রহমান এবং বিএনপি তখন কত হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে বিচার ছাড়া। তাদের লাশ পর্যন্ত পাওয়া যায় না আজ পর্যন্ত।
এই হল বিএনপি। এটা কী গণতান্ত্রিক দল? না, এটা একটা সন্ত্রাসী দল। এটা একটি খুনিদের দল। জিয়াউর রহমান স্বৈরাচার ছিল, জিয়াউর রহমান খুনি ছিল। আমরা বিচার করার চেষ্টা করছি। এটা একটা কঠিন বিষয়। কারণ, তখন থেকে অনেক রেকর্ডস নাই, তথ্য নেই। তারা তো সব মুছে ফেলেছে। যেভাবেই হোক, তাদের আমরা বিচার করার চেষ্টা করেই যাচ্ছি।
সজীব ওয়াজেদ বলেন, এখন দেখেন বিএনপি জামায়াতের জঙ্গিবাদ আর দুর্নীতির বিচার করতে গেলেও এখন বিদেশিরা বলছে মানবাধিকার লঙ্ঘন। তাদের বাঁচাতে ব্যস্ত বিদেশিরা। আমি তরুণদেরকে বলব, যারা বিএনপি-জামায়াতকে বাঁচাতে চেষ্টা করছে, তাদের কথা যখনই শুনবেন, প্রতিবাদ করবেন।
বলবেন, ‘জিয়াউর রহমান খুনি ও বিএনপি জঙ্গিদল, তাদের পক্ষে কেনো কথা বলছ তোমরা? তোমরা বিদেশিরা মানবাধিকারের কথা বলছো, তোমরা বিদেশিরা তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার আগে করো। তখন তোমাদের কথায় বিশ্বাস করব’।
বর্তমানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও টলারেন্স লেভেল কমে যাচ্ছে কিনা, এমন এক প্রশ্নের উত্তরে সজীব ওয়াজেদ বলেন, আমরা ক্ষমতায় আসার পর টলারেন্স লেভেল বাড়াতে পেরেছি। এর আগে রিলিজিয়াস টলারেন্স বলে কিছু ছিল না। বাংলাদেশ উল্টো পথে যাচ্ছিল। সেক্যুলারিজম মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। মৌলবাদী দেশ হবার পথে হাঁটছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি।
দেশের নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে তরুণদের সেতুবন্ধন গড়ে দিতে ২০১৪ সাল থেকে ইয়াংবাংলা ‘লেটস টক’ শিরোনামে এ আয়োজন করে আসছে।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়েও আয়োজন করা হয় এ অনুষ্ঠান, যেখানে তরুণদের ভাবনার কথা শোনেন সরকারপ্রধান। সেই সঙ্গে তরুণদের নিয়ে নিজের ভাবনার কথাও জানান এ অনুষ্ঠানে।
এমটিআই