ঢাকা : ভোটের দিনকে টার্গেট করে এগোচ্ছে বিএনপি। এদিনকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়ে বিশ্ববাসীকে ‘ভোটারবিহীন’ নির্বাচন দেখাতে নানা পরিকল্পনা করছে তারা। ভোটের দিন কেউ যাতে কেন্দ্রে না যান সে বিষয়টির ওপর বেশি জোর দিচ্ছে।
কেন্দ্রে ভোটার অনুপস্থিতি নিশ্চিত করাই এই মুহূর্তে দলটির প্রধান টার্গেট। এজন্য দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকের পাশাপাশি সাধারণ ভোটাদের কাছেও ভোট বর্জনের ‘মেসেজ’ পৌঁছাতে চায়।
এরই অংশ হিসাবে সরকার পদত্যাগের একদফা এবং ভোট বর্জন ও ‘অসহযোগ’ আন্দোলনের পক্ষে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বর্ধিত করেছে।
একই কর্মসূচি শুক্রবারও দেওয়া হতে পারে। পরে আগামী শনিবার থেকে ৪৮ ঘণ্টার ‘অলআউট’ কর্মসূচির চিন্তা করা হচ্ছে। এই সময়ে হরতাল কর্মসূচি দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। অসহযোগের পাশাপাশি ‘গণকারফিউ’ নাম দিয়ে এই ভোটকেন্দ্রিক আন্দোলন শুরু করবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
কোনো অবস্থায় আন্দোলন সহিংসতায় রূপ না নেয়-এজন্য ইতোমধ্যে দশ দিন গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করেছে বিএনপি।
[214406]
জানা গেছে, কম সময়ে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামতে চায় বিএনপি। নেতাদের মতে, এতে করে আন্দোলনের ফসল ঘরে আনা যাবে। এ আন্দোলনে সমমনা দল ও জোটের পাশাপাশি পাশে পাচ্ছে জামায়াতে ইসলামীকেও।
ইসলামী আন্দোলন, বাম গণতান্ত্রিক জোটসহ নির্বাচন বর্জন করা সব রাজনৈতিক দলও পৃথক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। নেতাদের মতে, এবার ভোটারদের ওপরও চাপ আছে। কেন্দ্রে না গেলে নানা ধরনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
বিএনপিসহ ৬৩টি নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করেছে। এ কারণে আওয়ামী লীগের দলীয় নৌকা প্রার্থী ও ডামি (স্বতন্ত্র) প্রার্থী এবং সমমনা দলের প্রার্থীদের নিয়ে নির্বাচন করতে হচ্ছে। যার কারণে এ নির্বাচন গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে ভোটাদের কাছে। নেতারা আরও জানান, গণতান্ত্রিক বিশ্ব যে ধরনের সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়, তা বাস্তবে যে হচ্ছে না তা ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়ে গেছে।
আবার এই মুহূর্তে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কারাদণ্ড দেওয়ার ঘটনাও বিশ্ববাসীর কাছে ভিন্ন বার্তা যাবে। কারণ খালেদা জিয়াসহ বিরোধী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যে সাজা দেওয়া হয়েছে তা ‘ফরমায়েশি’ ও ‘সরকারের প্রতিহিংসার প্রতিফলন’ বলে বিএনপি অভিযোগ করে আসছে।
ড. ইউনূসের সাজার মধ্য দিয়ে এখন বিশ্ববাসী দেখতে পাচ্ছে বিএনপির অভিযোগের প্রমাণ, যা নির্বাচনেও প্রভাব পড়তে পারে বলেও তারা ধারণা করছেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আগামী ৭ জানুয়ারির ভোট নিয়ে প্রার্থীদের মাঝেই কোনো আগ্রহ নেই। কে এমপি হবে তা ঢাকা থেকে চূড়ান্ত করা হয়েছে। ফলে সচেতন কোনো মানুষ এবার ভোট দিতে যাবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি ও সমমনাদের আন্দোলন হচ্ছে শান্তিপূর্ণ। এ আন্দোলনে জনগণের সমর্থন আছে। যে কারণে ভীত হয়ে সরকার একতরফা প্রহসনের নির্বাচনের পথ বেছে নিয়েছে। জনগণ এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। আন্দোলন সফল হবেই।’
[214421]
বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক প্রায় অভিন্ন তথ্য দিয়ে জানান, ‘একতরফা’ নির্বাচন হচ্ছে তা ইতোমধ্যে তারা প্রমাণ করতে পেরেছেন। এখন দেশি ও বিদেশিদের কাছে ‘ভোটারবিহীন’ নির্বাচন দেখাতে চান।
বিএনপিসহ সমমনা দল ও জোট, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ ভোট বর্জন করা সব রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সমর্থক কেন্দ্রে যাবে না। এমনকি তাদের আত্মীয়স্বজনকে না যেতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। চলমান লিফলেট বিতরণ কর্মসূচির মাধ্যমে মূলত সাধারণ ভোটারদের ভোট বর্জন করার বিষয়টি তারা নিশ্চিত করতে চান। ইতোমধ্যে এক কোটির ওপর লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। বিরোধী সব রাজনৈতিক দলের অন্তত দেড় কোটি লিফলেট বিতরণের টার্গেট রয়েছে।
তাদের ধারণা, দেড় কোটি লিফলেট বিতরণ করা হলে তা কমপক্ষে তিন কোটি মানুষের কাছে বার্তা পৌঁছে যাবে। এটি এখন বিরাট শক্তি হিসাবে কাজ করছে। একদিকে কেন্দ্রীয়সহ নেতাকর্মীরা মাঠেও নামতে পারছেন, অন্যদিকে জনমতও তৈরি হচ্ছে। এজন্যই লিফলেট বিতরণের কর্মসূচিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
সূত্রমতে, রোব ও সোমবার সব সাংগঠনিক বিভাগের নেতাদের নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। সেখানে জেলা, উপজেলা, থানা ও পৌর ইউনিটের নেতারা ছিলেন। এ বৈঠকে গত এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক নেতা অংশ নেন। সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিকসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের নিয়েও ধারাবাহিক ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন দলীয় হাইকমান্ড।
দু’দিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন অন্তত দশজন নেতা বলেন, হাইকমান্ডে পক্ষ থেকে বলা হয়েছে চলমান আন্দোলন পঞ্চাশ ভাগ ইতোমধ্যে সফল হয়েছে। আর পঁচিশ ভাগ সফলের জন্য সবার সহযোগিতা চান। বাকি পঁচিশ ভাগ রাজনৈতিক ডামাডোলে সফল হয়ে যাবে। এই নির্বাচনের বিষয়ে বহির্বিশ্বকে যা বোঝানো দরকার, তা প্রমাণস্বরূপ বোঝানো হয়েছে।
[214409]
বৈঠকে অংশ নেওয়া নেতারা আরও জানান, আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে সরকারের কোনো ফাঁদে কেউ যেন পা না দেওয়া হয়। বিএনপি কোনো ‘সন্ত্রাসী’ বা ‘জঙ্গি’ দল নয়। বিএনপি শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক পথে এগোতে চায়। চলমান আন্দোলনে জনগণের সমর্থন রয়েছে। অন্য কোনো পক্ষ যদি কোনো ধরনের নাশকতা বা আগুনসন্ত্রাস করে সামনে পড়লে তার ভিডিও বা স্থির ছবি নিতে হবে এবং তা কেন্দ্রে পাঠাতে হবে।
বৈঠকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে বেশিরভাগ ভোটার ভোট দিতে পারেনি, সেই ক্ষোভ তাদের রয়েছে। এখন তাদেরও এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে হবে।
এদিকে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণের একই কর্মসূচি বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পালনের কথা জানিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, গণঅধিকার পরিষদ (দুই অংশ), লেবার পার্টিসহ সমমনারা। একই কর্মসূচি পালন করবে জামায়াতে ইসলামী ও এবি পার্টিও।
এমটিআই