জাপার ঘরে বিবাদ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জানুয়ারি ১১, ২০২৪, ১২:৫৭ পিএম

ঢাকা : আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৬টি আসনে নির্বাচন করে জাতীয় পার্টি (জাপা)।

দলটির নেতাকর্মীদের আশা ছিল গত সংসদের মতো এবারও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন তাদের দলের। তবে নৌকার প্রার্থীদের থেকে ছাড় পেলেও আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে ধরা খেয়েছেন। মাত্র ১১টি আসনে জয়ের পর সংসদে তাদের ভূমিকা কী হবে সেটা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।

এর মধ্যে বুধবার (১০ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদে যখন দলটির নির্বাচিতরা শপথ নিচ্ছিলেন, তখন নেতাকর্মীদের একাংশ জাপা চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে বিক্ষোভ করেছেন। দলের ভরাডুবির জন্য চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সাংগঠনিক দুর্বলতা, অদক্ষতা ও রাজনৈতিক অদূরদর্শিতাকে দায়ী করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তার পদত্যাগ দাবি করেছেন। ৫০০-৬০০ নেতাকর্মীদের ওই বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুরও পদত্যাগ দাবি করা হয়।

গতকাল সকাল থেকেই জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে পুলিশের বাড়তি সতর্ক অবস্থান থাকায় কার্যালয়ের ভেতরে যেতে চাইলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন নেতাকর্মীরা। এ সময় পুলিশের পক্ষ থেকে নেতাকর্মীদের বলা হয়, চেয়ারম্যানের অনুমতি ছাড়া কেউ ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন না। সে সময় পুলিশের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে জাপার অতিরিক্ত মহাসচিব সাহিদুর রহমান (টেপা)।

[215209]

কার্যালয়ে যেতে পুলিশের বাধার বিষয়ে রমনা থানার ওসি কাজী সাহান হক বলেন, ‘কার্যালয় বন্ধ। তারা ভেতরে কেন যাবেন? তাদের চেয়ারম্যানের অনুমতি ছাড়া আমরা কীভাবে যেতে দিই। তারা আমাদের কাছে নিরাপত্তা চেয়েছে।’

গতকাল বিক্ষোভে লিখিত বক্তব্য দেন জাপার অতিরিক্ত মহাসচিব সাহিদুর রহমান টেপা। তিনি চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের বিরুদ্ধে জাতীয় পার্টিকে পারিবারিকীকরণ, মনোনয়ন-বাণিজ্য ও দুর্বল নেতৃত্বের অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের সঙ্গে চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের মতৈক্য ছিল না। দলকে বিভক্তির কবল থেকে রক্ষা করতে বেগম রওশন এরশাদ নির্বাচন থেকে দূরে সরে ছিলেন।

বিক্ষোভে অংশ নিয়ে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব জহিরুল ইসলাম জহির অভিযোগ করেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রক্রিয়া, সমঝোতা এবং নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা কোনোটিই সাংগঠনিকভাবে হয়নি। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পর থেকে প্রার্থীরা দলের চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে ফোন করে পাননি।

শীর্ষ দুই নেতার পদত্যাগ করার আহ্বানের সঙ্গে নতুন করে জাতীয় পার্টির কাউন্সিল করার ঘোষণাও দিয়েছেন জাপার কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। চেয়ারম্যান ও মহাসচিব পদত্যাগ না করলে তাদের বাধ্য করা হবে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মুহূর্তে মুহূর্তে তারা সিদ্ধান্ত পাল্টান। এ নির্বাচনে দলের বড় ক্ষতি করেছেন জিএম কাদের ও মুজিবুল হক চুন্নু। তাদের জন্য পুরো দল ক্ষতিগ্রস্ত। এই মুহূর্তে তাদের পদত্যাগ করা উচিত। আমরা কাউন্সিল করে আমাদের নতুন নেতৃত্ব ঠিক করব।’

[215210]

অন্যদিকে দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘তাদের বিক্ষোভকে আমি অযৌক্তিক বলছি না। তারা রাগ-অভিমান থেকে এমনটা করেছেন। দলীয় ফোরামে আলোচনা করে এর সমাধান করা হবে।’

এদিকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া এবং ২৬ আসনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতার জন্য জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিব ৫০০ কোটি টাকা পেয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন কুমিল্লা-৩ আসন থেকে মনোনয়ন পাওয়া মো. আলমগীর হোসেন। দলটির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়াম সদস্য হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলনের কণ্ঠেও ছিল এমন অভিযোগ। তদন্ত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন বাবলা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বনানীতে বিক্ষোভ, পদত্যাগ আহ্বান ও কাউন্সিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে ভাঙনের সুর তুললেন জাপার নেতাকর্মীরা।

এমটিআই