ঢাকা: সরকারের নির্মমতার বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুক্রবার বিকালে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যে সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য নির্মমভাবে নিরীহ মানুষকে হত্যা করতে পারে এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও স্থাপনার নিরাপত্তা দিতে পারে না, সেই সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোনো নৈতিক অধিকার নেই।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে নজিরবিহীন সহিংসতা ও ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে। ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র। সেই সঙ্গে হতাহতের সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন তথ্যও সামনে আসছে।
এ পরিস্থিতিতে নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি তুলেছেন ফখরুল।
সরকারকে ‘অবৈধ’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, অবিলম্বে পদত্যাগ করে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করার লক্ষ্যে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা নিন।
বিএনপি এই গণহত্যা, নির্যাতন, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে সকল দেশ প্রেমিক মানুষ, রাজনৈতিক দল, ছাত্র, শিক্ষক, কৃষক, শ্রমিক ও পেশাজীবীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী শাসক গোষ্ঠীকে পরাজিত করে জনগণের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনের দুর্বার সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।
বিবৃতিতে অভিযোগ তুলে ফখরুল বলেছেন, সরকার মরিয়া হয়ে রাষ্ট্রের সকল বাহিনীসহ দলীয় সন্ত্রাসীদের সাধারণ মানুষ, বিএনপির নেতাকর্মী ও শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে ‘ব্লক রেড’ দিয়ে গ্রেপ্তার করছে। এখন পর্যন্ত তাদের হিসেবে প্রায় ৩ হাজার গ্রেপ্তার করছে, যা জাতির জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ও লজ্জার।
শুধু তাই নয়, গ্রেপ্তারকৃত নেতাদের গুম করে রেখে নির্যাতন চালিয়ে তিন/চার কিংবা পাঁচ দিন পর আদালতে হাজির করা হচ্ছে, যা আইন ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। দেশের নাগরিকদেরকে গুম করে রাখার ভয়াবহ সংস্কৃতি চালু রেখে মানুষের মনে ভীতি সঞ্চার করা হচ্ছে। আমি সরকারকে এ ধরনের লোমহর্ষক কর্মকাণ্ড পরিহারের আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের ওপর সরকারদলীয় সন্ত্রাসী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যৌথভাবে হামলা চালিয়ে ইতিহাসে হতাহতের যে বর্বরোচিত নজির স্থাপন করেছে, তা দেশ-বিদেশের সকল স্বৈরাচারের নির্মম নিষ্ঠুরতাকেও হার মানিয়েছে।
[228117]
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি ক্রমেই সহিংসতা হয়ে ওঠে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে সর্বাত্মক সমর্থনের ঘোষণা দেয় বিএনপি ও তাদের সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। শাটডাউনের দিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। ছাত্রদের ঘোষিত কর্মসূচি না থাকলেও শাটডাউনের পরের কয়েকদিনও সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ।
এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলছেন, এই আন্দোলনে সরকারি দলের সন্ত্রাসী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যৌথভাবে জনগণের টাকায় কেনা গুলি, টিয়ারশেল, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড শিক্ষার্থীদেরকে লক্ষ্য করে নিক্ষেপের মাধ্যমে শত শত নিরীহ ছাত্র-ছাত্রীকে গণহারে হত্যা এবং হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীকে আহত করেছে, যা দেশবাসীসহ বিশ্ববাসী অবলোকন করেছে।
এই নির্মম অত্যাচারে দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ হতবাক ও ক্ষুদ্ধ হয়েছে এবং কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলও একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে নৈতিক সমর্থন দিয়েছে এবং সারা দেশে কর্মসূচিও পালন করেছে।
গত রোববার থেকে আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা কমতে থাকে। বুধবার থেকে গাড়ির চাকা ঘুরছে, কাজের জন্য রাস্তায় নামছে মানুষ। আন্দোলনের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন স্থাপনা পরিদর্শন করছেন সরকারপ্রধান ও তার মন্ত্রীরা।
আন্দোলনের মধ্যে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া বিটিভি ভবন শুক্রবার পরিদর্শনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী দেশের আনাচকানাচ থেকে সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছেন। আগের দিন আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রোরেল পরির্দশনে গিয়ে আবেগাপ্লুত প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর কাছেই অগ্নিসন্ত্রাসীদের বিচার চেয়েছেন।
আন্দোলনে সমর্থন ও অর্থায়ন, সহিংসতায় যুক্ত থাকার অভিযোগে ঢাকাসহ দেশজুড়ে গ্রেপ্তার অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিএনপির অনেক নেতাকর্মী এরই মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন।
এ বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেছেন, সরকার নিজেদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও ব্যর্থতা আড়াল করতে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে গ্রেপ্তার করে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় দলের যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, বরিশালের জিয়াউদ্দিন সিকদার, নাটোরের রহিম নেওয়াজকে গ্রেপ্তার এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির গ্রেপ্তারকৃত সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মোশাররফ হোসেন খোকনকে তিন দিন পর আদালতে তোলা হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিবের অভিযোগ, অব্যাহত গতিতে সারা দেশে বিরোধী দলের নেতাকর্মীর বাড়ি বাড়ি তল্লাশি হচ্ছে। আজকেও দলের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টুর বাসাসহ অনেক সিনিয়র নেতৃবৃন্দের বাসায় তল্লাশি চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সাধারণ মানুষকে গ্রেপ্তার, কারান্তরীণ ও জুলুম-নির্যাতনের ঘটনা চলছেই।
বিবৃতিতে গ্রেপ্তারকৃত সব নেতার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং অবিলম্বে তাদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করেন ফখরুল।
বিবৃতিতে ফখরুল অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ লাশের উপর দিয়ে ক্ষমতায় গিয়েছে এবং ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য গত কয়ক দিন যে পরিমাণ নিরীহ ছাত্র-মানুষকে গুলি চালিয়ে পাখির মত হত্যা করেছে, গণহত্যা চালিয়েছে তা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কথাই মনে করিয়ে দেয়।
তিনি বলেন, গত কয়েকদিনে কতজন নিরীহ মানুষকে হত্যা ও পঙ্গু করা হয়েছে জনগণ তার সঠিক পরিসংখ্যান জানতে চায়।
এ ছাড়া জনগণের টাকায় কেনা কী পরিমাণ গোলাবারুদ, টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড শিক্ষার্থীদের ওপর ব্যবহার করা হয়েছে, তার হিসাবও জনগণ জানতে চায়। রাষ্ট্রের টাকায় কেনা হেলিকপ্টার দিয়ে মানুষ হত্যার জবাব জনগণ একদিন কড়ায়-গন্ডায় আদায় করে নেবে।
এআর