আ.লীগের আস্থাভাজন নেতা এখন বিএনপির আদর্শের সৈনিক 

  • মাদারীপুর প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ১১, ২০২৪, ০৮:৫১ পিএম

মাদারীপুর: মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোহসেন উদ্দিন সোহেল বেপারী আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় নেতা এবং স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য নূর-ই-আলম চৌধুরী ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মুনির চৌধুরীর খুবই আস্থাভাজন ছিলেন। পুরোদস্তুর একজন আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে তিনি বেশ সমাদৃত শিবচরে।

কিন্তু গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ৫৫ দিনের মধ্যেই শিবচরের আওয়ামী লীগের নেতা সোহেল বেপারীকে বিএনপির কর্মী সমাবেশে উপস্থিত থাকতে দেখে সমালোচনার ঝড় বইছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।  বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীরাও।

অপরদিকে কালকিনিতে আব্বাস পাইক নামে আওয়ামী লীগের এক নেতা রাজনৈতিক পট পরিবর্তন সাথে সাথেই আওয়ামী লীগ ছেড়ে বিএনপিকে সমর্থন করে পোস্টার ছাপিয়েছেন।

সম্প্রতি শিবচরের কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নে বিএনপির একাংশের সুধী সমাবেশ ও মতবিনিময় সভায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্র-জনতা হত্যার একাধিক মামলার আসামি ও আওয়ামী লীগের ওই চেয়ারম্যানকে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে।

একই দিন আওয়ামী লীগের আরও কয়েকজন নেতা কর্মীকে বিএনপিতে যোগদান করানো হয়েছে।এ নিয়ে জেলাজুড়ে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর দুপুরে কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের বাংলাবাজার এলাকায় এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, শিবচরের কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের বাদশা বেপারীর বাড়িতে বিএনপির একাংশের কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় বিএনপি নেতা কামাল জামান নুরুদ্দীন মোল্লা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। নুরুদ্দিন মোল্লাকে স্বাগত জানাতে বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মোহসেন উদ্দিন সোহেল বেপারীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। পরে সভার মঞ্চেও বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা গেছে তাকে।

একই অনুষ্ঠানে ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সজীব হাওলাদার ফুল দিয়ে বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন বলেও খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া একই সঙ্গে এলাকার আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের আরও বেশ কয়েকজন নেতারও বিএনপিতে যোগদানের খবর পাওয়া গেছে। এতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে বিএনপির নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে।  

শেখ নূর উদ্দীন নামে এক ছাত্রদল নেতা বলেন, শিবচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি লতিফ মোল্লার আপন ছোট ভাই কামাল জামান নূরুদ্দীন মোল্লা এক সময় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েও পাননি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। এরপর থেকে নিজেকে বিএনপি নেতা বলে পরিচয় দিতে থাকেন তিনি। ২০১৮ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত শিবচরে তার কোনো কার্যক্রম ছিল না।  

তিনি আরও বলেন, গত ৫ আগস্ট এর পর তিনি হঠাৎ করে প্রকাশ্যে এসে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিএনপিতে পুনর্বাসন করে রাজনীতিতে ফেরার চেষ্টা করছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থী হত্যা মামলার দুজন আসামি ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল বেপারী ও ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সজীব হাওলাদারকে দলে নিয়ে বিএনপির কর্মী সমাবেশ করছেন। এটা দুঃখজনক। এতে করে শিবচরে বিএনপির ওপরে আস্থা হারাচ্ছেন সাধারণ জনগণ। দ্রুত হাইকমান্ডকে তার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাই আমরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে থেকে বিগত ১৭ বছর সব সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন তারা। দিন বদলের মাত্র ৫৫ দিনেই এ পরিবর্তন, এটা খুবই লজ্জার-কষ্টের।

এ ব্যাপারে জানতে সোহেল বেপারীর মোবাইল ফোনে একাধিক বার কল দেওয়া হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

এবিষয়ে শিবচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন খলিফা বলেন, আওয়ামী লীগের ত্যাগী, আস্থাভাজন নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় না করে কিছু দালাল চক্রের সঙ্গে সমন্বয় করে তাদের দলে স্থান দেওয়া হয়েছিল। তারা দলের সব সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন। তারা এসেছিলেন ব্যবসা করতে, ব্যবসা শেষ, এখন আবার চলে গেছেন। আমাদের নেতা নূর-ই আলম চৌধুরী কোনো সাংগঠনিক সম্পাদক বা দলের কারো সঙ্গে আলাপ আলোচনা না করে তাদের দলে এনেছিলেন। এখন তারা সুযোগ পেয়ে চলে গেছে। কোনো ত্যাগী নেতা দল ছাড়েননি, ছেড়েছেন সুযোগ সন্ধানীরা।

শিবচর উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইয়াজ্জেম হোসেন রোমান বলেন, দেশে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আমাদের ছাত্র-জনতা মারা গেছেন, তাদের হত্যা করা হয়েছে। সেইসব হত্যা মামলা থেকে রেহাই পাওয়ার কৌশল হিসেবে বিএনপি থেকে সুবিধা নেওয়ার জন্য সব সুযোগ সন্ধানীরা সুযোগ নিতে চাচ্ছে। আমরা শিবচর উপজেলা বিএনপি এর তীব্র নিন্দা জানাই। যারা এ কাজগুলো করছেন, তাদের বিরুদ্ধে শিবচর উপজেলা বিএনপি ঐক্যবদ্ধভাবে ব্যবস্থা নেবে।

এদিকে কালকিনিতে আব্বাস পাইক নামে আওয়ামী লীগের এক নেতা রাজনৈতিক পট পরিবর্তন সাথে সাথেই আওয়ামী লীগ ছেড়ে বিএনপিকে সমর্থন করে পোস্টার ছাপিয়েছেন। এই নেতা আওয়ামী লীগের সময় দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপের সমর্থন করে কাজ করেছেন। ক্ষমতার পট পরিবর্তনে সাথে সাথে নিজেকে পরিবর্তন করে বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতা আনিসুর রহমান খোকন তালুকদারকে নেতা হিসেবে গ্রহণ করে পোস্টার ছাপিয়ে এলাকায় বিএনপির আদর্শ সৈনিক বলে প্রচার করছেন।

এ ব্যাপারে কালকিনি পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট সরদারাবুল বাসার বলেন, এরা সুযোগ সন্ধানী এদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নেই।
 
কালকিনি পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মিজানুর রহমান হাওলাদার বলেন, যারা এখন নতুন করে বিএনপিতে আসতে চাচ্ছে তাদের ব্যাপারে সতর্ক নজর রাখা হচ্ছে। 

এবিষয়ে জানতে আব্বাস পাইকের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। 

আইএ