১৫ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা চায় সিপিবি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩, ২০২৫, ০৮:৫৩ পিএম

ঢাকা : মুক্তিযুদ্ধ ও চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। তারা বলেছে, দেশের জনগণ অন্তর্বর্তী সরকারের অন্তরের কথা বুঝতে পারছে না। তারা ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছে। রাজনীতির বাইরে কোনো খেলা চলবে না। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ পরিচালনা করতে হবে।

শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সিপিবি আয়োজিত ‘ঢাকা সমাবেশ’-এ নেতারা এসব কথা বলেন। জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার, আহতদের সুচিকিৎসা ও নিহত-আহতদের পরিবারের পুনর্বাসন, নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা, নিত্যপণ্যের দাম কমানো, জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং লুটপাট, সাম্প্রদায়িকতা, আধিপত্যবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ রুখে দাঁড়ানোসহ বিভিন্ন দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। 

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, সরকারের সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে ইতোমধ্যে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। সংস্কার আগে, না নির্বাচন আগে, এ নিয়ে অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে। সংস্কার ও নির্বাচন সাংঘর্ষিক নয়, এটা পরস্পরের পরিপূরক। 

[241005]

তিনি বলেন, বাহাত্তরের সংবিধান ও জাতীয় চার মূলনীতি বাতিলের দাবি এবং জাতীয় সংগীত নিয়ে বিতর্ক সামনে এনে জাতীয় ঐক্যের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা হয়েছে। ভিন্নমত পোষণ করলেই আগের মতো স্বৈরাচারের দোসর বলে ট্যাগ দেওয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে পতিত স্বৈরাচার, জঙ্গি ও নৈরাজ্যবাদী শক্তির পথকে প্রশস্ত করা হচ্ছে।

দলের সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম নয়া যুক্তফ্রন্ট গঠনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, শুধু স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের পতন ঘটালে চলবে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণঅভ্যুত্থানের জনআকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য ব্যবস্থা বদল করতে হবে। সেই লক্ষ্য অর্জনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় পার্টির বাইরে থাকা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সব শক্তি মিলে একটি ‘নয়া যুক্তফ্রন্ট’ গঠন করতে হবে। 

তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা বলত– উন্নয়নের জন্য সরকারের ধারাবাহিকতা দরকার। এ জন্য ‘শেখ হাসিনার সরকার বারবার দরকার’। আর এখন অনেকে বলার চেষ্টা করছেন, ‘বারবার দরকার, সংস্কার পার্টির সরকার’। এটা জনগণ সহ্য করবে না। তাই দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে নির্বাচন দিতে হবে। 

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অন্তরের কথা কেউ বুঝতে পারছে না। তবে, নানা ধরনের ছলে-বলে-কৌশলে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার অপচেষ্টা চলছে। এই অপচেষ্টা বাদ দিয়ে জনগণের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। তিনি বলেন, এই সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন করতে পারেনি। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় জনজীবনে সংকট বেড়েছে। পতিত আওয়ামী সরকারের সিন্ডিকেট বহাল রেখে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ হবে না। তাই রাজপথে দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের পাশাপাশি ক্ষমতা দখলের লড়াই এগিয়ে নিতে হবে।

সমাবেশ থেকে আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে– বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে আগামী ১০ জানুয়ারি থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তির সঙ্গে মতবিনিময়, ২০ জানুয়ারি পল্টন হত্যা দিবসে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া শপথ গ্রহণ এবং ২১ থেকে ২৭ জানুয়ারি গণতন্ত্রের অভিযাত্রা কর্মসূচি ও হাজার কিলোমিটার পদযাত্রা।

সিপিবির সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ক্ষেতমুজর নেতা প্রদীপ ভৌমিকের ছেলে সুজন ভৌমিক, সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন প্রমুখ। সমাবেশের শুরুতে উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী গণসংগীত পরিবেশন করে। সমাবেশ শেষে এক লাল পতাকা মিছিল নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

এমটিআই