ঢাকা: ঢাকার হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনালে কনস্ট্রাকশন সাইট থেকে এ পর্যন্ত ৪টি ২৫০ কেজি ওজনের জেনারেল পারপাস (জিপি) বোমা উদ্ধার করা হয়েছে।
সর্বশেষ বোমাটি উদ্ধার করা হয় সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) সকালে। এর আগে ৯, ১৪ ও ১৯ ডিসেম্বর আরও একটি করে বোমা উদ্ধার করা হয়।পরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী বোমাগুলো নিষ্ক্রিয় করে।
বিমানবন্দর থেকে বোমা উদ্ধারের খবর বেশ সাড়া জাগিয়েছে এবং মানুষের মনে কৌতূহল জেগেছে, বোমাগুলো আসলে কোথা থেকে কিভাবে আসলো।
বোমাগুলো উদ্ধারের পর আইএসপিআর-এর পক্ষ থেকে শুধু এতটুকু জানানো হয়েছে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বোমাগুলো নিক্ষেপ করা হয়েছিল।
তাহলে সাধারণ মনে প্রশ্ন জাগে শুধু বিমানবন্দরে এতগুলো বোমা মিললো কেন, মুক্তিযুদ্ধ তো সারাদেশেই হয়েছে, তবে কী আরও অনেক স্থানে এরকম শক্তিশালী বোমা মিলতে পারে?
এবার সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা যাক।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় গড়ে ওঠা বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ৩ ডিসেম্বরে প্রথমবারের মতো শত্রুপক্ষ পাকিস্তানী বাহিনীর ওপর বিমান হামলা চালিয়েছিল ঢাকা ও চট্টগ্রামে। তখনকার ওই হামলায় অংশ নিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন সাহাবুদ্দিন আহমেদ। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য যিনি বীর উত্তম খেতাব পান।
তিনি সম্প্রতি বিবিসিকে বলেন, যুদ্ধের সময় মূল বিমানবন্দরগুলোতে হামলা চালানোর কাজটি করেছিল ভারতীয় বিমান বাহিনী, কারণ বাংলাদেশের বিমান বাহিনীর তখনও মূল বিমানবন্দরে হামলা চালানোর মতো সক্ষমতা ছিল না।
‘মূল বিমানবন্দরের বাইরে অপেক্ষাকৃত কম সুরক্ষিত ঘাটিগুলোতে হামলা করতো বাংলাদেশ বিমান বাহিনী’।
ভারতীয় বিমান বাহিনী বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধান তিনটি বিমানবন্দর ঢাকা, চট্টগ্রাম, যশোরে বিমান হামলা চালায়। আর এ কারণেই ঢাকার বিমানবন্দর থেকে উদ্ধার হওয়া বোমা ভারতীয় বিমান বাহিনী থেকে ফেলা হয় বলে মনে করেন তিনি।
‘৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়ে বিমান হামলা চলেছিল ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এর পর আর বিমান হামলার দরকার পড়েনি, কারণ পাকিস্তান বিমান বাহিনীর কোন শক্তি আর অবশিষ্ট ছিল না’।
ক্যাপ্টেন সাহাবুদ্দিন আরও বলেন, ২০০ বা ২৫০ কেজি ওজনের বোমাগুলো মূলত কোন স্থাপনা ধ্বংসের কাজে বা কোন ঘাটি লক্ষ্য করে বড় ধরণের ধ্বংসযজ্ঞের জন্য নিক্ষেপ করা হয়ে থাকে।বিমান বন্দরের রানওয়েতে যদি এই বোমা ফেলা হয় তাহলে সেখানে বড় ধরণের গর্ত তৈরি হয়, ফলে রানওয়ে পুরোপুরি অকেজো হয়ে পড়ে। যার কারণে শত্রুপক্ষের বিমান ওঠা-নামা করতে পারে না।মূলত এটিই ছিল বিমান বন্দরে হামলার উদ্দেশ্য।
ভারতের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল শঙ্কর রায় চৌধুরী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতীয় সেনাবাহিনীতে একজন মেজর হিসেবে কর্মরত ছিলেন এবং তিনি ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধেও অংশ নিয়েছিলেন।
বিবিসিকে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে বাছাই করা যেসব হামলা চালানো হয়েছিল, তার মধ্যে তৎকালীন তেজগাঁও বিমানবন্দরে হামলা ছিল উল্লেখযোগ্য।আর যে বোমাগুলোর কথা বলা হচ্ছে, সেটি ওই হামলা থেকেই এসে থাকবে।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতীয় বাহিনী মূলত মিগ-২১ এবং ক্যানবেরা বিমান ব্যবহার করেছিল।উদ্ধার হওয়া বোমাগুলো সম্ভবত ক্যানবেরা বিমান থেকে ফেলা হয়েছিল।
বোমাগুলো কেন বিস্ফোরিত হয়নি, এবিষয়ে জেনারেল শঙ্কর রায় চৌধুরী বলেন, মূলত কাদামাটি বা জলাভূমিতে কোন বোমা পড়লে সেটি বিস্ফোরিত হয় না।
এছাড়া বোমাটি ছোড়ার সময় যদি সঠিক পদ্ধতি মানা না হয় কিংবা এক্ষেত্রে কোন ধরণের ত্রুটি থেকে যায়, তাহলেও অনেক সময় বোমা বিস্ফোরিত হয় না।
‘বোমার যে মেকানিজম, যেটা দিয়ে এটি ফাটে, সেটি হয়তো কাজ করেনি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটা হয়। বোমা ফাটানোর যে সুইচ থাকে, সেটা অনেক সময় কাজ করে না। তবে এটা ইচ্ছাকৃত নয়’।
সোনালীনিউজ/আইএ