ঢাকা : উদ্বোধনের অপেক্ষায় দেশের প্রথম মেট্রোরেল। জনগণের বহুল কাঙ্ক্ষিত এ প্রকল্পের একাংশ খুলে দেওয়া হবে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ নাগাদ। ট্রায়াল রান চলছে কয়েক মাস ধরে। টিকেটিং, স্টেশনে ওঠা-নামা, এমআরটি কার্ড রিচার্জ, মেট্রোতে প্রবেশ-বের হওয়া প্রভৃতি কাজের মহড়া চলছে এখন।
বাংলাদেশের মানুষ এ ধরনের গণপরিবহনে চড়তে অভ্যস্ত নয়। সাধারণ মানুষকে অভ্যস্ত করাতে ভিডিও টিউটোরিয়ালও তৈরি করা হয়েছে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ও বয়স্কদের জন্য থাকছে বিশেষ ব্যবস্থা।
তিনতলা স্টেশন : প্রাথমিকভাবে উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চালু করা হবে। পরের ধাপে চালু হবে কমলাপুর পর্যন্ত। মেট্রোরেলে চড়ার জন্য যাত্রীদের প্রথমে স্টেশনে আসতে হবে। মোট স্টেশন থাকবে ১৭টি। উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত প্রতিটি স্টেশন তিনতলাবিশিষ্ট। দ্বিতীয় তলায় কর্মকর্তাদের অফিস কক্ষ, টিকিট কাউন্টার ও ওয়েটিং রুম। তৃতীয় তলায় প্ল্যাটফর্ম। যাত্রীদের নির্দিষ্ট গন্তব্যের জন্য দ্বিতীয় তলায় টিকিট কাটতে হবে। এরইমধ্যে স্টেশন ও প্ল্যাটফর্মের কাজ শেষ হয়েছে। যাত্রীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে তিন ধরনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সিঁড়ি ও এস্কেলেটরের পাশাপাশি বয়স্ক ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের জন্য থাকবে লিফট।
টিকিট সংগ্রহ : মেট্রো স্টেশনের দ্বিতীয় তলাকে বলা হচ্ছে কনকর্স লেবেল। এখানে আসার পর যাত্রীরা তাদের টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন। এই ফ্লোরে প্রয়োজনীয় সংখ্যক টিকিট বিক্রির মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। যাত্রীরা যদি সিদ্ধান্ত নেন যে একক ভ্রমণের টিকিট সংগ্রহ করবেন, তখন মেশিনে টাকা প্রবেশ করিয়ে মনিটরে তার গন্তব্য ও টিকিটের সংখ্যা নির্ধারণ করে কল বাটন চাপলে টিকিট সংগ্রহের স্থান থেকে নিতে পারবেন।
যদি কেউ এমআরটি কার্ড রিচার্জ করতে চান সেক্ষেত্রে একইভাবে টাকা প্রবেশ করিয়ে মনিটরে টাকার পরিমাণ দিয়ে কল বাটন চাপলে স্বংক্রিয়ভাবে রিচার্জ হয়ে যাবে। প্রতিটি স্টেশনে টিকিট সংগ্রহের বুথ আছে। সিঙ্গেল এন্ট্রি ও ১০ বছর মেয়াদে টিকিট সংগ্রহ করা যাবে। তবে ১০ বছর মেয়াদি টিকিটের জন্য ২০০ টাকা জামানত রাখতে হবে। প্রথমবার রিচার্জ করতে হবে ২০০ টাকা। তবে ইচ্ছে করলে যাত্রী টিকিট কার্ড ক্যানসেল করে ২০০ টাকা সরকারের কাছ থেকে ফেরত নিতে পারবেন।
যেভাবে প্রবেশ ও বের হওয়া যাবে : দোতলায় টিকিট কাটার পর কার্ড গেটের নির্দিষ্ট স্থানে টাচ করলেই খুলে যাবে। তবে সিঙ্গেল এন্ট্রি কার্ডের (প্রতিবার ভ্রমণের সময় যাত্রীরা টিকিট কাটলে একটি কার্ড দেওয়া হবে) যাত্রীদের স্মরণ রাখতে হবে নামার স্থানের কথা। কারণ নির্দিষ্ট গন্তব্যের চেয়ে বেশি দূরে গেলে এই সিঙ্গেল এন্ট্রি কার্ড দিয়ে আর বের হওয়া যাবে না। কারণ সিঙ্গেল এন্ট্রি কার্ডটি এন্ট্রি-এক্সিটের জন্য ব্যবহার করা যাবে।
১০ বছর মেয়াদি কার্ডের যাত্রীদের এ সমস্যা নেই। কার্ড টাচ করলেই যাত্রাপথের দূরত্ব অনুসারে টাকা কেটে নেবে।
মেট্রোরেল স্টেশনের দ্বিতীয় তলায় টিকিট কাটার আগ পর্যন্ত আপনি নন-পেইড জোনে অবস্থান করবেন। যখন আপনি টিকিট কাটলেন তখন পাঞ্চ মেশিনে আপনাকে পাঞ্চ করতে হবে। পাঞ্চ করলে দরজাটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে যাবে। তখন আপনি পেইড জোনে প্রবেশের সুযোগ পাবেন। এরপর সিঁড়ি বা এস্কেলেটর কিংবা লিফট দিয়ে প্ল্যাটফর্মে গিয়ে মেট্রোতে পরিভ্রমণ করবেন।
ভ্রমণ শেষে আপনি যখন বের হবেন তখন পাঞ্চ মেশিনে আবার পাঞ্চ করতে হবে। আর যদি আপনি অতিরিক্ত স্টেশন পরিভ্রমণ করেন বা আপনার যদি কার্ড না থাকে তাহলে বের হওয়ার দরজাটি খুলবে না। তখন প্রয়োজনীয় সংখ্যক অর্থ পরিশোধ করে আপনি বাইরে বের হতে পারবেন।
সর্বোচ্চ ভাড়া ১০০, সর্বনিম্ন ২০ : ভাড়ার তালিকা অনুযায়ী, উত্তরা নর্থ স্টেশন থেকে উত্তরা সাউথ স্টেশন পর্যন্ত ২০ টাকা, মিরপুর-১১ নম্বর স্টেশন পর্যন্ত ৩০ টাকা, কাজীপাড়া পর্যন্ত ৪০ টাকা, শেওড়াপাড়া পর্যন্ত ৫০ টাকা, বিজয় স্মরণি পর্যন্ত ৬০ টাকা, ফার্মগেট পর্যন্ত ৭০ টাকা, শাহবাগ পর্যন্ত ৮০ টাকা, সচিবালয় পর্যন্ত ৯০ টাকা এবং কমলাপুর পর্যন্ত ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ভাড়ার হার একজন যাত্রীর জন্য প্রতি কিলোমিটার পাঁচ টাকা। সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা। সর্বোচ্চ ভাড়া ১০০ টাকা। মেট্রোরেলের ভাড়া স্মার্টকার্ডের মাধ্যমে যাত্রীরা পরিশোধ করলে ১০ শতাংশ রেয়াত দেওয়ার বিষয়ে ডিএমটিসিএল ব্যবস্থা নেবে। এছাড়া যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধারা বিনা ভাড়ায় মেট্রোরেলে ভ্রমণ করতে পারবেন। এছাড়া বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তির প্রতিটি সিঙ্গেল ট্রিপের জন্য বিশেষ রেয়াতের ব্যবস্থা রাখা হবে বলে জানায় ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
সোনালীনিউজ/এমটিআই