ঢাকা: এবার রাজধানীতে ১৯টি পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। হাটগুলোতে এরই মধ্যে পশু আসতে শুরু করেছে। আনুষ্ঠানিকভাবে হাট ২৫ জুন থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বেশ আগেই আসছে পশু। তবে এখনো পশু বাধার জন্য বাঁশের খুঁটি লাগানোর কাজ চলছে হাটগুলোতে। চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতির কাজ।
সোমবার (১৯ জুন) ঢাকার হাট ঘুরে দেখা গেছে, বড় খামারিরা আগাম এসেছেন। জায়গা আগে বেছে নিয়ে তারা গরুর যত্ন করতে শুরু করেছেন। কিন্তু এত আগে আসলেন কেন এটা ছিল অনেকের প্রশ্ন। কারণ হাট শুরু হবে আগামী ২৫ জুন থেকে। তাহলে হাট শুরুর ছয় দিন আগে কেন আসলেন তারা। বিষয়টি জানতে চাওয়া হয়েছিল আগাম আসা গরুর খামারিদের কাছে।
গরুর হাটে আগাম গরু নিয়ে আসার কারণ হিসেবে গরু খামারিরা জানিয়েছেন, রাস্তাঘাটে যানজটের কারণে অনেক সময় গরু আনতে দেরি হয়। ট্রাকে থাকা গরু অসুস্থ হয়ে পড়ে, বেশির ভাগ সময় মারা যায়। আবার হাটে জায়গা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এসব বিষয়কে মাথায় রেখে এবার তারা আগাম এসেছেন।
কুষ্টিয়া থেকে ঢাকার সাঈদ নগর হাটে গরু নিয়ে আসা ওমর ফারুক বলেন, এবার একটু আগেই চলে এসেছি। কারণ কয়েক দিন পর রাস্তায় যানজট শুরু হবে। এ যানজটের কারণে গরু দীর্ঘক্ষণ গাড়িতে থাকতে হয়। এতে গরু অসুস্থ হওয়াসহ নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এ ছাড়া কয়েক দিন পরে আসলে হাটে জায়গা পাওয়া যায় না। আর যেসব জায়গা পাওয়া যায় সেখানে গরু রাখা যায় না। সে জন্য সব চিন্তা ভাবনা করে আগেই গরু নিয়ে এসেছি।
পাবনার রুবেল বলেন, দেশি ১০ গরু নিয়ে এসেছেন। প্রথম দিকে ক্রেতা ভালো পাওয়া যায়। দাম যা চাওয়া যায় তাই মিলে। এ ছাড়া হাটে দেরিতে আসলে জায়গা পাওয়া কঠিন হয়। আগে আসায় গরুর যত্ন করা যায়। আর সুন্দর করে থাকার জায়গাও করে নেওয়া যায়। এসব ভেবে তিনি আগাম এসেছেন।
সাঈদ নগর গরুর হাটটিতে গতকাল ৮০-১০০টি গরু দেখা গেছে। বিক্রেতারা গরুর পরিচর্যা করতে দেখা গেছে। তবে এখনো বিক্রি শুরু হয়নি। তবে হাটটিতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির কাজ। একই অবস্থা পোস্তগোলা শ্মশানঘাট হাটের। গতকাল থেকে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসতে শুরু করেছে পশু। তবে এখনো হাটটির প্রস্তুতির কাজ চলছে।
মেরাদিয়া হাটটিতেও চলছে প্রস্তুতির কাজ। এর মধ্যে লাইটিংসহ বাকি কাজগুলোও আগামী দু-এক দিনেই শেষ হবে। ইতিমধ্যে এ হাটে গরু বাঁধার জন্য বাঁশের খুঁটির কাজও শেষের দিকে। পুরো মাঠে ত্রিপল লাগানো হয়েছে, যাতে বৃষ্টিতে কোনো পশু না ভিজে যায়। তবে হাটের প্রচার বাড়াতে বনশ্রী, রামপুরা, খিলগাঁও, বাসাবো, গোড়ান, নন্দীপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় সুবিশাল সব তোরণ স্থাপন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে সাঁটানো হয়েছে পোস্টার-ফেস্টুন।
কোরবানির হাটের প্রস্তুতির ব্যাপারে মেরাদিয়া হাটের ইজারাদার আওরঙ্গজেব টিউ বলেন, হাটের সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এখন বাঁশের খুঁটি লাগানোর কাজ চলছে। তবে বাকি কাজগুলো শেষ হতে আরও কয়েক দিন সময় লাগবে। আশা করছি, নির্ধারিত সময়ের আগেই সব কাজ শেষ করতে পারব।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন বলেন, ঈদের দিনসহ মোট পাঁচ দিনের জন্য অস্থায়ী হাট বসানোর অনুমতি দেওয়া হয়। এর বাইরে হাট বসানোর সুযোগ নেই। আগে যদি কেউ পশু নিয়ে আসলেও বিক্রি করতে পারবে না।
তিনি বলেন, সীমানার বাইরে এবং রাস্তার পাশে হাট বসানো যাবে না। এ রকম অভিযোগ আসলে আমরা ব্যবস্থা নিব। এই কর্মকর্তা আরও বলেন, দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় অস্থায়ী ৯টি হাটের মধ্যে ৭টি চূড়ান্ত হয়েছে। বাকি দুইটি কাল (মঙ্গলবার) আশা করি চূড়ান্ত হয়ে যাবে।
প্রসঙ্গত, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ৮টি অস্থায়ী হাট বসবে। এর বাইরে গাবতলী স্থায়ী হাটটিতেও পশু বেচাকেনা হবে। এ ছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় অস্থায়ী ৯টি হাট বসবে। এর বাইরে সারুলিয়া স্থায়ী হাটটিতেও পশু বেচাকেনা হবে।
সোনালীনিউজ/এম