ঢাকা: রাজধানীর আশপাশে যে কয়েকটি হাট রয়েছে তার মধ্যে কেরানীগঞ্জের হজরতপুর হাট সবচেয়ে বড়। এখানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কোরবানির পশু আসে। তবে এই হাটে সবচেয়ে বড় সমস্যা দালাল। কোরবানির পশু কিনতে গিয়ে এই বিড়ম্বনায় পরেছেন অনেকেই। দালালদের কারণে কোরবানির পশুর দাম অন্তত ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়ে বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। তবে প্রকৃত মালিকদের কাছ থেকে কেনা কোরবানির পশু পাওয়া গেছে ন্যায্য দামে।
[201899]
কেরানীগঞ্জের মডেল থানাধীন হযরতপুর ইউনিয়নের স্থায়ী হাট হযরতপুর হাট। কালীগঙ্গা নদীর পাশে গড়ে ওঠা এই হাটের বয়স প্রায় ৩০ বছর। এই হাট রাজধানীর পাশে গড়ে ওঠা স্থায়ী হাটগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়। সারাবছর এই হাটে গরু-খাসি ও মহিসসহ বিভিন্ন পশু পাওয়া যায়। হাটের বিশেষ আকর্ষণ স্থানীয়দের বাড়িতে লালন-পালন করা পশু। কোরবানিকে কেন্দ্র করে স্থানীয়রা প্রচুর পশু লালন-পালন করেন। ঈদকে কেন্দ্র করে হাটে আশা মোট পশুর ৩০ শতাংশ গরু স্থানীয়দের।
[201887]
শনিবার (২৪ জুন) সকালে গিয়ে দেখা যায় কোরবানির পশু কিনতে রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে হাটে জড়ো হয়েছেন ক্রতারা। সাধারণ ক্রেতাদের সঙ্গে এই হাটে উপস্থিত হয়েছিলেন গরুর পাইকাররা। তবে এই হাটে ক্রেতা ও পাইকারদের চাইতে বেশি ছিলো দালাল। যার কারণে গরু কিনতে বেশ বিপাকে পরতে হয়েছে ক্রেতাদের। পশুর দাম দালালদের জন্য বেড়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা।
সাভার, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, রাজশাহী, কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছোট, মাঝারি ও বড় কোরবানির পশু এসেছে। রাতেই হাট ভড়ে যায় কোরবানির পশুতে। দিনের বেলায়ও প্রচুর গরু ঢুকে হাটে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতাদের ভীড়ও বাড়তে থাকে।
[201854]
এই হাটে সড়ক ও নৌ পথে যাওয়া যায়। হাট থেকে কোরবানির পশু কেনার পর নৌ পথেও বাসায় বা নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে যান ক্রেতারা। এর সঙ্গে সড়ক পথও রয়েছে। তবে সড়ক পথে কিছুটা বিড়ম্বনাও রয়েছে। এই পথে সড়কের কিছু অংশ সরু হওয়ায় ট্রাক চলাচলে যানজট সৃষ্টি হয়। তাই অনেকে সড়কপথ পরিহার করেন।
হাট ঢাকার বাইরে হওয়ায় অনেকেই সেখানে যান। এবছরও রাজধানীর অনেক ক্রেতাই গিয়েছেন হযরতপুর হাটে। কেউ কিনেছেন মহিষ, কেউ কিনেছেন গরু-ছাগল। কিন্তু বিপত্তি বেধেছে হাটের ভেতরের ব্যবস্থাপনা নিয়ে। সাধারণ ক্রেতারা বেশির ভাগই ঠকেছেন দালালদের কাছে। দালালদের কারণে পশুর দামও বৃদ্ধি পেয়েছে বলে অভিযোগ ক্রেতাদের।
[201832]
রাজধানীর নাজিরাবাজার থেকে যাওয়া আহমেদুল হক সোনালীনিউজকে বলেন, গরুর কেনার জন্য দামাদামি করার সময় কোথা থেকে একজন লোক এসে গরুর দাম উল্টাপাল্টা বলে দিয়ে চলে যায়। যেখানে নিয়ম গরুর দামাদামি হওয়ার সময় অন্য কেউ কথা বলতে পারবেন না। এই কথার কারণে গরুর দাম অন্তত ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা বাড়িয়ে চায় বিক্রেতারা।
তিনি বলেন, আরেকটি সমস্যা দেখা গেছে এই হাটে। যার গরু সে বিক্রি করছেন না। অন্য কেউ তার গরু বিক্রি করে দিচ্ছে। এই যে যিনি গরু বিক্রি করে দিচ্ছেন তিনি দালাল। গরুটি দাম বাড়িয়ে বিক্রি করে নিজে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। মাঝে ঠকছেন সাধারণ ক্রেতারা। কিন্তু যেহেতু এতদূর থেকে ক্রেতারা এই হাটে এসেছেন তাই বেশি দামে হলেও কিনে নিতে হচ্ছে।
শ্যামলীর বাসিন্দা হাসেম উদ্দিন বলেন, বাচ্চাকে নিয়ে এই হাটে ইউটিউব দেখে এসেছি। এখানে আসলেই প্রচুর পশু রয়েছে। কিন্তু পশুর দাম অনেক বেশি। এই হাটকে নষ্ট করার দায় ইউটিউবারদের। তারা হাটের প্রচার চালিয়েছেন কিন্তু বলেননি এখানে দালালদের এতটা প্রভাব। এই হাটে কাউকে না আসার কথাই বলবো আমি। কারণ হাটের মধ্যে দালালদের কারণে পশু কেনা দায়।
মগবাজারের বাসিন্দা ফারুক আলম বলেন, দালাল অনেক থাকলেও কিছু বিক্রেতার নিজেরাই বিক্রি করছেন পশু। আমি এখানের পশু বেশ কমেই পেয়েছি। যদি দালাল থাকতো তবে এত কমে আমি পছন্দমতো গরু কিনতে পারতাম না।
হাট ইজারার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, এই হাটে ঈদের সময় দালালি হয়। দালালির সঙ্গে জাড়িত এই এলাকার মানুষ। আমরাও যেহেতু এখানে বসবাস করি তাই এই কথা প্রকাশ্যে বলতে পারি না। গরুর বিক্রির সময় বলবে এখানেই আমাদের বাড়ি। এটা আমার পশু। কিন্তু আসলে সে দালালি করছেন। এটা বোঝার উপায় নেই। আর বুঝলেও কিছু করার থাকে না।
সোনালীনিউজ/এলআই/আইএ