কোটাবিরোধী আন্দোলন

যানজটে অচল রাজধানী, ভোগান্তি চরমে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুলাই ৭, ২০২৪, ০৭:০২ পিএম

ঢাকা : ঢাকার বেশ কয়েকটি স্থানে রোববার (৭ জুলাই) দুপুরের পর কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা অবস্থান নেওয়ায় বিভিন্ন সড়কে যান চলাচল থমকে গেছে। একই সময়ে নগরীর দক্ষিণ অংশে শুরু হয় রথযাত্রা। তাতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ঘরের বাইরে বের হওয়া মানুষ। অফিস ছুটির পর পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করেছে।

ডিএমপির অপরাধ নিয়ন্ত্রণ কক্ষে দায়িত্বরত এসআই মনির হোসেন রোববার (৭ জুলাই) বিকাল পৌনে ৫টার দিকে বলেন, ঢাকা মহানগরের শাহবাগ, চানখারপুল ও আগারগাঁও সিগন্যাল বন্ধ রয়েছে এখন। এছাড়া আর কোথাও আন্দোলনের কারণে সড়ক বন্ধ নেই।

রোববার (৭ জুলাই) দুপুর পৌনে ২টার দিকে নীলক্ষেত থেকে মিছিল নিয়ে সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে আসেন ঢাকা কলেজের ছাত্ররা। এরপর বেলা ৩টার দিকে কাছাকাছি দূরত্বে নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা। পরে বিকাল ৪টার আগে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

[227117]

শাহবাগ মোড়ে আসার আগে তারা একটি মিছিল বের করেন। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন রাস্তা ঘুরে টিএসসি হয়ে শাহবাগে এসে শেষ হয়। আন্দোলনকারীদের একটি অংশ ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনেও অবস্থান নিয়েছেন।

ওদিকে চানখারপুল মোড়ও অবরোধ করেছেন একদল শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। এতে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে যানজট তৈরি হয়েছে। এছাড়া আগারগাঁওয়ে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেন বিকাল ৪টার দিকে।

আগারগাঁও সিগন্যালে গিয়ে দেখা যায়, আন্দোলনকারীরা চারদিকের সড়কই আটকে রেখেছেন। যেতে দেওয়া হচ্ছে না বাস, রিকশা, মোটরসাইকেলের মতো কোনো যানবাহনকেই।

সেখানেই কথা হচ্ছিল সিএনজিচালিত অটোরিকশার যাত্রী হেদায়েতুল ইসলামের সঙ্গে। নিটোর (পঙ্গু) হাসপাতালে চিকিৎসক দেখিয়ে তিনি ফিরছিলেন মহাখালীতে, সেখান থেকে বাস ধরে যাবেন টঙ্গী। হেদায়েতুল অটোরিকশা থেকে নেমে বাহনটি ছেড়ে দিতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে যান।

ব্যর্থ হয়ে ফেরার পর হেদায়েতুল বললেন, আমি ওদের অনুরোধ করলাম যে- বাবা, আমার সিএনজিটা ছাইড়া দাও। আমি বেশি হাঁটতে পারি না। ওরা আমারে উল্টো বুঝাইল- সরকার ওদের সঙ্গে কতোটা জুলুম করতাছে।

আমি বললাম বাবারে, আমি তো কিছু করি নাই, এখন তো আমার উপ্রে জুলুম হইতাছে। তখন ওরা বলে, আমাদের সবারই নাকি তাদের দাবি সমর্থন করা উচিত আছিল।

[227105]

তার বাহনটি যানজটের মাঝে আটকে থাকায় সেটি পেছনে ঘুরেও যেতে পারছিল না।

বনানী থেকে নাবিস্কোতে পৌঁছাতে দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় লেগেছে বেসরকারি চাকুরে আরাফাত হোসেনের।

তিনি বলেন, আজকে রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। গাড়ি নড়ছেই না। বনানীর জ্যামে আধা ঘণ্টা বসে থাকার পর হেঁটে মহাখালীতে গিয়েছি। সেখান থেকে রিকশায় করে ভেতরের গলি দিয়ে নাবিস্কোতে পৌঁছেছি।

টিকাটুলি থেকে বেলা আড়াইটায় শুরু হয় রথরাত্রা। এ কারণে সেখানকার সড়কে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়।

টিকাটুলি থেকে বনানীতে যাওয়ার জন্য ৪০ মিনিট অপেক্ষা করে রাইড শেয়ারের বাইকে রওনা হন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী তাসফিয়া আহমেদ।

তিনি বলেন, পুরা রাস্তায় এখানে বন্ধ করে রাখছে। যাওয়ার কোনো ওয়ে নাই। অনেক কষ্টে একটা বাইক পেয়েছি। কিন্তু রাস্তার যে অবস্থা, জানি না কতক্ষণে পৌঁছাব।

ধানমন্ডি থেকে মিরপুরগামী সড়কেও যানবাহনের প্রচণ্ড চাপ দেখা গেছে।

ল্যাবএইড থেকে আমতলীর উদ্দেশে রওনা হয়ে তীব্র যানজটে পড়ার কথা জানিয়েছেন হালিম সরকার।

তিনি বলেন, আমি পান্থপথের সিগন্যালে অনেকক্ষণ ধরে আটকা। সড়কে নিশ্ছিদ্র যানবাহনের সারি। তীব্র যানজট ল্যাবএইড, বেপজা সংলগ্ন এলাকায়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মেহেদী হাসান রোববার সকালেই সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, নগরে যানজট হতে পারে। কারণ বিকাল ৩টায় স্বামীবাগ আশ্রম থেকে রথযাত্রা বের হয়ে মতিঝিল, গুলিস্তান হয়ে আবার সেখানে গিয়ে শেষ হবে।

নগরবাসীকে হাতে সময় নিয়ে বের হতে অনুরোধ জানিয়েছিলেন তিনি।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশ বাতিল করে পরিপত্র জারি করে সরকার।

ওই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন। আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ৫ জুন হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়।

ওইদিনই রায় প্রত্যাখান করে ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নতুন করে আন্দোলন শুরু করেন।

‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের একটি দল ঢাকার শাহবাগের মোড়ে আন্দোলন করছেন গত ১ জুলাই থেকে। তাদের পূর্বঘোষিত রোববারের ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঢাকার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে।

এমটিআই