ডাকাত আতঙ্কে অসহায় ঢাকা

নির্ঘুম রাতে দলবেঁধে পাহারা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: আগস্ট ৮, ২০২৪, ১১:৫৭ এএম

ঢাকা : সরকার পতনে পুলিশ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার পর ডাকাত আতঙ্কে বুধবারও নির্ঘুম রাত কেটেছে ঢাকার অনেক এলাকার বাসিন্দাদের।

ঢাকার এ মাথা থেকে ও মাথা, উত্তরা থেকে মোহাম্মদপুর পর্যন্ত এ আতঙ্ক ছড়িয়েছে। রাতভোর ফেইসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট লিখে, লাইভ করে নিজেদের নিরাপত্তা চেয়েছেন আতঙ্কিত বাসিন্দারা। আবার মোহাম্মদপুর, উত্তরার অনেক এলাকায় দল বেঁধে পাহারা দিয়েছেন এলাকাবাসী।

সেনানিবাস সংলগ্ন ইসিবি চত্বরসহ বিভিন্ন এলাকায় কয়েকজনকে সেনাবাহিনী আটক করেছে বলে খবর ছড়িয়েছে। তবে তা নিশ্চিত করা যায়নি।

[229152]

মোহাম্মদপুরের বসিলার বাসিন্দা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক নাজভী ইসলাম জানান, মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) রাতেও তাদের এলাকায় ডাকাত আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। মসজিদের মাইকে বারবার ঘোষণা দিয়ে সবাইকে সজাগ থাকতে বলা হচ্ছিল।

ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার রাতে এলাকাবাসী দল বেঁধে লাঠিসোঁটা হাতে রাস্তায় পাহারা দিতে নেমে যান। তাদের সঙ্গে স্থানীয় মাদ্রাসার শখানেক ছাত্রও এলাকা পাহারা দিতে নামে। সারারাত পাহারা দিয়ে ভোরে তারা ঘরে ফিরে যান।

মোহাম্মদপুরের চানমিয়া হাউজিংয়ের বাসিন্দা জাকিরুল ইসলাম বলেন, তাদের হাউজিংয়ের ফটকগুলোতে পাহারা বসানো হয়েছিল বুধবার (৭ আগস্ট) রাতে। তবুও আতঙ্কে লোকজন ঘুমাতে পারেনি।

ডাকাতের আতঙ্ক ছড়িয়েছে ধানমণ্ডি, শংকর ও মিরপুর এলাকতেও। মিরপুর ১৪ নম্বরের সরকারি কর্মকর্তাদের একটি আবাসিক এলাকার বাসিন্দা চিকিৎসক আবির হোসেন জানান, তাদের হাউজিং কমপ্লেক্সের ভেতরে ডাকাতরা ঢুকে পড়েছিল বলে খবর ছড়িয়ে পড়লে সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।

[229153]

হাউজিংয়ের পাশে একটি ভবনে মুক্তিযোদ্ধা ও একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহতদের আবাসনের ব্যবস্থা করেছিল আগের সরকার। সেখানে হামলা হচ্ছে বলে খবর ছড়ালে আতঙ্ক আরও বেড়ে যায়।

রাত ৩টার দিকে নিজের ফেইসবুক অ্যাকাইন্ট থেকে লাইভে এসে সাহায্য চান অভিনেত্রী রুকাইয়া জাহান চমক। উত্তরার প্রিয়াংকা রানওয়ে সিটিতে ‘ডাকাতের হামলার’ খবর দিয়ে তিনি সাহায্য চাইছিলেন।

চমক বলেন, ভবনের বাসিন্দারা যার হাতে যা আছে দা-বটি-লাঠি তাই নিয়ে নিচে নেমেছেন ডাকাত মোকাবেলা করতে। তারা সেনাবাহিনীকে ফোন করেও পাচ্ছেন না।

তিনি সেনাবাহিনীর টহল দলকে সেখানে যাওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করেন।

মিরপুর সেনানিবাস সংলগ্ন ইসিবি চত্বরে ডাকাতরা একটি ভবনে হামলা করেছে বলে অনেকে ফেইসবুকে লাইভ ভিডিও করতে থাকেন। ভিডিওগুলোতে শুধু হইচই আর সেনা টহলগাড়ির সাইরেনের শব্দ শোনা যাচ্ছিল।

ডাকাতরা হামলা করেছে বা আসছে– রাতভোর ফেইসবুকে এমন পোস্ট দিয়েছেন অনেকে। আবার একযোগে ঢাকা শহরে এত ডাকাত কোত্থেকে এল, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। এটা নিছকই আতঙ্ক কি-না সে প্রশ্নও তারা করছেন।

[229151]

আবার মোহাম্মদপুরে এলাকা পাহারা দিতে বের হওয়া দুটি পৃথক দল পরস্পরকে ডাকাত ভেবেও হইচই করেছে বলে জানিয়েছেন মাসুম সারোয়ার নামে একজন ব্যাংক কর্মকর্তা।

পুলিশের বিশেষায়িত সন্ত্রাস দমন ইউনিট এটিইউ’র এসপি ছানোয়ার হোসেনও রাত জেগে ছিলেন। ভোর ৫টায় নিজের ফেইসবুক পেইজে তিনি লেখেন, আজ রাতে ডাকাত ইস্যুতে প্রিয়জন কিংবা পরিচতজনদের থেকে শতাধিক হেল্প কল/টেক্সট পেয়েছি যা রীতিমত ভয়ংকর একটি অভিজ্ঞতা।

এই মুহূর্তে সেনা টহল টিমের নম্বর দেওয়া ছাড়া আমার পক্ষে কিছুই করা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু অধিকাংশেরই বক্তব্য, নম্বর বিজি পাচ্ছে। হয়ত সবাই একই সাথে কল করায় এমনটি হচ্ছে। আজ ঘটনাগুলো মোহাম্মদপুর, বসিলা, ধানমন্ডি, মিরপুর, ইসিবি চত্তর এবং উওরার দিকে বেশি হচ্ছে। 'বেড়ী বাঁধ' ডাকাতদের প্রবেশ পথ বলে মনে হচ্ছে। আবার, ঢাকার অভ্যন্তরীণ সিজনাল লুটেরা গ্যাং বা ডাকাতও হতে পারে।

[229150]

অচিরেই পুলিশ কাজে ফিরবে আশা করে ছানোয়ার লিখেছেন, যাই হোক, মানুষের মধ্যে মারাত্মক 'নিরাপত্তা ভীতি' লক্ষণীয়। খুব অসহায় বোধ করছি। সুদীর্ঘ চাকরিজীবনে এমনটি কখনও হয়নি যে কাউকে পুলিশি সেবা প্রদান করতে পারিনি। তবে খুব শীঘ্রই ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। শুধু পুলিশের মাঝ থেকে 'নিরাপত্তা ভীতি'টা দূর করে দিন।

এমটিআই