ঢাকা: ধংসস্তুপে পরিণত হওয়া দেশের সকল থানা যখন পুলিশশূণ্য। তখন ট্রাফিক পুলিশেরও সংকট দেখা যায়। রাস্তায় যখন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় ঠিক তখনই এগিয়ে আসেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
কোনো প্রকার স্বার্থ ছাড়াই দেশ গড়ার কাজে নেমে পড়েন তারা। রোদ-বৃষ্টির মধ্যে হাতে লাঠি, মুখে বাঁশি নিয়ে মোড়ে মোড়ে শুরু করেন ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ।
রাতে নিজ নিজ এলাকায় দল গঠন করে চোর-ডাকাত তাড়ানোর দায়িত্ব নিয়ে সাধারণ মানুষদের শান্তিতে ঘুমাতেও সহায়তা করছেন।
এই অবস্থায় দেশের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনগুলোও শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। কেউ দিচ্ছেন পানির বোতল, কেউ দিচ্ছেন খাবার আবার কেউ দিচ্ছেন ছাতা। সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
তাদের মধ্যে অন্যতম সাজ্জাদুর রহমান শুভ, মোসাদ্দেক বিল্লাহ সুজন, তানভির উদ্দিন শিকদার, এম এইচ সিয়াম, নাবিদ উদ্দিন ও নজরুল ইসলাম।
এসময় সাজ্জাদুর রহমান শুভ জানান, আন্দোলনের ফলে আমরা নতুন দেশ পেয়েছি যাকে আমরা বলছি বাংলাদেশ ২.০। তরুণ্যের এ নতুন বাংলাদেশে স্বাধীনতা তো এসেছে, কিন্তু আমাদের এ স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে। যার যার জায়গা থেকে আমাদের কাজ করতে হবে।
তিনি আরও যোগ করেন, আমরা এ মুহূর্তে ঢাকাসহ বেশ কিছু এলাকায় কাজ করছি। সাধারণ ছাত্র-জনতা মিলিত হয়ে ট্রাফিক পুলিশ কন্ট্রোলিং এর কাজ করছি। এছাড়া আন্দোলন চলাকালীন সময়ে শহরে যে ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে, অপরিচ্ছন্নতা হয়েছে আমরা সে সব পরিষ্কার শুরু করেছি। এছাড়া দেয়ালে দেয়ালে যে রাজনৈতিক পোস্টার, অনাকাঙ্ক্ষিত লেখা ছিলো, সেগুলো আমরা নতুন করে রঙ তুলি দিয়ে রাঙিয়েছি, এ শহরের দেয়াল এখন থেকে তারুণ্যের কথা বলবে। বিজয়ের কথা বলবে।
মোসাদ্দেক বিল্লাহ সুজন বলেন, এই ছাত্র-জনতা দিন-রাত পরিশ্রম করে রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করছে, পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব পালন করছে যতটা সম্ভব আমরা তাদের খাবারের ব্যবস্থা করেছি। রোদ-বৃষ্টি থেকে শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে কিছু ছাতা দিয়েছি।
তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনগুলি এগিয়ে আসলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব পালন করতে সহজ হবে।
এসময় তানভির উদ্দিন শিকদার জানান, এই ছাত্ররা আমাদের অনুপ্রাণিত করে, সাহস যোগায়। এই দেশটা তরুণদের হাত ধরেই সামনে এগিয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস। একবার ভাবেন তো, এই যে সাধারণ ছাত্র-জনতা, তারা যে রাস্তাঘাটে কাজ করছে, এর বিনিময়ে কিন্তু কোনো টাকা পয়সা পাচ্ছে না। তবুও কেন করছে? দেশের স্বার্থে। আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে, এক সাথে কাজ করতে হবে।
ছাত্রদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এই দেশ আমার, এই দেশ আমাদের। যুদ্ধে জয় ছিনিয়ে আনার জন্য সৈনিকদের পাশে থাকা যেমন প্রয়োজন ঠিক তেমনি যুদ্ধে জয়লাভের পর দেশকে ঢেলে সাজানোর জন্যও যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসা উচিৎ। সাধারণ ছাত্র-জনতার পক্ষে ছিলাম আছি থাকবো।’
দেশ গড়তে শুধু শিক্ষার্থীদের কাজ করলে হবে না। তাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সকল শ্রেণী পেশার মানষকেই এগিয়ে আসতে হবে। সবার অংশগ্রহণেই ফের ঘুরে দাঁড়াবে সোনার বাংলাদেশ। যেখানে থাকবে না কোনো দুর্নীতি-চাঁদাবাজি। এমন বাংলাদেশ চায় সবাই।
এআর