ঢাকা : ইসলাম ধর্মের পাঁচটি স্তম্ভের একটি হচ্ছে যাকাত। মূলত রমজান মাসেই সাধারণত মানুষ যাকাত প্রদান করে। কিন্তু যাকাত আসলে কতটা দিতে হয়, অর্থাৎ মানুষের স্থাবর সম্পত্তি না অস্থাবর সম্পত্তি, নাকি স্থাবর-অস্থাবর উভয়ের ওপরেই এটা ধার্য?
কেবল এক বছরের বেশি সময় ধরে সঞ্চিত মূল্যবান জিনিসপত্রের ওপর, নাকি ব্যাংকে রাখা টাকা কিংবা সঞ্চয়পত্রের মূল্য নির্ধারণ করে যাকাত নির্ধারণ করতে হবে?
চলুন জেনে নেয়া যাক-
যাকাত কী : ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে যাকাত অন্যতম। ইসলামের নবী হযরত মোহাম্মদ যখন ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে মদিনায় গিয়ে ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা চালু করেন, তখন সে রাষ্ট্রে যাকাত ব্যবস্থা চালু হয়।
মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন শরীফে যাকাত সম্পর্কে নির্দেশনা দেয়া আছে।
কার ওপর যাকাত ফরয : অনেকের মধ্যে ধারণা আছে, নিজের বা পরিবারের অধিকারে থাকা মূল্যবান দ্রব্যাদি যেমন স্বর্ণ-রৌপ্যালঙ্কার, দামী রত্ন বা এ ধরনের জিনিস থাকলেই কেবল যাকাত দিতে হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের যাকাত ফাণ্ড পরিচালক মোহাম্মদ হারুনুর রশীদ বলেছেন, ব্যাপারটি তেমন নয়।
তিনি বলেছেন, হাতে গচ্ছিত নগদ অর্থ, শেয়ার সার্টিফিকেট, প্রাইজবন্ড ও সার্টিফিকেটসমূহ, স্বর্ণ-রৌপ্য, মূল্যবান ধাতু ও সোনা-রুপার অলংকার, বাণিজ্যিক সম্পদ ও শিল্পজাত ব্যবসায় প্রতিশ্রুত লভ্যাংশ, উৎপাদিত কৃষিজাত ফসল, পশু সম্পদ—৪০টির ওপরে ছাগল বা ভেড়া, এবং ৩০টির ওপরে গরু-মহিষ ও অন্যান্য গবাদি পশু, খনিজ দ্রব্য, প্রভিডেন্ট ফাণ্ড - এসব কিছুর ওপরই যাকাত দিতে হবে, কিন্তু সেটা নিসাব অনুসারে।
নিসাব একটি ইসলামি শব্দ। এর মানে হচ্ছে দৈনন্দিন প্রয়োজন পূরণ ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী বাদ দেয়ার পর সাড়ে বায়ান্ন তোলা পরিমাণ রূপা অথবা সাড়ে সাত তোলা পরিমাণ স্বর্ণ থাকলে অথবা এর সমমূল্যের ব্যবসায়িক পণ্যের মালিকানা থাকলে তাকে যাকাতের নিসাব বলে।
হারুনুর রশীদ বলেছেন, নিসাবের মালিক হবার এক বছর পূর্তির পর যাকাত ফরয হয়।
তিনি জানিয়েছেন, ইসলাম ধর্মের নিয়ম অনুযায়ী যেসব সম্পদের ওপর যাকাত দিতে হয়না এমন কিছু বিষয় নির্দিষ্ট করা আছে।
এর মধ্যে রয়েছে- বসবাসের জন্য নির্মিত ঘর, ঘরের ব্যবহার্য আসবাবপত্র ও অন্যান্য দ্রব্য, চাষাবাদে ব্যবহৃত পশু, কাঁচা সবজি ও ফলের যাকাত নেই।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিধানে যাকাত দিতে হবে না এমন জিনিসের তালিকায় রয়েছে জমি, মিল-ফ্যাক্টরি, ওয়্যার হাউজ, গুদাম, দোকান, বাড়ী-ঘর, পোশাক, এক বছরের কম বয়েসী গবাদি পশু, চলাচলের যন্ত্র ও গাড়ী, সরকারি মালিকানাধীন নগদ অর্থ, স্বর্ণ-রৌপ্য এবং অন্যান্য সম্পদ।
কিভাবে যাকাতের পরিমাণ নির্ধারিত হবে : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সুরাইয়া আক্তার বলেছেন, কোন ব্যক্তির পুরো সম্পত্তি যার অর্থ নির্ধারণ করা যায়, সেটি যদি এক বছরের বেশি সময় ধরে তার অধিকারে থাকে, তাহলে সেই সম্পদ ও সম্পত্তির ওপর যাকাত দিতে হবে। এই সম্পদের আড়াই শতাংশ হচ্ছে তার যাকাত।
তিনি বলছেন, ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, শেয়ার মার্কেটে করা বিনিয়োগ যা এক বছরের বেশি সময় ধরে আমানতকৃত আছে এবং সেখান থেকে মুনাফা আসছে, এবং সঞ্চয়পত্র---এই সব ধরনের অর্থনৈতিক অধিকারের ওপর যাকাত দিতে হবে।
আর যাকাতের পরিমাণ হবে দৈনন্দিন প্রয়োজন পূরণের পর সাড়ে বায়ান্ন তোলা পরিমাণ রূপা অথবা সাড়ে সাত তোলা পরিমাণ স্বর্ণ থাকলে অথবা এর সমমূল্যের ব্যবসার মালিকানা থাকলে মোট সম্পদের আড়াই শতাংশ হারে যাকাত দিতে হবে।
কারা যাকাত পাওয়ার যোগ্য : ইসলাম ধর্মের বিধান অনুযায়ী, আট ধরনের মানুষকে যাকাত প্রদান করা যাবে।
অধ্যাপক সুরাইয়া আক্তার বলেছেন, এর মধ্যে রয়েছেন ভিক্ষুক, মিসকিন মানে যিনি অভাবগ্রস্ত কিন্তু কারো কাছে সাহায্য চাইতে পারেন না, ঋণগ্রস্থ ব্যক্তির ঋণমুক্তির জন্য, যাকাত আদায়কারী কর্মচারী, নওমুসলিম, আল্লাহর পথে এবং মুসাফির।
এর বাইরে দাসমুক্তির জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যায়, কিন্তু দাস প্রথা বিলুপ্ত হয়েছে বহু বছর। ফলে সেটি এখন আর কার্যকর নয়।
সরকারের যাকাত ফান্ড : বাংলাদেশ সরকারের একটি যাকাত ফান্ড আছে, যা ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
এর মাধ্যমে দেশের ৬৪ জেলাতেই যাকাত সংগ্রহ করে, সরকারি বিধান অনুযায়ী সংগৃহীত অর্থের ৭০ শতাংশ সংশ্লিষ্ট জেলাতেই ব্যয় করা হয়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এর যাকাত ফান্ডের মাধ্যমে ১৯৮২ সাল থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে নয় লাখ মানুষকে প্রায় ৩৫ কোটি টাকার যাকাত বণ্টণ করা হয়েছে।
ব্যক্তিকে যাকাত দেয়ার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানেও যাকাত দেয়া যায়।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশে সরকারিভাবে সংগ্রহ করা যাকাত যাকাত বোর্ড শিশু হাসপাতাল, সেলাই প্রশিক্ষণ এমন নানা খাতে খরচ করা হয়। সূত্র : বিবিসি বাংলা
সোনালীনিউজ/এমটিআই