বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করা ইমানি দায়িত্ব

  • ধর্মচিন্তা ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুলাই ৩, ২০২৪, ০১:০০ পিএম

ঢাকা : বর্ষা আসে, সঙ্গে আসে বন্যা। বন্যা নিয়ে প্রায় প্রতি বছরই ভোগান্তির চিত্র চোখে পড়ে। বর্তমানে সিলেট, নেত্রকোনাসহ দেশের কয়েকটি জেলা বন্যায় প্লাবিত হওয়ায় সেখানকার জনজীবন বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। বন্যায় মানুষ ও পশুপাখি ভয়াবহ দুর্গতির আশঙ্কায় রয়েছে। দুই বছর আগে ২০২২ সালে সিলেট ও সুনামগঞ্জের মানুষ মুখোমুখি হয়েছিল শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায়। দুই বছর পর ঠিক একই সময়ে পর পর দুবার ভয়াবহ বন্যার মুখোমুখি তারা। জেলার অধিকাংশ উপজেলা এখন পানির নিচে তলিয়ে গেছে বলে জানা গেছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে হু হু করে বাড়ছে পানি। প্লাবিত হয়েছে সিলেট নগরসহ বেশ কয়েকটি উপজেলা।

কোরআনে বলা হয়েছে, জল ও স্থলে মানুষের ওপর যত বিপর্যয় আসে তা তাদের কৃতকর্মের ফল। আজ সমাজে বেহায়াপনা, অন্যায় ও পাপাচার বেড়ে যাওয়ায় আল্লাহতায়ালা মহামারী, রোগব্যাধি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাধ্যমে সতর্ক করছেন। আমাদের এসব দুর্যোগ থেকে মুক্তি পেতে তওবা করতে হবে। ধৈর্য ধরে গুনাহমুক্ত জীবন গড়তে হবে। বন্যাদুর্গত মানুষদের সর্বাত্মকভাবে সাহায্য করা ইমানি দায়িত্ব। এটা আল্লাহর আদেশ। এ অবস্থায় সব ভেদাভেদ ভুলে আমাদের দুর্গত জনগণকে রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে।

[226796]

বায়ু আল্লাহর সৃষ্টি, আল্লাহরই হুকুমে তা প্রবাহিত হয়। পানি আল্লাহর সৃষ্টি, আল্লাহরই হুকুমে তা বর্ষিত হয়। বায়ু ও পানি ছাড়া যেমন মানুষের জীবন অচল তেমনি এই বায়ু ও পানিই হতে পারে জীবন নাশের কারণ। আল্লাহর হুকুমের কাছে মানুষ কত অসহায়। তবু মানুষ গর্ব করে, অহঙ্কারে লিপ্ত হয়। এই অহঙ্কারেরই একটি দিক হলো, বিপদাপদেও সচেতন না হওয়া, আল্লাহমুখিতা অবলম্বন না করা। প্রকৃতি আল্লাহর সৃষ্টি, আল্লাহরই হুকুমে তা পরিচালিত। কাজেই আল্লাহর দিকে রুজু করা এবং তার কাছে মুক্তির উপায় অন্বেষণ করা মুমিনের কর্তব্য।

ইসলাম মানবতার ধর্ম। এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই। মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপদগ্রস্ত হলে তাদের পাশে দাঁড়ানো, বিপদ মুক্তির জন্য সাহায্য করা ইসলামের শিক্ষা। তাদের দুর্দিনে আর্থিক সহায়তা, খাবার-দাবার, ত্রাণ, পুনর্বাসন ও চিকিৎসা সেবায় এগিয়ে আসা ইমানের দাবি। নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতের মতো অসহায় মানুষের সাহায্য করাও ইবাদত। আল্লাহতায়ালা মুমিনদের একটি দেহের মতো বানিয়েছেন। দেহের কোনো অংশ আক্রান্ত হওয়া মানে পুরো দেহ আক্রান্ত হওয়া। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মুমিনদের উদাহরণ হলো, তাদের পারস্পরিক ভালোবাসা, দয়া ও সহানুভূতির দিক থেকে একটি মানবদেহের মতো। যখন তার একটি অঙ্গ আক্রান্ত হয়, তখন তার পুরো দেহ ডেকে আনে তাপ ও অনিদ্রা।’ (সহিহ মুসলিম)

[226651]

যাদের সামর্থ্য রয়েছে তাদের প্রতি অসহায় মানুষদের সাহায্য করতে পবিত্র কোরআনে নির্দেশ রয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনরা! আমি তোমাদের যে জীবনের উপকরণ দিয়েছি, তা থেকে তোমরা ব্যয় করো সেদিন আসার আগেই, যেদিন কোনো বেচাকেনা, বন্ধুত্ব ও সুপারিশ থাকবে না।’ (সুরা বাকারা ২৫৪)

আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, দয়াশীলদের ওপর করুণাময় আল্লাহ দয়া করেন। তোমরা দুনিয়াবাসীকে দয়া করো, তাহলে যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদের ওপর দয়া করবেন। (আবু দাউদ)

এ ব্যয়, দান ও দয়া হতে হবে নিঃস্বার্থভাবে, অভাবী ও বিপন্ন মানুষের কাছ থেকে কোনো রকম প্রতিদানের আশা ছাড়া, কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। আল্লাহতায়ালা এ দিকে ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ‘তারা আল্লাহর প্রেমে অভাবগ্রস্ত এতিম ও বন্দিদের খাবার দান করে। তারা বলে, শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আমরা তোমাদের খাবার দান করি এবং তোমাদের কাছে কোনো প্রতিদান বা কৃতজ্ঞতা কামনা করি না।’ (সুরা দাহর ৮-৯)

মানুষের বিপদে এগিয়ে এসে তার জন্য খরচ করাকে মহান আল্লাহ বিনিয়োগ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আর তা তিনি বহুগুণ ফেরত দেওয়ার ওয়াদা করেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘কে আছে, যে আল্লাহকে উত্তম ঋণ প্রদান করবে? আল্লাহ তা তার জন্য বহুগুণে বৃদ্ধি করবেন। আল্লাহই জীবিকা সংকুচিত ও সম্প্রসারিত করেন। আর তোমরা তারই নিকট প্রত্যাবর্তন করবে।’ (সুরা বাকারা ২৪৫) এ আয়াতে আল্লাহকে ঋণ দেওয়ার অর্থ হলো তার পথে খরচ করা। গরিব, অসহায় ও বিপদগ্রস্তদের সাহায্য করা। পরকালে এর বিনিময় দেওয়া হবে সওয়াবরূপে।

রাসুল (সা.) সর্বদা অসহায় ও বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াতেন, তাদের প্রতি সহযোগিতা ও সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিতেন। মদিনার আনসার সাহাবিরা মুহাজির সাহাবিদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। সাহাবায়ে কেরাম, তাবেইন, তবে তাবেইনরা আল্লাহর রাসুলের এ আদর্শ লালন ও পালন করেছেন। পরবর্তী সুলতানি আমলের রাজা-বাদশাহরাও অসহায় মানুষের জন্য বিভিন্ন সরাইখানা, আশ্রয়কেন্দ্র, হাসপাতাল ইত্যাদি নির্মাণ করেছিলেন। অতএব রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর শিক্ষা ধারণ করে বন্যাকবলিত মানুষের পাশে যার যার সামর্থ্যানুযায়ী এগিয়ে আসা আমাদের দায়িত্ব ও জাতীয় কর্তব্য। বন্যাদুর্গতের পাশে দাঁড়ানোর এক বড় উপায় হচ্ছে, বন্যার পানি সরে যাওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করা। এ বিষয়ে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগেরও প্রয়োজন আছে। ব্যক্তিগতভাবেও অনেকে এই উদ্যোগ নিতে পারেন। দেশে এমন অনেক বিত্তবান ব্যক্তি আছেন, যারা ইচ্ছা করলেই শত শত মানুষের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে পারেন। কাজেই সবাই সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসলে লাখ লাখ দুর্গত মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘব হতে পারে। আল্লাহতায়ালা সবাইকে নেক কাজের তাওফিক দান করুন। আমিন। সূত্র : মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ

এমটিআই