কমছে পৃথিবীর গতি, দীর্ঘ হচ্ছে দিন

  • বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২, ২০২৩, ০১:২৯ পিএম

ঢাকা : চীনের তৈরি থ্রি গর্জেস বাঁধের কারণে পৃথিবীর গতি কিছুটা কমেছে। মূলত বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে সহায়তা করার জন্য চীনের ইয়াংতসে নদীকে দমন করাই মূল লক্ষ্য।

১৯১৯ সালে প্রথম এই বাঁধের ধারণা প্রস্তাব করা হয়। এর ৭৫ বছর পর ১৯৯৪ সালে এই বাঁধের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০০৬ সালে সমাপ্ত হয় বাঁধের কাজ এবং ২০১২ সাল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়। এই বাঁধের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২২৫০০ মেগাওয়াট যা বাংলাদেশের সব কেন্দ্র মিলিয়ে মোট দাবীকৃত উৎপাদন ক্ষমতার চেয়েও প্রায় একতৃতীয়াংশ বেশি। কংক্রিট এবং ইস্পাতে তৈরি বাঁধটি দৈর্ঘ্যে ২৩৩৫ মিটার এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে এর উচ্চতা ১৮৫ মিটার। এই বাঁধের মাধ্যমে যে জলাধার তৈরি হয়েছে তার গড় দৈর্ঘ্য ৬৬০ কিলোমিটার এবং গড় প্রস্থ ১.১২ কিলোমিটার।

এই বাঁধের মাধ্যমে ৩৯ ট্রিলিয়ন কেজি পানি সমুদ্র সমতল থেকে ১৭৫ মিটার উপরে সঞ্চিত হয় যা পৃথিবীর ভরকে খুব সামান্য পরিমাণে হলেও কেন্দ্রের দিক থেকে পরিধির দিকে ঠেলে দেয়। নাসার গবেষকরা হিসেব করে বের করেছেন এই পরিমাণ ভরের স্থানান্তরের কারণে পৃথিবীর আহ্নিক গতি কমে গেছে ৬০ মাইক্রোসেকেন্ড! এই বাঁধের ফলে পৃথিবীর বিষুব অঞ্চল আগের চেয়ে কিছুটা গোল হয়েছে এবং মেরুঅঞ্চল কিছুটা চ্যাপ্টা হয়েছে যা খুব সামান্য। এই বাঁধের পানির কারণে মেরুর অবস্থান প্রায় ২ সেন্টিমিটার সরে গেছে।

পৃথিবীর অন্যান্য বস্তুর ওঠানামার কারণেও ঘূর্ণন গতির পরিবর্তন ঘটে। যেমন একটি সুউচ্চ ভবন নির্মাণ করলেও ভূ-পৃষ্ঠ থেকে নির্মাণ সামগ্রী পরিধির দিকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এভাবে সমগ্র একটি শহর সার্বিকভাবে ঘূর্ণনে কিছুটা প্রভাব তৈরি করতে পারে। এর পরিমাণ খুব সামান্য হলেও তা হিসেব করে বের করা সম্ভব।

[205839]

পৃথিবীর আহ্নিকগতি হ্রাসের সাথে সাথে এর নির্মাণ দেশের জন্য যেন নতুন সমস্যাগুলির একটি স্মারকলিপি তৈরি করেছে। বাঁধের অস্তিত্ব রক্ষায় ডুবে যাবে শত শত শহর, স্থানান্তরিত হবে ১.৩ মিলিয়ন মানুষ। পুনর্বাসনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বনজনিত ভূমি। থ্রি গর্জেস বাঁধ এলাকা প্রত্নতাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সমৃদ্ধ। ফলে এটি হারিয়ে যাচ্ছে কালের অতলগহ্বরে।

এই বাঁধ নির্মাণের ফলে অনেক উদ্ভিদ ও প্রাণীর বিপত্তি ও বিলুপ্তির সৃষ্টি হয়। থ্রি গর্জেস অঞ্চলটি জীব বৈচিত্র্য হটস্পট বলে বিবেচিত হয় ফলে এর দরুন বিপর্যয় যেন চোখে পড়ার মতো। চীনের নদী ডলফিন যা ইয়াংজেজ নদীর নেটিভ এবং ইয়াংৎসে ফিনলেস পিপোজাইজ পৃথিবীর সবচেয়ে বিপন্ন সিট্যাসিয়ানগুলির মধ্যে দুটি হয়ে উঠেছে।

বাঁধের সমস্যা থেকে বিগত সময়ে প্রদেশের মাঝেও দ্বন্ধ দেখা যায় তবে এমন মহা বিপর্যয় এই প্রথমেই দেখা গেছে। বাধের বিভিন্ন ভূমিকার কারণে কোন রাষ্ট্র সুবিধা পেলেও বড় আকারে ক্ষতি সাধিত হচ্ছে পরিবেশের তা যেন চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে গেলো থ্রি গর্জেস।

এমটিআই