ঢাকা: আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করা সব স্মার্টফোনেই এয়ারপ্লেন মোড আছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, উড়োজাহাজে ভ্রমণ করার সময় স্মার্টফোনটি এয়ারপ্লেন মোডে রাখেন কি?
সাধারণত এয়ারপ্লেন মোডে স্মার্টফোন সমস্ত নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। উড়োজাহাজে যেহেতু এমনিতেই ফোনে নেটওয়ার্ক থাকে না। তাই অনেকেই আলাদা করে নিজের ফোন এয়ারপ্লেন মোডে রাখেন না বা রাখার প্রয়োজন মনে করেন না।
কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উড়োজাহাজে ফোন এয়ারপ্লেন মোডে রাখাটা জরুরি। কারণ, তা না হলে আকাশে ওড়াকালীন ফোনের ইলকট্রোম্যাগনেটিক সিগন্যাল ক্রমাগত নেটওয়ার্কের খোঁজ করবে এবং উড়োজাহাজের নিজস্ব ইলকট্রোম্যাগনেটিক প্রযুক্তির কাজে বাধা সৃষ্টি করবে।
আপনার মনে হতেই পারে, তাতে কী আর এমন অসুবিধা হবে? একটি ফোনের সিগন্যাল কী এমন ক্ষতি করতে পারে! একটি ফোনের সিগন্যাল বিশেষ কোনো সমস্যা তৈরি না করলেও অধিকাংশ যাত্রীর ফোনের ইলকট্রোম্যাগনেটিক সিগন্যাল যদি একসঙ্গে নেটওয়ার্কের খোঁজ করতে থাকে তবে তা উড়োজাহাজের যোগাযোগ এবং দিকনির্ণয় করা প্রযুক্তিকে প্রভাবিত করতে পারে। এর ফলে ঝুঁকিও তৈরি হতে পারে বলে জানাচ্ছেন অ্যাভিয়েশন ট্রেনিং ইন্ডিয়ার প্রশিক্ষক রাজা গোপাল।
[241336]
তিনি বলছেন, “আধুনিক উড়োজাহাজ ওই ধরনের ঝুঁকি কমাতে পারে ঠিকই। তবে তারও একটা সীমা আছে। একটা প্রমাণ সাইজের উড়োজাহাজে কমপক্ষে দেড়শো যাত্রী থাকেন। সকলেই যদি ভাবেন, একা আমার ফোন আর কী ক্ষতি করবে, তা হলে বিষয়টা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। তখন সঙ্কটজনক পরিস্থিতি তৈরি হবে।”
রাজা গোপাল জানাচ্ছেন, বড় সঙ্কটের ঝুঁকি খুবই কম। তবে তা উড়োজাহাজের স্পর্শকাতর যন্ত্রাংশের ক্ষতি করতে পারে। ককপিটের সঙ্গে গ্রাউন্ড কন্ট্রোলের যোগাযোগ প্রক্রিয়া ব্যাহত করতে পারে।
রাজা গোপাল বলছেন, “বিশেষ করে উড়োজাহাজ ওঠা-নামার সময়ে ফোন এয়ারপ্লেন মোডে রাখা জরুরি। প্লেনের গতি এবং ক্রমাগত বাড়তে থাকা উচ্চতার জন্য ওই সময়ে ফোন বিভিন্ন টাওয়ার থেকে সিগন্যাল নিতে থাকে। প্রতি মুহূর্তে বদলাতে থাকে টাওয়ার। অন্যদিকে, উড়োজাহাজও সেই সময়ে গ্রাউন্ড কন্ট্রোলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করতে থাকে। রেডিও অল্টিমিটারের মাধ্যমে ৪ গিগা হার্টজ রেঞ্জে চলে ওই যোগাযোগ প্রক্রিয়া। যা প্রায় মোবাইলের ফাইভ জি সিগন্যালের সমান। মোবাইলের সিগন্যাল সেই যোগাযোগকে ব্যাহত করতে পারে।”
রাজা গোপালের মতে, “উড়োজাহাজে ফোন এয়ারপ্লেন মোডে রাখাটা আদতে খুব ছোট্ট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কাজ। যারা ভ্রমণ করছেন, তাদের প্রত্যেকের এবং নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবেও এটি করা জরুরি।”
তবে এ ছাড়াও উড়োজাহাজ ভ্রমণে ফোন এয়ারপ্লেন মোডে না রাখলে আরও সমস্যা হতে পারে। হায়দরাবাদের গ্লেনিগলস হাসপাতালের ক্রিটিকাল কেয়ার বিভাগের প্রধান চিকিৎসক মনীন্দ্র বলছেন, “যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টি ছাড়াও ফোন এয়ারপ্লেন মোডে না রাখলে শারীরিক সমস্যাও হতে পারে। উড়োজাহাজে অনেক যাত্রীই কিছুটা উদ্বেগে থাকেন। ফোন থেকে নির্গত ইলকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন মানসিক চাপের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। যা যাত্রীদের উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।”
চিকিৎসকেরা বলছেন, উড়োজাহাজে ভ্রমণের সময় বরং ফোন ব্যবহার না করে বিশ্রাম নিন। হালকা মেজাজের বই পড়তে পারেন। ঘুমাতে পারেন। এমনকি, মেডিটেশনও করার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।
ইউআর