ধর্ষণের বিচারে দীর্ঘসূত্রতা!

বিচারপ্রার্থীদের মাঝে আশার সঞ্চার

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ৯, ২০২০, ১২:০০ পিএম

ঢাকা : ধর্ষণের বিচারে দর্ঘিসূত্রতার কারণে বিচার পেতে অনেক দেরি হয় ভুক্তভোগীর। আবার আসামি পক্ষ যদি প্রভাবশালী হয় তাহলে তো কথাই নেই। উচ্চ আদালতে একের পর আবেদন করে বছরের পর বছর মামলা ঝুলিয়ে রাখে।

তবে আশার হলো সম্প্রতি অতিদ্রুত কয়েকটি ধর্ষণের মামলার রায় হয়। এতে করে বিচারপ্রার্থীদের মাঝে আশার সঞ্চার হয়েছে।

সূত্রমতে, ২০১৫ সালের টাঙ্গাইলের এক শিশু ধর্ষণের মামলায় মেডিকেল, ডিএনএ পরীক্ষা করে সাত মাসে চার্জশিট হলেও মামলাটির এখনো সুরাহা হয়নি। ভিকটিমের সাক্ষ্য সম্পন্ন হয়ে থেমে আছে। সর্বশেষ সাক্ষ্য চলাকালীন উচ্চ আদালতে আবারো ডিএনএ টেস্টের আবেদন করে বিচারিক আদালতের কার্যক্রম স্থগিত করা আছে।

ধর্ষণ মামলার তদন্ত নিয়েও অভিযোগের শেষ নেই। মানবাধিকার সংস্থা ও নারী অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারীরা বলেছেন, বিচারের জন্য আলাদা ট্রাইব্যুনাল থাকলেও তদন্তের ব্যাপারে বিশেষায়িত কোনো ব্যবস্থা না থাকায় পুলিশ অন্য অনেক মামলার সঙ্গে ধর্ষণ বা নারী নির্যাতনের মামলা তদন্ত করে থাকে এবং সেজন্য লম্বা সময় লেগে যায়।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের বিচারকের যে কোনো প্রয়োজনে ছুটিতে যাওয়া মানেই মামলা পিছিয়ে যাওয়া। বদলি বিচারক ছুটিকালীন নতুন করে সাক্ষ্য না নিয়ে কয়েকটা ডেট দিয়ে থাকেন।

যেসব মানবাধিকার সংস্থাগুলো আইনি সহায়তা দিয়ে থাকে তারা বলছে, ছুটিতে যে কোনো চাকরিজীবী যাবেন, এটা তার অধিকার। ফলে যে কোনো কাজে ছুটিতে গেলে এ ধরনের মামলার কাজ যেন থেমে না যায় সেটা রাষ্ট্রকে দেখতে হবে।

তারা এও বলছেন, মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলেও সরকার পক্ষের সাক্ষী হাজির করা নিয়ে চলে টালবাহানা। সাক্ষীর মাঝে আসামি পক্ষ নিত্যনতুন আবেদন নিয়ে হাজির হন, সেগুলো খারিজ করে দেওয়া হলে উচ্চ আদালতে যান।

উচ্চ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে যদি মামলার বিষয়টি প্রসিকিউশন বিশেষ করে ব্রিফ করার সুযোগ পায় তাহলে উচ্চ আদালতে স্টে অর্ডার হওয়ার সুযোগ কম হবে এবং হলেও রাষ্ট্রপক্ষ সেটি তুলে নেওয়ার জন্য উদ্যোগ নিতে পারবে। যদিও অ্যাটর্নি অফিস বলছে কাগজের বাইরে বিচারিক আদালতের প্রসিকিউশনের সঙ্গে কথা বলার কোনো সুযোগ আইনত তাদের নেই।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের কর্মসূচি প্রধান নীনা গোস্বামী বলেন, ‘তদন্ত থেকে শুরু করে মামলার কার্যক্রম পরিচালনা কোনো ক্ষেত্রেই জবাবদিহিতা নেই। ফলে ধর্ষণের শিকার একজন নারী এবং তার পরিবারকে দীর্ঘসূত্রতার ভোগান্তিতে পড়তে হয়। ১০ বছর ধরে তারা প্রায় তিনশটি ধর্ষণের মামলায় আইনি সহায়তা দিচ্ছেন।

কিন্তু বেশিরভাগ মামলারই বিচার শেষ করা যায়নি। যদিও আইনে ছয় মাস বা ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ করার কথা বলা আছে। কিন্তু সেটা কাগজে-কলমেই রয়ে গেছে।

দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি আরো বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা তার অন্যান্য মামলার অনেক কাজের মধ্যে ধর্ষণ মামলাটি নিয়ে অনেকবার সময় নিয়ে হয়তো আদালতে চার্জশিট দিচ্ছেন। ভিকটিমের সাক্ষ্যটাও হয়ে যাচ্ছে।

কিন্তু গোল বাধে যিনি মেডিকেল করেছেন, সেই ডাক্তারের সাক্ষী নিতে হয়, যে ম্যাজিস্ট্রেট জবানবন্দি নিয়েছেন তার সাক্ষ্য নিতে গিয়ে। সরকারি কর্মকর্তা যারা সাক্ষী হন, দিনের পর দিন তারা হাজির হতে পারেন না।

অন্যদিকে প্রসিকিউশনের গাফিলতি তো আছেই। টাঙ্গাইলের ১৩ বছরের শিশু ধর্ষণের মামলা গত ৫ বছর ধরে ঝুলে আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে মামলায় ডিএনএ টেস্ট আগে হয়েছে। কোনো কারণ ছাড়া সেটির সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে এসে আবারো ডিএনএ টেস্ট চেয়ে স্টে অর্ডার নিয়ে রাখার কারণে এখন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে আছে।

প্রসিকিউশন যদি এই বিষয়টি উচ্চ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষকে সঠিকভাবে জানাতে পারত তাহলে হয়তো এমন কিছু নাও ঘটতে পারত। মামলায় কালক্ষেপণের জন্য নানা আবেদন নিয়ে উচ্চ আদালতে যাওয়া ও স্টে অর্ডার চাওয়ার একটা প্রবণতা লক্ষ করা যায়।

যদিও আইনের পদ্ধতিগত কারণে পাবলিক প্রসিকিউটরদের সঙ্গে কোনো মামলা নিয়ে কথা বলার ব্যবস্থা নেই উল্লেখ করেন সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাস গুপ্ত।

তিনি বলেন, হাইকোর্টে শুধু মামলার নথি পাঠানো হয়। সেক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের ডিএজিদের সঙ্গে পিপিদের কোনো যোগাযোগ হয় না। মূলত ডিএজিরা সুপ্রিম কোর্টে রাষ্ট্রপক্ষে এবং পিপিরা অধস্তন আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করে থাকেন। তাই আইন ও সালিশ কেন্দ্রের অভিযোগ এর সঙ্গে মোটেই প্রাসঙ্গিক নয়।

অতিসম্প্রতি বাগেরহাটে ধর্ষণ মামলার রায় ৭ দিনেই দিয়েছেন আদালত। বাংলাদেশে ফৌজদারি কার্যবিধির মামলার রায় দেশে এটিই প্রথম ছিল।

বিচারপ্রার্থীরা বলছেন, ধর্ষণের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ের মামলার রায় যতদ্রুত সম্ভব দেওয়া উচিত। কেননা এ বিষয়টি নিয়ে বিচারপ্রার্থীদের সামাজিকভাবে নানা হেয়প্রতিপন্ন হতে হয়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই