ঢাকা : ঢাকায় হঠাৎ করে কয়েকটি বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল একে অপরকে দায়ী করে বক্তব্য দিয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ধানমন্ডির পার্টি অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে অগ্নিসংযোগের ঘটনার জন্য প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে দায়ী করেছেন।
অন্যদিকে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, বিএনপিকে হেয় প্রতিপন্ন করানোর জন্য সরকারের কোনো কোনো এজেন্ট এ কাজ করে থাকতে পারে বলে তারা মনে করেন।
বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত ঢাকায় নয়টি বাসে আগুন দেয়া হয়। রাতে দেয়া হয় আরেকটি বাসে আগুন। বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনীতিতে আবারো উত্তাপের আভাস মিলছে বলে মনে করা হচ্ছে। এসব ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বেশ কয়েকশ জনকে আসামি করা হয়েছে এবং শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত অন্তত ২০ জনকে আটক করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ওয়ালিদ হোসেন এক সংবাদ সম্মেলন জানিয়েছেন, যাদের আটক করা হয়েছে তাদের মধ্যে কয়েকজনের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত বিতর্কিত সাধারণ নির্বাচনের আগে সর্বশেষ নয়াপল্টনে বিএনপির অফিসের সামনে ও আশেপাশের এলাকায় গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও সংঘাতের ঘটনা ঘটেছিল। এরপর থেকে গত দুই বছরে বাংলাদেশের রাজনীতি ছিল কার্যত শান্ত।
বিএনপিকে দায়ী করছেন ওবায়দুল কাদের : বিএনপিকে লক্ষ্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সেই পুরনো আগুন সন্ত্রাসের পুনরাবৃত্তি, এটা যারা আগে ঘটাতো তারাই আবার ঘটিয়েছে।
গতকালের নাশকতা প্রমাণ করেছে বিএনপি তাদের চিরাচরিত সন্ত্রাসী পথটা পরিহার করতে পারেনি। তাদের নীলনকশা অনুযায়ী পরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাসীরা গতকাল রাজধানীতে নাশকতা চালিয়েছে। রাজধানীতে বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনার সঙ্গে ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনের সম্পর্ক আছে বলে মনে করছেন ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, তারা নির্বাচন নিয়ে খুব হৈচৈ করবে, নির্বাচনে প্রচারণাও করবে, কিন্তু নির্বাচনের দিন কোনো এজেন্ট দেবে না। এজেন্ট বের করে দিয়েছে এই অপবাদ দেবার জন্য।
এদিকে, রাজধানীতে বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনাকে ‘দুঃখজনক এবং ন্যাক্কারজনক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, যখন দেশে কোনো গণতান্ত্রিক সুযোগ থাকে না, তখন এ ধরনের ঘটনা ঘটে। এমন পরিস্থিতিতে দুষ্কৃতিকারীরা এর সুযোগ নেয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ফখরুল বলেন, দেখা যায় যে, এ সরকারের কিছু কিছু অংশ, যারা বিভিন্নভাবে কাজ করে, কেউ কেউ স্যাবোটাজ করার জন্য এ ধরনের ঘটনা ঘটায়। এটাও আমরা অতীতে দেখেছি।
তিনি অভিযোগ করেন, বিএনপিকে হেয় করার জন্য ‘সরকারের কিছু এজেন্ট’ এ ধরনের কাজ করতে পারে। বিএনপি মহাসচিব সন্দেহ করছেন, বাসে অগ্নিসংযোগের পেছনে হয়তো সরকারের কোনো এজেন্ট কাজ করতে পারে। তবে এই এজেন্ট কারা সে সম্পর্কে পরিষ্কার করে কিছু বলেননি ফখরুল।
একটা আন্দোলন যেটা শুরু হতে যাচ্ছে, বা যেটা ধরেন ভালো জিনিসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, ওটাকে স্যাবোটাজ করার জন্য এ ধরনের ঘটনা ঘটায়। এ ঘটনার আমরা তীব্র নিন্দা করছি। বলেন বিএনপি মহাসচিব।
ভোটের ফল বাতিল দাবিতে বিক্ষোভ করবে বিএনপি : ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনে উপনির্বাচনের ফলাফল বাতিল এবং নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ‘মিথ্যা মামলায়’ গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে দুই দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি।
শনিবার (১৪ নভেম্বর) ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এবং রোববার (১৫ নভেম্বর) সারা দেশে জেলা সদরে তাদের প্রতিবাদ সমাবেশ হবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শুক্রবার বিকালে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, গতকাল একেকটা সেন্টারের সামনে ২-৩-৪-৫ শ করে বাইরের থেকে লোকজন এনে দাঁড় করে রেখেছে, যেই যাচ্ছে তাকে বের করে দেয় মেরে। এখানে নির্বাচনের নরমাল যে পদ্ধতি এর কোনো কিছুর সুযোগ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন বলুন আর যারা দেশ চালাচ্ছে তারা রাখেনি। সবচেয়ে বড় কথা পুলিশ এসব অপকর্মে সহযোগিতা করেছে।
আওয়ামী লীগ নানা মিথ্যাচার করবে এই নির্বাচনকে জাস্টিফাই করার জন্য। কিন্তু কোনোভাবে এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
ঢাকায় বাসে অগ্নিসংযোগের পেছনে ‘সরকারের এজেন্টরা’ রয়েছে বলে দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল।
সেখানে এ ঘটনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সহসাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মাশুকুর রহমান মাশুক, নির্বাহী কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন, যুব দলের সভাপতি সাইফুল ইসলাম নীরব ও সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভূইয়া জুয়েল, ছাত্র দলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলসহ যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের নিন্দা জানান তিনি।
একইসঙ্গে গতরাত থেকে রাজধানীতে নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি পুলিশি তল্লাশি ও ‘অনেককে তুলে নেওয়ার’ ঘটনায় উদ্বেগ জানান তিনি।
পুলিশ কী বলছে : ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার এবং মুখপাত্র ওয়ালিদ হোসেন এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় প্রতিটির আলাদা আলাদা মামলা হবে। এখনো পর্যন্ত ঢাকার কয়েকটি থানায় মামলা হয়েছে।
তিনি জানান, যাদের আটক করা হয়েছে তাদের মধ্যে কয়েক জনের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার পরিচয় পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, সংঘবদ্ধভাবে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। সিসি ক্যামরার ফুটেজ সংগ্রহ করে বাকি অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা। সূত্র : বিবিসি বাংলা
সোনালীনিউজ/এমটিআই