ঢাকা : রাজনীতিতে বিএনপি ক্রমশ নিষ্ক্রিয় হয়ে উঠলেও আওয়ামী লীগের কাছে এখনো বিএনপিই তাদের মূল প্রতিপক্ষ। তাই ভেতরে-বাইরে, সভা-সমাবেশে বিএনপির সমালোচনায় মুখর থাকেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
আওয়ামী লীগের কাছে বিএনপি নেতৃত্বশূন্য হলেও তাদের কর্মীদের সংখ্যা এখনো মাথাব্যথার কারণ। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীরা হারলেও কোনো কোনো অঞ্চলে বিএনপির ভোটসংখ্যা দেখে আওয়ামী লীগের নেতারা অবাক হয়ে উঠছেন। এ প্রেক্ষাপটে আগামী এক বছর বিএনপিকে আরও চাপে রাখার পরিকল্পনা নিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। মাঠে-ঘাটে, রাজনীতিতে ও নির্বাচনে বিএনপিকে একবিন্দুও ছাড় দেবে না ক্ষমতাসীনরা।
এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিএনপিকে মাঠে সীমিত পরিসরে নামতে দিলেও হামলা-মামলা হবে বড় আকারে। নতুন করে মামলা, গ্রেপ্তার এগুলো বাড়িয়ে দেওয়া হবে। বিএনপিকে সভা-সমাবেশের সুযোগ দিয়ে কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তার বাড়ানো হবে।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ‘বীরউত্তম’ খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গত শনিবার রাজধানীতে দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের পর এসব কথা বলেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, গুজব ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি নির্মূল করতে হলে অন্তত এ মেয়াদে বিএনপিকে আরও চাপে রাখতে হবে। নজরদারিও বাড়াতে হবে দলটির ওপর।
কেন্দ্রীয় নেতাদের মতে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোর ভোট পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, কোনো অঞ্চলে এখনো বড় অঙ্কের ভোট পেয়ে যাচ্ছে বিএনপি। ওই এলাকাগুলো টার্গেট করে বিএনপির ভোট ব্যাংক ভেঙে দিতে হবে। নতুবা যেকোনো সময়ে গজিয়ে উঠতে পারে বিএনপি। একটা ব্যাপার পরিষ্কার হয়েছে আওয়ামী লীগের কাছে সেটা হলো এখনো অনেক অঞ্চলে বিএনপির বড়সংখ্যক ভোটার রয়েছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, আমি মনে করি এখনো বিএনপিই শক্ত প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের।
তিনি বলেন, তারা নেতৃত্বে ব্যর্থ কিন্তু এখনো অসংখ্য কর্মী আছে বিএনপির। আমাদের ইতিবাচক রাজনীতির মধ্য দিয়ে বিএনপির কর্মীর সংখ্যাও দুর্বল করতে হবে। এটাই হবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির অন্যতম লক্ষ্য।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে বিএনপিকে বিদায় জানাতে এ মেয়াদ লেগে যাবে। অন্তত আরও এক বছর মাঠে-ঘাটে কোথাও বিএনপিকে চাঙ্গা হতে দেওয়া যাবে না। এই মেয়াদে রাজনৈতিক কলাকৌশলে ভুল হলে বিএনপি আবার চাঙ্গা হয়ে উঠতে পারে।
তিনি বলেন, প্রায় একযুগ ধরে রাজনীতি করে বিএনপির নেতৃত্বকে ব্যর্থ করতে সক্ষম হয়েছে আওয়ামী লীগ। এখন চেষ্টা করতে হবে বিএনপির কর্মীদের নিষ্ক্রিয় করতে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য বলেন, দেশের মানুষের কাছে বিএনপির রাজনীতি দুর্নীতির-লুটপাটের ও মানুষ খুনের। ২০১৪ ও ’১৮ সালের নির্বাচনে মানুষ দেখেছে। তাই দেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপির এই দেশে রাজনীতি করার বৈধতা আর নেই। মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বিএনপির কাছ থেকে। আওয়ামী লীগের জন্য এটি বড় সুযোগ। সেই সুযোগ কাজে লাগাতে না পারলে ক্ষতি হবে আওয়ামী লীগেরই। ফলে বিএনপি রাজনৈতিক অবশিষ্ট শক্তিও থাকুক চায় না ক্ষমতাসীনরা।
তিনি বলেন, দেশে রাজনৈতিক শূন্যতা দেখা দিয়েছে বিএনপির অবর্তমানে এটা ঠিক। তবে বিএনপি রাজনীতিতে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ দেওয়া হবে না। সে ক্ষেত্রে নতুন রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ঘটতে পারে। প্রয়োজনে আওয়ামী লীগ এ ক্ষেত্রে সহায়তাও করতে পারে অন্য যে কাউকে।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লীর অন্য এক সদস্য বলেন, বিএনপির অনুপস্থিতিতে রাজনৈতিক শূন্যতা চলছে দেশে তবে এই শূন্যতা কাটিয়ে তুলতে নতুন শক্তির উত্থান হতেও পারে। বিএনপিকে বাইরে রেখেই হতে হবে এ চেষ্টা।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বিএনপি চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র ও গুজবের রাজনীতি এখনো ছাড়েনি।
তিনি বলেন, বিএনপির আন্দোলন মানে জ্বালাও-পোড়াও। বিএনপির আন্দোলন মানে মানুষ খুন। বাংলাদেশে তাদের এ অপরাজনীতি আর চলবে না।
তিনি বলেন, বিএনপি ইতিবাচক রাজনীতিতে যতদিন ফিরে না আসবে ততদিন এ দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ তাদের প্রতিহত করবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, বিএনপির রাজনীতি জনকল্যাণে নয়। অতীতের রাজনীতি সেটাই প্রমাণ করে। ইতিবাচক রাজনীতির ধারায় ফিরে আসতে হবে বিএনপিকে। তবেই দেশের মানুষ তাদের ক্ষমা করবে।
সোনালীনিউজ/এমটিআই