ঢাকা : দেশজুড়ে চলছে করোনা মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ। এখন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন সকল বয়সেরই মানুষ। তবে জনসম্পৃক্ততা বেশি আছে এমন ব্যক্তিদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাস্তবেও দেখা যাচ্ছে, উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক চিকিৎসক, পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতাকর্মী করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। গত এক বছরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে দেশের সবচেয়ে বড় দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির হাজারেরও বেশি নেতাকর্মী মারা গেছেন।
দলীয় সূত্র থেকে মোট আক্রান্তের সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া না গেলেও করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে উভয় দলের কয়েক হাজার নেতাকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এরমধ্য শুধু বিএনপিতেই আক্রান্তের সংখ্যা দেড় হাজারের বেশি।
এ ছাড়া করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় প্রতিমন্ত্রী-এমপিসহ আক্রান্ত হয়েছেন ৩০ জন। আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া জানিয়েছেন, গত এক বছরে করোনা মহামারীতে দলের ছয় শতাধিক নেতাকর্মী মৃত্যুবরণ করেছেন।
রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ করোনাতে সবচেয়ে বেশি নেতাকর্মী হারিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানুষের পাশে থাকার কারনে নেতাকর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন। কারণ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নিজেদের রক্ষায় পালিয়ে থাকেনি। তারা সাধারণ মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। করোনায় মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতাও রয়েছেন বলে জানান তিনি।
অন্যদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স জানান, গত এক বছরে বিএনপির কেন্দ্রীয় ও তৃণমূলের সাড়ে ৪ শত নেতাকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে আক্রান্ত হয়েছেন দলটির দেড় সহস্রাধিক নেতাকর্মী। আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ২৩৮ জন। তাদের মধ্যে অনেকে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন। আক্রান্তদের দলের পক্ষ থেকে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
গত বছর মার্চে শুরু হওয়া করোনা সংক্রমণে উভয় দলের নেতাকর্মীরা সাহায্য নিয়ে দাঁড়িয়েছিল সাধারণ মানুষের পাশে। তাদের মধ্যে অনেকেই পরবর্তীসময়ে আক্রান্ত হন করোনাতে। তাই এবার সতর্ক রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ এ প্রসঙ্গে বলেন, জনপ্রতিনিধি ও একজন সংসদ সদস্য হিসেবে আমাদের এলাকার জনগণের কাছে যেতে হয়। এটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। এর ফলে অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হন। তিনি নিজেও গত বছর করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন উল্লেখ করে হানিফ বলেন, এবার সতর্কতার সাথে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে সবাইকে।
এদিকে গত বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে এবার সংক্রমণ রোধে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর উভয় দলে পক্ষ থেকেই দলের সব ধরনের কর্মকাণ্ড সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়। বন্ধ করা হয় সব ধরনের ইফতার মাহফিলও।
করোন সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় গত ১৮ মার্চ এক সংবাদ সন্মেলনের মাধ্যমে দলীয় সব কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, সারা দেশের নেতাকর্মীদের আমরা লিখিতভাবে জানিয়েছি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য। একই সাথে সব ধরনের ইফতারের কর্মসূচিও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এদিকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত এক বছরে মারা গেছেন বর্তমান সংসদের বেশ কয়েকজন এমপি এবং সাবেক এমপি। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে মারা যান দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাড. আব্দুল মতিন খসরু। সাবেক সাংসদ সারাহ বেগম কবরী। কেন্দ্রীয় নেতা মাহমুদুস সামাদ চৌধুরী।
এর আগে করোনার প্রথম ছোবলে মারা যান ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহ, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, ঢাকার সাবেক এমপি হাজি মকবুল হোসেন, নওগাঁ-৬ আসনের এমপি ইসরাফিল আলম, সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী, মৌলভীবাজার জেলার সাবেক এমপি তোয়াবুর রহিম, মানিকগঞ্জ-২ আসনের সাবেক স্বতন্ত্র এমপি শামসুদ্দিন আহমেদ, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আ খ ম জাহাঙ্গীর, সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপি নেতা চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব) আনোয়ারুল কবির তালুকদার, সাবেক এমপি আবু হেনা, সাবেক এমপি ও বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতা আমজাদ হোসেন, কুমিল্লা-১০ আসনের সাবেক এমপি ও জাতীয় পার্টি নেতা এটিএম আলমগীর।
এদিকে রাজনৈতিক দলের সর্বোচ্চ শীর্ষ নেতাদের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। গত ১০ এপ্রিল তিনি পরিবারের ৮ সদস্যসহ করোনায় আক্রান্ত হন। তবে গতকাল শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তিনি ভালো আছেন বলে জানা গেছে।
বর্তমানে ৩০ জন প্রতিমন্ত্রী ও এমপি করোনায় আক্রান্ত হয়ে দেশ-বিদেশে হাসপাতালে কিংবা বাসায় চিকিৎসাধীন আছেন। তারা হলেন-চট্টগ্রাম-১ আসনের এমপি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, জামালপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান, চট্টগ্রাম-১২ আসনের এমপি ও সরকার দলীয় হুইপ শামসুল হক চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও নেত্রকোনা-৩ আসনের এমপি অসীম কুমার উকিল, আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও গাজীপুর-৫ আসনের এমপি মেহের আফরোজ চুমকি, গাজীপুর-৪ আসনের এমপি বঙ্গতাজ কন্যা সিমিন হোসেন রিমি, রাজবাড়ী-১ আসনের এমপি ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী, কক্সবাজার-১ আসনের এমপি জাফর আলম, কক্সবাজার-২ আসনের এমপি আশেক উল্লাহ রফিক ও সাবেক এমপি আব্দুর রহমান বদির স্ত্রী কক্সবাজার-৪ আসনের এমপি শাহীন আক্তার, কুমিল্লা-৪ আসনের এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুল, ফেনী-২ আসনের এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী, নোয়াখালী-৩ আসনের এমপি মামুনুর রশিদ কিরণ, হবিগঞ্জ-১ আসনের এমপি গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজ, হবিগঞ্জ-২ আসনের এমপি আব্দুল মজিদ খান, রাজশাহী-১ আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী, বরিশাল-৪ আসনের এমপি পঙ্কজ দেবনাথ, ঢাকা-২০ আসনের এমপি বেনজির আহমেদ, পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবির, সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য তানভীর ইমাম, টাঙ্গাইল-২ আসনের এমপি তানভীর হাসান ছোট মনির, ঢাকা-৭ আসনের এমপি হাজী মো. সেলিম, বগুড়া-৭ আসনের এমপি রেজাউল করিম বাবলু।
ঢাকা-১৭ আসনের এমপি আকবর হোসেন পাঠান ফারুক (নায়ক ফারুক) করোনা নেগেটিভ হয়ে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে গিয়ে অসুস্থ হয়ে আইসিইউতে রয়েছেন।
এ ছাড়া সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্যদের মধ্যে নাহিদ ইজহার খান, শিরীন আহমেদ, জান্নাতুল বাকিয়া, অ্যারোমা দত্ত, রওশন আরা মান্নান, অ্যাডভোকেট খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন করোনায় আক্রান্ত।
বিএনপি’র শীর্ষ নেতাদের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হন, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ডা. এ কে এম আজিজুল হক, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য প্রফেসর ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান ডা,এ জেড এম জাহিদ হোসেন, উপদেষ্টা কমিটির সদস্য আবুল খায়ের ভূঁইয়া ও বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।
সোনালীনিউজ/এমটিআই