গ্র্যাজুয়েটদের জন্য চালু হবে ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম

  • বিশেষ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ৫, ২০২১, ০১:৪৩ পিএম

ঢাকা : সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করা শিক্ষার্থীদের চাকরি উপযোগী করে গড়ে তুলতে চালু হবে ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম। এর মাধ্যমে স্ব স্ব বিষয়ে গ্র্যাজুয়েশন করা তরুণ-তরুণীরা ওই বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে পারবে, যা কর্মসংস্থান বা চাকরিপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।

গত বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তার বাজেট বক্তৃতায় এ কথা বলেন।

অর্থমন্ত্রীর এই পরিকল্পনাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন শিক্ষাবিদ ও শিক্ষার্থীরা। তবে সেইসাথে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির পাশাপাশি যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা চালুরও পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

বাংলাদেশে প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যা তরুণ-তরুণী গ্র্যাজুয়েশন করে বের হচ্ছে। এর মধ্যে অধিকাংশই কোনো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারছে না। এসব শিক্ষিত বেকার পরিবার ও সমাজের বোঝা হয়ে দেখা দিচ্ছে। হতাশায় নিমজ্জিত হচ্ছে উচ্চশিক্ষিত এই জনগোষ্ঠী।

বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) হিসেবমতে, প্রতি বছর শুধু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত দুই সহস্রাধিক কলেজ থেকেই গ্র্যাজুয়েট হয়ে বের হচ্ছেন ৫০ হাজার শিক্ষার্থী। এর বাইরেও আছে ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। সেখান থেকেও প্রতি বছর কয়েক হাজার শিক্ষার্থী গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করে শ্রম বাজারে যুক্ত হওয়ার প্রস্তুতি নেয়।

প্রতি বছর ২০ লাখের মতো নতুন মুখ দেশের শ্রমশক্তিতে যুক্ত হচ্ছে। এদের বড় অংশই বেকার থাকছে। ডিগ্রি সম্পন্নের পর চাকরি খুঁজতেই তিন বছর চলে যাচ্ছে ৪৬ শতাংশ কলেজ গ্র্যাজুয়েটের। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজের ওপর জরিপ চালিয়ে এ তথ্য দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

জানা যায়, দেশে দুই ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ মিলছে বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি-বেসরকারি কলেজ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যমতে, এর অধিভুক্ত কলেজের সংখ্যা ২ হাজার ৩০০। প্রতি বছর কলেজের সংখ্যা বাড়ছে।

ব্যানবেইস-এর হিসাবমতে, সারা দেশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিভিন্ন কলেজে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৮ লাখের বেশি, যা মোট উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারীর ৬৮ শতাংশ।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পড়ালেখা শেষ করে মাত্র ১ শতাংশ কলেজ গ্র্যাজুয়েট স্বকর্মসংস্থানে যুক্ত হচ্ছেন। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পর তিন বছর ধরে চাকরির সন্ধান করতে হচ্ছে ৪৬ শতাংশ কলেজ গ্র্যাজুয়েটকে। তাদের মধ্যে বেকারত্বের হারও সবচেয়ে বেশি, ৭১ শতাংশ।

এরকম পরিস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বজেট বক্তৃতায় সদ্য গ্র্যাজুয়েটদের জন্য ইন্টার্নশিপ চালুর ঘোষণা দেওয়ায় তাকে সাধুবাদ জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।

অর্থমন্ত্রী বলেছেন, প্রতি বছর আমাদের দেশে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করে চাকরির ক্ষেত্রে প্রবেশের উপযোগী হচ্ছে। এসব সদ্য গ্র্যাজুয়েট যাতে সহজেই স্বীয় ক্ষেত্রে চাকরি পেতে পারে, তা নিশ্চিত করার জন্য সরকার পাবলিক ও প্রাইভেট সেক্টরের মাধ্যমে তাদের জন্য ইন্টার্নশিপ কার্যক্রম চালুর ওপর জোর দেবে।

সে লক্ষ্যে আমি ঘোষণা প্রদান করছি যে, এই ইন্টার্নশিপ কার্যক্রম অবিলম্বে চালুর জন্য আগামী অর্থবছরে এ বিষয়ে একটি পলিসি ফ্রেমওয়ার্ক প্রণয়ন করা হবে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত একটি কলেজ থেকে ২০১৯ সালে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন জিল্লুর রহমান।

তিনি বলেন, অর্থনীতিতে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করার পরও গত দুই বছর ধরে বেকার আছি। চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো অভিজ্ঞতা চায়।

তিনি হতাশ কণ্ঠে বলেন, চাকরির সুযোগই যদি না পাই তবে অভিজ্ঞতাটা অর্জন করব কীভাবে। তার মতে সরকার যদি সত্যিই ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা করে তবে তা খুবই ভালো হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. নেহাল করিম বলেন, সরকার যদি গ্র্যাজুয়েটদের জন্য ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা করে তবে তা তাদের কাজের অভিজ্ঞতা অর্জনে সহায়তা করবে। কার্যকরভাবে এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত করতে পারলে তা শিক্ষিত জনগোষ্ঠির কর্মসংস্থানে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

তবে তারও আগে দেশে কর্মসংস্থান বৃদ্ধিও জন্য সরকার ও আর্ন্তজাতিক দাতাগোষ্ঠীর দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা উচিত বলে মনে করেন তিনি। উন্নত করতে হবে শিক্ষার গুণগত মানও।

তার মতে, দেশে শিক্ষিত বেকার বাড়ার পেছনে মূলত কাজ করছে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন না হওয়া, সেক্টর অনুযায়ী কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হওয়া এবং সরকারের নীতি ও আন্তর্জাতিক দাতাগোষ্ঠীর দৃষ্টিভঙ্গি।

এই সমাজবিজ্ঞানী ও শিক্ষকের মতে, বিশ্ব ব্যাংক থেকে শুরু করে অন্যান্য দাতা সংস্থা ও দেশগুলোর এখানে বৃহৎ কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য আশানুরূপ বিনিয়োগ করেন না। তাই এখানে চাহিদা অনুযায়ী কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হয়নি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই