ঢাকা : করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দেওয়া হলেও মানছেন না চালক, হেলপার এমনকি যাত্রীরাও।
অথচ একগুচ্ছ শর্ত দিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতামতকে উপেক্ষা করে সরকার গত ১১ আগস্ট থেকে গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু সেইসব শর্ত তদারকির জন্য দেখার কেউ নেই মাঠে।
সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকার কথা চিন্তা করে সরকার গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয়। সেই সাথে বেশ কিছু শর্তও আরোপ করে দেওয়া হয়। পরিবহন মালিকরা সেইসব শর্ত মেনেও নিয়েছিলেন।
শর্তগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল-গণপরিবহন মালিকরা অর্ধেক পরিবহন চালাবেন, যাত্রার শুরু ও শেষে পরিবহনগুলো জীবাণুমুক্ত করবেন।
পরিবহন সংশ্লিষ্ট মোটরযান চালক, অন্যান্য শ্রমিক কর্মচারী ও যাত্রীদের বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধান ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
আগের ভাড়ায় চলবে গণপরিবহন (৬০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়া প্রযোজ্য নয়), আসন সংখ্যার অতিরিক্ত কোনো যাত্রী পরিবহন করা যাবে না। কিন্তু বাস্তবে এর কোনোটিই হচ্ছে না।
বর্তমানে স্বাভাবিক সময়ের মতোই রাজধানীতে দেখা যাচ্ছে যানজট। অর্ধেক বাস চলাচলের কথা থাকলেও তা মনিটরিং না করার ফলে আদৌ সেই নিয়ম মানা হচ্ছে কি না তা বলতে পারছেন না স্বয়ং পরিবহন নেতারাও। আগের মতোই হুড়োহুড়ি করে যাত্রীরা উঠছেন বাসে।
গাদাগাদি করে তোলা হচ্ছে যাত্রী। প্রতিটি গাড়িতেই অতিরিক্ত যাত্রী তোলা হচ্ছে। অনেকের মুখেই থাকছে না মাস্ক। গাড়ির মধ্যে দাঁড়িয়েও যাচ্ছেন যাত্রীরা। হেল্পাররা দিচ্ছেন না কোন বাধা বরং ঠেলে আরো যাত্রী তুলছেন তারা। আবার ভাড়া বেশি নেওয়ারও অভিযোগ করছেন কোনো কোনো যাত্রী।
তবে অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়ার বিষয়ে বাস স্টাফ ও যাত্রীরা দায়ী করছেন পরস্পরকে। বাস স্টাফদের মতে, যাত্রীরা জোর করে উঠে পড়ছেন বাসে। তাদের বাধা দিয়ে রাখা যায় না। তাদের কারণে সার্জেন্টরা মামলা করে দিচ্ছে। আর যাত্রীদের অভিযোগ হেল্পাররা কোনো আসন খালি না থাকলেও ডেকে ডেকে যাত্রী তুলছে। অতিরিক্ত টাকার লোভে তারা এই অনিয়ম করে যাচ্ছে। প্রতিবাদ করেও কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না।
শনিবার (২১ আগস্ট) রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, ফার্মগেট, শাহবাগ, বাংলামোটর, কারওয়ানবাজার, শ্যামলী, মগবাজারসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়ও দেখা যায় একই চিত্র। সরেজমিনে গণপরিবহনে যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে উদাসীনতা দেখা গেছে। অনেক যাত্রী নাক-মুখ খোলা রেখে মাস্ক পরেছেন। আবার অনেকেই পড়েননি। কোনো গণপরিবহনে স্যানটাইজার ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। এ বিষয়ে মাঠপর্যায়ে তদারকি করতে দেখা যায়নি কাউকে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন। সেইসাথে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতেও কাজ করে যাচ্ছেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ মঈনুল হাসান বলেন, সরকারের পরিপত্র অনুযায়ী চলবেন। সেটাই নিয়ম; কিন্তু কেউ তা অমান্য করলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। এছাড়া আমরা চালক ও হেলপারদের সচেতনতা বৃদ্ধির কাজও করছি।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে সরকার বিধিনিষেধ শিথিল করলে সর্বশেষ ২২ জুলাই সড়কে গণপরিবহন চলেছিল। এরপর করোনা সংক্রমণরোধে বন্ধ করে দেওয়া হয় সকল ধরনের গণপরিবহন।
পরবর্তীতে মানুষের জীবিকার প্রশ্নে গত ১১ আগস্ট থেকে সারা দেশে আরোপিত বিধিনিষেধ শিথিল করে সরকার। ওই দিন থেকে গণপরিবহনের সব আসনে যাত্রী পরিবহনের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে শর্তারোপ করা হয়, তা হবে মোট পরিবহন সংখ্যার অর্ধেক। কিন্তু
নগরীতে সব পরিবহনই চলছে। মালিকরা তাদের অর্ধেক বাস বন্ধ রাখেনি। রাজধানীতে স্বাভাবিক সময়ের মতোই যানজট পরিস্থিতি দেখে এমনটাই অনুমান করা হচ্ছে। আবার অর্ধেক বাস চলাচল নিশ্চিত করাটাও সম্ভব নং বলে জানিয়েছেন পরিবহন নেতারা।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ এ প্রসঙ্গে বলেন, সব মালিক ও চালকদের সরকারের নির্দেশ পালন করে পরিবহন পরিচালনার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যারা অনিয়ম করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে আমরা আগেই বলেছিলাম পরিবহনের অর্ধেক সংখ্যা নির্ধারণ করা কঠিন হবে।
দেশব্যাপী এ বিষয়টি নির্ণয় করাটাও কঠিন। তাছাড়া অর্ধেক গাড়ি চলাচল করলে পরিবহন সংকট দেখা দেবে এবং যাত্রীর চাপ বাড়বে। এতে করে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা থাকবে। এসব দিক বিবেচনা করে মোট পরিবহন সংখ্যার অর্ধেক চলাচলের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে সকল গাড়ি চলাচলের সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য আমরা সরকারের নিকট আবেদন করেছিলাম।
সোনালীনিউজ/এমটিআই