ঢাকা: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ঝিমিয়ে থাকা রাজনীতি সরব হতে শুরু করেছে মাত্র। এরইমধ্যে শুরু হয়ে গেছে নানামুখী হিসাব-নিকাশ। যে যার মতো কোমর বেঁধে নেমে পরার অপেক্ষায় সাজাচ্ছে পরিকল্পনা।সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের এখনো বাকি প্রায় দুই বছর। ২০২৩ সালের শেষের দিকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা।
আরও পড়ুন: অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটাতে কাজ শুরু করেছে আ.লীগ
বাঁচা-মরার লড়াইয়ে বিএনপি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিসহ কয়েকটি পরিকল্পনা সাজালেও তাদের মূল টার্গেট সমমনা রাজনৈতকি দলগুলোর সঙ্গে ঐক্য আরও মজবুত করা।জোটের পরিধি বাড়ানো। নির্বাচনের আগ মুহূর্তে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিকে আন্দোলনের মূল হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চায় দলটি।
প্রথমে দলগতভাবে আদর্শভিত্তিক যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি এবং পরে সমমনাদের নিয়ে একমঞ্চ থেকে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি।
আরও পড়ুন: গতিশীল হচ্ছে বিএনপি!
অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও ঘর গোছানোর পাশাপাশি শরিক বাড়ানোর চিন্তায় মগ্ন।আওয়ামী লীগ চাইছে নির্বাচনের আগে সাংগঠনিক জেলাসহ উপজেলা, থানা, পৌরসভা, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ের সম্মেলন আয়োজন করতে। সেইসঙ্গে ভোটের হিসাব-নিকাশ মেলানোর জন্য কয়েকটি ইসলামী দল এবং বামপন্থি রাজনৈতিক দল নিয়ে মহাজোটে নির্বাচনি জোটের পরিধি বাড়ানো নিয়ে ভাবছে দলটি।
নির্বাচনকে সামনে রেখে জোট বৃদ্ধি বা বন্ধু বাড়ানোর এই একটি কৌশলে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি উভয়ই একই লক্ষ্যে হাটছে।এক্ষেত্রে দু’দলেরই ফোকাসে রয়েছে ইসলামী দলগুলো।
আরও পড়ুন: সম্পর্ক স্বাভাবিক হচ্ছে না হেফাজত-আওয়ামী লীগের
এদিকে রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা মনে করছেন, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ টানা এক যুগ ক্ষমতায় থাকলেও রাজনৈতিক ঐক্যের অভাবে অনেক ক্ষেত্রে স্থবির হয়ে পড়ছে দলের কার্যক্রম। স্থানীয় পর্যায়ে দলের মধ্যে প্রকট কোন্দল রয়েছে।
দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে ‘কিছু পাওয়া না-পাওয়ার’ প্রশ্নে আওয়ামী লীগে স্বার্থের দ্বন্দ্ব বেড়েছে। তাই দ্বাদশ নির্বাচনের আগে দলীয় কোন্দল মিটিয়ে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক ঐক্য তৈরি করতে চায় আওয়ামী লীগ কেন্দ্রিক মহাজোট।
আরও পড়ুন: বাঁচা-মরার লড়াইয়ে ৪ পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি
অন্যদিকে দলের ভেতর অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন করতে এখনই উদ্যোগ নিতে চান বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। যারা রাজপথে থাকবেন তাদের মূল্যায়ন চান সকল শ্রেণির নেতা-কর্মী।
সূত্র জানায়, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ও দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই বলে মতামত দিয়েছেন বিএনপি নেতারা। তারা বলেছেন, এ আন্দোলনে সফল হতে হলে প্রয়োজন দলীয় ঐক্য। এজন্য সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে একই প্ল্যাটফরমে আনার পাশাপাশি রাজনৈতিক কূটনৈতিক তৎপরতাও বৃদ্ধি করেছে দলটি।
আরও পড়ুন: ঘর গোছানোর পাশাপাশি শরিক বাড়ানোর চিন্তা আ.লীগের
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিগত দুটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নির্বাচনকে অকার্যকর করার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের প্রবল দাপটের মুখে তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপিও রাজনৈতিকভাবে অকার্যকর হয়ে রয়েছে। সংসদে বিরোধী দল হিসাবে জাতীয় পার্টি থাকলেও তারা সরকারের অনুগত বলে মনে করা হয়। ফলে রাজনীতির মাঠে আওয়ামী লীগের সামনে কোনো চ্যালেঞ্জ নেই।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ মনে করেন, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে দলীয় কোন্দলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক তৎপরতা নেই বললেই চলে। সরকার এবং রাষ্ট্রে এই দল (আওয়ামী লীগ) বিলীন হয়ে গেছে। আর যেহেতু মাঠে কোনো প্রবল প্রতিপক্ষ দৃশ্যমান নেই, ফলে বাইরে থেকেও কোনো চ্যালেঞ্জ আসছে না। ফলে দ্বাদশ নির্বাচনের আগে দেশে আওয়ামী বিরোধী ঐক্য সৃষ্টি হবে এটাই স্বাভাবিক।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব মনে করেন, একটি সুবিধাভোগী চক্র সব প্রতিষ্ঠান দখল করে নিয়ে রাষ্ট্রকে দুর্বৃত্ত রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। চলমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে জাতীয় সরকার গঠনকেই একমাত্র পথ হিসেবে দেখছেন তিনি। রব বলেন, এখন রাষ্ট্রের একমাত্র পথ হচ্ছে গণজাগরণের মাধ্যমে জাতীয় নৈতিক শক্তির পুনরুজ্জীবিত করা। এই পুনরুজ্জীবিত শক্তিই জাতীয় সরকার গঠন করবে। বিদ্যমান সংকট থেকে মুক্তির একমাত্র বিকল্প হতে পারে জাতীয় সরকার গঠন। পুনরুজ্জীবিত শক্তি গঠন করতে প্রয়োজন হয়ে পরেছে দেশে বৃহৎ রাজনৈতিক ঐক্য।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের বলেছেন, দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনের অনেক ক্ষমতা আছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা দৃশ্যমান নয়। নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে সরকারি দলের সাথে অনেক সময় প্রশাসনের একটি অংশও জড়িয়ে পড়ছে। তাই স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হচ্ছে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার অধীনে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। বিএনপির বিগত বৈঠকে এসব বক্তব্য উঠে এসেছে। সেখানে নেতারা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের দাবিতে রাজপথে আন্দোলনের মতামত দিয়েছেন। কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার আগে দ্রুত সংগঠনকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবীদের সঙ্গে ঐকমত্যে আসতে চায় দলটি। এ ক্ষেত্রে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে অটুট রেখে ডান-বামসহ সরকারবিরোধী বিভিন্ন দল, সুশীলসমাজ ও পেশাজীবীদের ঐক্যবদ্ধ করতে কাজ করছে বিএনপি।
কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও শান্ত পরিবেশ বিরাজমান রয়েছে। কোনোমতেই বিএনপিকে আন্দোলনের নামে অরাজকতা করতে দেওয়া হবে না। রাজনৈতিকভাবে কঠোর হাতে তাদের মোকাবিলা করা হবে।
দল কোনো সংকটে পড়েছে, তৃণমূলে ঐক্য নেই এবং সরকার ও দল একাকার হয়ে গেছে-এসব বক্তব্য মানতে রাজি নন আওয়ামী লীগ নেতারা।
সোনালীনিউজ/আইএ