রাজনীতিতে সংস্কারের হাওয়া

  • বিশেষ প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২১, ০৯:৩৮ পিএম

ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ঝিমিয়ে থাকা রাজনীতি সরব হতে শুরু করেছে মাত্র। এরইমধ্যে শুরু হয়ে গেছে নানামুখী হিসাব-নিকাশ। যে যার মতো কোমর বেঁধে নেমে পরার অপেক্ষায় সাজাচ্ছে পরিকল্পনা।সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের এখনো বাকি প্রায় দুই বছর। ২০২৩ সালের শেষের দিকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা।

আরও পড়ুন: একটি কৌশলে মিল দু’দলে

এরই মধ্যে তৃণমূলসহ সংগঠনকে ঢেলে সাজানো, অভ্যন্তরীণ বিরোধ নিরসন, ইশতেহার তৈরিকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজে নেমে পড়েছে ক্ষমতাসীনরা। নজর রাখছে জোট-মহাজোটের মেরূকরণেও।

অন্যদিকে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারসহ একগুচ্ছ দাবি নিয়ে এবার এককভাবে মাঠে নামতে চায় বিএনপি। আন্দোলনের বিকল্প নেই-এমন বার্তা এসেছে দলটির দুদফা সিরিজ বৈঠক থেকে। তাই তৃণমূল থেকেই কেন্দ্র পর্যন্ত সাংগঠনিক কাঠামো শক্তিশালী করতে কাজ শুরু করেছে দলটি। 

আরও পড়ুন: প্রস্তুতি নিচ্ছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো 
 
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের চলমান সংকট থেকে উত্তরণ এবং রাষ্ট্র মেরামতের লক্ষ্যে রাজনৈতিক সংস্কার জরুরি। নানা কারণে মানুষ এখন নির্বাচনবিমুখ হয়ে পড়েছে। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন ছিল একতরফা ও বিতর্কিত। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ব্যাপক কারচুপি ও মানুষের ভোটাধিকার হরণের অভিযোগ উঠেছে। তাই আইন সংশোধন ও নির্বাচনপদ্ধতির পরিবর্তন করতে হবে। এ ছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করে তৃণমূল সাজানোর পরামর্শ দিলেন তারা। 

আরও পড়ুন: ‘গৃহপালিত বিরোধী দলের’ তকমা ঘোচাতে চায় নেতাকর্মীরা

এদিকে টানা তিন জাতীয় নির্বাচনে নৌকার জয়ের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে সাংগঠনিক শক্তিমত্তা নতুন করে যাচাই করছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচন সামনে রেখে রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামে বিএনপিকে একবিন্দুও ছাড় না দেওয়ার কৌশলও রয়েছে দলটির। তাই তথ্যপ্রযুক্তিতে শক্তিশালী অবস্থান গড়াসহ তৃণমূলকে শক্তিশালী করছে আওয়ামী লীগ।

আরও পড়ুন: গতিশীল হচ্ছে বিএনপি!

অন্যদিকে ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়-এই দাবিতে অনড় বিএনপি। দাবি আদায়ে রাজপথে সক্রিয় থাকার ঘোষণা দিয়েছেন দলটির নেতারা।বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের নিয়ে আন্দোলনের পরিকল্পনা প্রণয়নে দফায় দফায় বৈঠক করছেন নীতিনির্ধারকরা। বিরোধী সব রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্ট নাগরিক এবং গণতন্ত্রমনা ব্যক্তিদের এক ছাতার নিচে আনতে নানা উদ্যোগ অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে এ পরিকল্পনায়। 

আরও পড়ুন: অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটাতে কাজ শুরু করেছে আ.লীগ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমার মনে হয়, আমাদের নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আর নির্বাচন কমিশনে কে থাকবেন, না থাকবেন-এই তর্কে কোনো সময় দেওয়ার দরকার নেই। এ নিয়ে কোনো আলোচনা বা আন্দোলনের দরকার নেই। যে যেই ব্যানারেই আন্দোলন করেন না কেন, আন্দোলন হবে এক দফা শেখ হাসিনার সরকারের পতন। এজন্য সাংগঠনিক কাঠামো সংস্কার করে শক্তিশালী করা হবে। আমাদের সকল চিন্তা, চেতনা, সামর্থ্য, শক্তি একত্রিত করে এই আন্দোলনে নেমে পড়তে হবে।

আরও পড়ুন: ঘর গোছানোর পাশাপাশি শরিক বাড়ানোর চিন্তা আ.লীগের

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, গণতন্ত্র মানে শান্তিশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করা নয়, গণতন্ত্র হলো উন্নয়নের রক্ষাকবচ। কাজেই সেই শান্তি ও উন্নয়নের ব্যাঘাত ঘটিয়ে কোনো আন্দোলন হলে তা গণতন্ত্রের পক্ষের কেউ মেনে নেবে না। জ্বালাও-পোড়াও বাদ দিয়ে তারা যদি রাজনৈতিক সংস্কার করে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে, সেই আন্দোলনকে আমরা স্বাগত জানাব। কিন্তু শান্তিশৃঙ্খলা বিনষ্ট করে, উন্নয়নের ধারা ব্যাহত করে যদি আন্দোলন করতে চায়, তাহলে আমরা দল হিসেবে তাদের প্রতিহত করব।

আরও পড়ুন: বাঁচা-মরার লড়াইয়ে ৪ পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, গণমুখী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়েই এই দেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণে উন্নয়ন অগ্রগতির জন্যই আওয়ামী লীগ কাজ করে। সেই ধারাবাহিকতায় আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি এবং আমাদের দলকে তৃণমূল থেকে ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু করে দিয়েছি।
 
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা একটি ভয়াবহ দুঃসময় অতিক্রম করছি। আজকে একটি সরকার জবরদখল করে বসে আছে। যারা আমাদের ৫০ বছরের সকল অর্জনকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এই দুঃসময় শুধু সংবাদমাধ্যমের নয়, এই দুঃসময় শুধু বিএনপির নয়। এই দুঃসময় পুরো জাতির।

আরও পড়ুন: সম্পর্ক স্বাভাবিক হচ্ছে না হেফাজত-আওয়ামী লীগের

তিনি বলেন, রাজনৈতিক সংস্কারের অংশ হিসেবে প্রথম আওয়ামী লীগের দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই পাঁচটি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ক্ষমতায় এসেই আওয়ামী লীগ এই পদ্ধতি বাতিল করে। তারা এখন ভোট ব্যবস্থাপনার কবর রচনা করেছে। এখন অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, কাউকে ভোট দিতে কেন্দ্রেও যেতে হয় না। দিনের ভোট আগের রাতে হয়ে যায়।

আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপকমিটির সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর বলেন, বর্তমানে রাজনীতি তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর হয়ে গেছে। তাই আগামী নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগকের কার্যক্রমে প্রযুক্তির ব্যবহারকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। কারণ, বাংলাদেশ আগামী দিনে যত উন্নত হতে থাকবে, আগামী নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, তত বেশি গুজব-অপপ্রচার ছড়ানোর চেষ্টা করবে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী। বিশেষত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব-অপপ্রচার ছড়িয়ে তারা জনগণকে বিভ্রান্ত করে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করবে। যেহেতু তারা রাজপথে পেরে উঠতে পারবে না, তাই তাদের একমাত্র হাতিয়ার হচ্ছে গুজব ও অপপ্রচার। আগামী দিনে এ গুজব-অপপ্রচারের বিরুদ্ধে আমাদের শক্তিশালী হতে হবে।

এদিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় কর্মপন্থা ঠিক করতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত নেবে বিএনপি। এজন্য তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবে দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। দলের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, কবে এবং কোথায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, কাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে-তা দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঠিক করবেন। তবে এবারের বৈঠকগুলো বেশিরভাগই হবে প্রযুক্তিনির্ভর। তৃণমূল শক্তিশালী করতে ক্রমান্বয়ে সকল নেতাদের ভার্চুয়াল বৈঠকে যুক্ত করে মতামত ও পরামর্শ নেওয়া হবে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পেশাজীবীদের মতামত নেওয়ার পর আবার স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। পেশাজীবীদের মতামত পর্যালোচনা করে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার বিষয়ে বিএনপির একটি ভাবনা চূড়ান্ত করা হবে। এর পর তা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জাতির সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে ধরা হতে পারে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, দলীয় মতনৈক্যের কারণে উদার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ক্রমেই সংকুচিত হয়ে পড়ছে। দলগুলোর মধ্যে সংষ্কার এবং ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ছাড়া এ সমস্যার সমাধান হবে না।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো গণমুখী না হওয়ায় শাসনব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশ অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হবে। তাই আলোচনার মতামতের ভিত্তিতে সংস্কার প্রস্তাব সংশোধন করে সারা দেশে জনমত তৈরি করা হবে।

সোনালীনিউজ/আইএ