কোথাও বিদ্রোহী কোথাও প্রতিদ্বন্দ্বি অভাব 

দল নিয়ে অস্বস্তিতে আওয়ামী লীগ

  • বিশেষ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২১, ০৮:০৮ পিএম

ঢাকা : স্থানীয় সরকারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কোথাও বিদ্রোহী আবার কোথাও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে অস্বস্তি দেখা দিয়েছে। 

নেতারা বলছেন, দলের বিদ্রোহীদের বিষয়ে আওয়ামী লীগ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। তবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টিও দলে অস্বস্তি তৈরি করছে। 

গত ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় ১৬০টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। শতাধিক ইউনিয়নে নৌকার বিরুদ্ধে লড়াই করেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। এ ধাপের ভোটে দলীয় অনেক নেতা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতও হন।

এর আগের ধাপে ২০৪টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও ছিল প্রায় একই চিত্র। তখন ৪৪টি ইউনিয়নে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীরা। 

আরও পড়ুন : জামায়াতের মাস্টারপ্ল্যান ফাঁস

দুই ধাপের নির্বাচন নিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘নির্বাচন তো এখন নেই। এখন নির্বাচন নির্বাচন খেলা হচ্ছে। মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। কমিশন তার বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে শঙ্কা রয়েছে। 

তাদের ধারণা, ভোট দিতে যাওয়া না যাওয়ায় কিছুই যায় আসে না। ক্ষমতাসীনদের মনোনীতরা নির্বাচিত হবেনই। নির্বাচন এখন শুধু আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘বিদ্রোহী দমনে আমাদের সিদ্ধান্তে কোনো পরিবর্তন আসেনি। আবার বিদ্রোহ দমনে সফল হতে পারছি না, সেটাও ঠিক। তবে আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে, ধীরে ধীরে সুফল আসবে। সিস্টেম দাঁড় করাতে সব রাজনৈতিক দলকে কমিটমেন্টে আসতে হবে। 

দলে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকুক, এটা যেমন আওয়ামী লীগ চায় না তেমনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হোক, তাও চায় না। দল চায় একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হোক।

আরও পড়ুন : এবার আর হায়ারে খেলবে না বিএনপি

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থী দমনে দলের পক্ষ থেকে কঠোর অবস্থান জানান দেওয়া হয়েছে। তবুও দেখা যাচ্ছে এমন প্রার্থী থেকেই যাচ্ছে। তবে দল অনড় অবস্থানে থাকবে। ধীরে ধীরে সুফলও আসবে। আওয়ামী লীগ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন চায়। অন্য রাজনৈতিক দলের অসহযোগিতার কারণে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকছে না।

তিনি আরও বলেন, প্রার্থী না থাকলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অনেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হচ্ছেন। এটা কীভাবে ঠেকানো যায়, তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা চলছে। বিদ্রোহী প্রার্থী দমনের চেয়ে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করা নিয়েই আমরা বেশি ভাবছি। কোন কৌশলে তা বাস্তবায়ন করা যায় তা নিয়ে পর্যালোচনা চলছে। 

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘বিদ্রোহী দমনে নতুন কৌশল আসতে পারে। আমাদের কঠোর অবস্থানের কোনো নড়চড় হবে না। তবে এ বিষয়ে প্রত্যন্ত পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মানানো খুবই কষ্টের।

চট্টগ্রামে ঐক্যের সুর, বিভেদ ভুলে এক কাতারে নাছির নওফেল রেজাউল : এদিকে, সকল বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে চট্টগ্রাম মহানগর লীগকে আরো শক্তিশালী করে সকল সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার করার আহবান জানিয়েছেন চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের তিন নিয়ন্ত্রণকারী  চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিষ্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।

জানাযায় বিগত দুই বছর আগে দুই বার থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট সম্মেলনের উদ্যোগ নিয়েছিল চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ। কিন্তু সংগঠনটির একপক্ষের আপত্তির কারণে তখন সে উদ্যোগ ভেস্তে যায়। আগামী ১২ অক্টোবর থেকে আবারও তৃণমূলে সম্মেলনের উদ্যোগ নিয়েছে নগর আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ।

আরও পড়ুন : রাজনীতিতে সংস্কারের হাওয়া

দলীয় সূত্রের খবর, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কেন্দ্রের ‘চাপে’ নগর আওয়ামী লীগের দুপক্ষ বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তৃণমূলে সম্মেলন আয়োজন করে। 

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, গত ২০ ও ২১ জুন চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সাথে দুই দিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ওই সভায় এ সিদ্ধান্ত দেন। 

দলীয় সূত্র থেকে জানা গেছে, নগর আওয়ামী লীগের মেয়াদোত্তীর্ণ ১৫ থানার মধ্যে ৭টিই হলো আহ্বায়ক কমিটি। বাকি ৮ থানার পূর্ণাঙ্গ কমিটিগুলোর অধিকাংশরই মেয়াদ পেরিয়ে গেছে ৯ বছর আগে।

৪৩টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডের মধ্যে দুই বছর আগে সাতটি ওয়ার্ডের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। বাকি ৩৬টি ওয়ার্ড কমিটির মধ্যে বেশিরভাগই ১২ বছর আগে মেয়াদ পেরিয়ে গেছে।

নগর আওয়ামী লীগের ৪৩টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডে তিনটি করে মোট ১২৯টি ইউনিট কমিটি রয়েছে। কিন্তু এসব কমিটির অধিকাংশরই অস্তিত্ব নেই। 

দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর নগর আওয়ামী লীগের ৪৩টি সাংগঠনিক ওয়ার্ড ও ১২৯টি ইউনিট সম্মেলনের দিনক্ষণ ঘোষণা করেছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন কিন্তু নগর আওয়ামী লীগের একটি পক্ষের নেতারা কেন্দ্রে গিয়ে সম্মেলনের ব্যাপারে আপত্তি জানান। এরপর কেন্দ্র থেকে সম্মেলন স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।

পরবর্তীতে গত ২০ সেপ্টেম্বর নগর আওয়ামী লীগের এক বর্ধিত সভায় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আবার থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিটের সম্মেলন আয়োজনের নির্দেশনা দেন। নভেম্বর মাসের মধ্যে সম্মেলন শেষ করার তাগাদাও দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।

কিন্তু তখন বাধা হয়ে দাঁড়ায় করোনা। ফলে আর সম্মেলনের উদ্যোগ নিতে পারেনি নগর আওয়ামী লীগ। দুই বছর পর তৃতীয় বারের মতো তৃণমূলে সম্মেলন আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে সংগঠনটি।

বারে বারে বাধার মুখে পড়া নগর আওয়ামী লীগের তৃণমূলের সম্মেলন কি এবার সফলতার মুখ দেখবে?

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তৃণমূলের সম্মেলনের আগে আবার নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন অভিযানে নামবে নগর আওয়ামী লীগ। কয়েক দিনের মধ্যে এ কর্মসূচি শুরু হবে। 

দুই বছর আগেও এই কর্মসূচি গ্রহণ করা হয় চট্টগ্রাম মহানগর নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, সম্মেলন নিয়ে সবার সহযোগে যেটুকু সিদ্ধান্ত হবে তা অবশ্যই মেনে নিতে হবে। তবে এ নিয়ে বিশৃঙ্খলা বা বিভেদ কখনো গ্রহণযোগ্য হবে না। যারা দলে থেকে শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করবেন তাদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না।

যারা দায়িত্বে থেকে সংগঠনের কাজ নিয়ে অবহেলা করেন এবং বিভিন্ন রকম অজুহাত সৃষ্টি করেন তাদেরকে পদ থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ জানান। 

আওয়ামী লীগের কার্যনিবার্হী কমিটির সদস্য ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, অন্যান্য সাংগঠনিক জেলার চেয়ে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ অনেক শক্তিশালী। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তৃণমূলকে শক্তিশালী করার লক্ষে নেতা-কর্মীদের দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখার আহ্বান জানান তিনি।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী অতিতের যেকোন সময়ের চেয়ে শক্তিশালি যা গত সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে তা আমাদেরকে সবাইকে ধরে রাখতে হবে।

অপকর্মে জড়িতদের আ.লীগ থেকে মনোনয়ন নয় :  আওয়ামী লীগের যেসব নেতা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত তারা আগামীতে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাবেন না বলে জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

আগামী সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দলের মধ্যে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। ত্যাগী কর্মীদের দিয়ে দল সাজাতে হবে। যারা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত তারা আগামীতে আওয়ামী লীগের টিকিট পাবেন না। 

মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনে কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। সেতুমন্ত্রী বলেন, আগামী নির্বাচনে আরও আধুনিক স্মার্ট আওয়ামী গড়ে তুলতে চাই। এজন্য দলের মধ্যে কোনো বসন্তের কোকিল নয় ত্যাগীদেরই জায়গা করে দিতে হবে।

গণতন্ত্রের নামে তামাশা করেছিল বিএনপি এমন মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, গণতন্ত্রের নামে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিল বিএনপি। বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে এই গণতন্ত্রকে নিয়ে তামাশা করছিল তারা।

ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী নির্বাচন যথাসময় গণতন্ত্র অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি সিরিজ সভা করছে, তারা নাকি আন্দোলন করবে। দেশের মধ্যে আন্দোলনের নামে কোনো সহিংসতা করলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সমোচিত জবাব দেওয়া হবে। এজন্য আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মীদের শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বে কে থাকবেন তা জানতে চেয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী নির্বাচনে আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা, (বিএনপি) আপনাদের কে? পালাতক আসামি? যদি আপনারা পালাতক আসামিকে নেতা বানান দেশের মানুষ কখনো গণতন্ত্রের নেতা মেনে নেবে না। দারিদ্র বিমোচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বে রোল মডেল বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, শাজাহান খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, দীপু মনি, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, শফিকুল ইসলাম নাদেল, দপ্তর সম্পাদক বিল্পব বড়ুয়া, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিনসহ কেন্দ্রীয়ও ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

সোনালীনিউজ/এমটিআই