ঢাকা : আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন শেষে ঘোষিত হয়েছে আংশিক নতুন কার্যনির্বাহী সংসদ। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিবেচনায় নিয়ে ক্ষমতাসীন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটিতে আনা হয়নি তেমন কোনো পরিবর্তন। কার্যনির্বাহী সংসদে স্থান পাওয়া নেতাদের সামনে তৃণমূলকে চাঙ্গা করে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করাই মূল চ্যালেঞ্জ।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির সঙ্গে বিরোধী দলের আন্দোলন মোকাবিলায় তৃণমূলকে ঐক্যবদ্ধ করে দল সুসংগঠিত করতে চাইছে আওয়ামী লীগ।
অন্যদিকে বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দল কোমর বেঁধে নেমেছে সরকারকে চাপে ফেলার জন্য—উত্তপ্ত হচ্ছে রাজপথ, একই সঙ্গে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায় দৃশ্যত বিপাকে সরকার, সঙ্গে যোগ হয়েছে উগ্রবাদীদের নতুন করে মাথাচাড়া দেওয়া। আর এজন্যই পুরোনো, অভিজ্ঞ ও পরীক্ষিত নেতৃত্বের ওপরই আস্থা রেখেছে আওয়ামী লীগ।
ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, ১৪ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার যে প্রত্যয় ঘোষণা করেছে, সেজন্য আগামী নির্বাচনে দলকে আবারও ক্ষমতায় আসতে হবে। দেশের উন্নয়নের হাল শেখ হাসিনার হাতে দিতে হবে আর এজন্যই আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃত্বকে গুরুদায়িত্ব পালন করতে হবে।
দলের সম্মেলনেও বিদায়ী কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক একাধিকবার সারা দেশ থেকে আগত কাউন্সিলর, ডেলিগেট ও নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হতে বার্তা দিয়েছেন। আগামী নির্বাচনে জয়ী হতে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে প্রচার করতে বলেছেন। একই ধরনের বার্তা সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর পুনর্ব্যক্ত করেছেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দশমবারের মতো দলীয় সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পরের দিন রোববার (২৫ ডিসেম্বর) গণভবনে নেতাকর্মীরা শুভেচ্ছা জানাতে যান। এ সময় দলকে শক্তিশালীকরণে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, গণমানুষের আস্থা ও বিশ্বাসই আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় শক্তি। কাজেই এটা আপনারা সবাই সবসময় মাথায় রেখে সংগঠনটির ওপর বেশি গুরুত্ব দেবেন এবং সংগঠনকে শক্তিশালী করবেন—এটাই আমার অনুরোধ।
বিদায়ী কার্যনির্বাহী সংসদের নেতাদের আবার বহালের বিষয়ে আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন, ২০১৯ সালের সম্মেলনের পরপরই দীর্ঘদিন করোনা মহামারির কারণে দলীয় কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়েছিল। তবু নেতাদের বেশিরভাগই করোনা উপেক্ষা করে দলের জন্য কাজ করেছেন, মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সংগঠনকে শক্তিশালী করতে প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে জেলা-উপজেলা-ইউনিয়নে সম্মেলন করেছেন।
মুজিববর্ষের অনুষ্ঠান সফল করেছেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠান সার্থকভাবে সম্পন্ন করেছেন, এসব বিবেচনায় বর্তমান কমিটির নেতাদেরই পুনর্বহাল করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী নির্বাচন, সংকটময় বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও বিরোধীদের আন্দোলন-সংগ্রামের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এবারের সম্মেলনে নেতৃত্বের ভার অভিজ্ঞদের ওপর রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, বিশ্ব পরিস্থিতি সামনে রেখে আমাদের দেশেও সংকট আছে। আগামী নির্বাচন, জঙ্গিবাদ সাম্প্রদায়িকতা, বিএনপির নেতৃত্বে সরকার হটানোর আন্দোলন- এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের সামনে নানা চ্যালেঞ্জ।
করোনা মহামারির কারণে সারা দেশ স্থবির হয়ে যায়, দলীয় কর্মকাণ্ড ঝিমিয়ে পড়ে। এরপর সারা দেশের তৃণমূলে সম্মেলনের মাধ্যমে দলকে সক্রিয় করার কার্যক্রম হাতে নেয় আওয়ামী লীগ। শুরু হয় জেলা-উপজেলা সম্মেলন।
এরই মাঝে বিএনপিসহ কয়েকটি দল সরকারবিরোধী আন্দোলনে গতি বাড়ায়, জেলায় জেলায় জনসমাগম করে শক্তি প্রদর্শন শুরু করে। আওয়ামী লীগও পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে জেলায় জেলায় সম্মেলনে জনসমাগম বাড়িয়ে দেয়। শান্তি সমাবেশের নামে শোডাউন করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়েকটি জেলায় মহাসমাবেশ করেন। সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনের মাধ্যমে রাজধানী কার্যত নিজেদের দখলে রাখে আওয়ামী লীগ।
এরই ধারাবাহিকতায় ঘটা করে বিজয় দিবস পালনের পর, ২৪ ডিসেম্বরের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে সারা দেশের তৃণমূলের কান্ডারিদের উপস্থিত করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বার্তা দেয় দলটি। ঐক্যবদ্ধ তৃণমূলই যে আওয়ামী লীগের শক্তি, তা মনে করিয়ে দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, দলের সভাপতি পবিত্র দায়িত্ব দিয়েছেন। দায়িত্ব পালনে সর্বোচ্চ উজাড় করে দেব। আমাদের মূল লক্ষ্য ২০২৪-এর নির্বাচন। দলকে ক্ষমতায় আনার জন্য যা যা দরকার, তাই করব।
আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত নেতারা জানান, তাদের সামনে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ। এরমধ্যে রয়েছে দল সুসংগঠিত করা, নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ, সারা দেশের তৃণমূলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন ও বিরোধী দলের আন্দোলন মোকাবিলা করা।
তারা জানান, সম্মেলনের মাধ্যমে দল চাঙ্গা হয়, নতুন নেতৃত্ব দলের জন্য কাজ করতে পারে।
তৃণমূলকে চাঙ্গা করতে আওয়ামী লীগের ভাবনার বিষয়ে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, দলকে শক্তিশালী করতে কমিটিগুলো ঠিকঠাক করতে হবে। কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়ে গেলে দল আপনাআপনি চাঙ্গা হয়ে যাবে।
আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, নতুন দায়িত্বকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুতনয়াকে বিজয়ী করে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে কাজ করব।
কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, সম্মেলনে সারা দেশ থেকে নেতাকর্মীদের ঢাকায় নিয়ে আসার মাধ্যমে দলের মধ্য যে শীতলতা ছিল, তা অনেকটাই কেটে গেছে। তা ছাড়া দলের সভাপতির সঙ্গে দেখা করে, তার বক্তব্য শুনে অনেকের মনে যে ক্ষোভ ছিল, তা অনেকটাই লাঘব হয়েছে।
এমনকি দলের কাউন্সিলে সভাপতির কাছে অনেক অভিযোগ করেছেন, যা দলের ভবিষ্যৎ কর্মকাণ্ড সঠিকপথে আনতে ভূমিকা রাখবে বলেও দলের নেতারা মনে করেন।
সোনালীনিউজ/এমটিআই