ঢাকা : ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রতিপক্ষ বিএনপির সব কর্মসূচিতে বিশেষ নজর রাখছে। দলটির নেতারা কে কোথায় যাচ্ছেন, কার সঙ্গে মিটিং করছেন-সব খবর রাখছে শাসক দল আওয়ামী লীগ।
নীতিনির্ধারকরা যুগান্তরকে জানিয়েছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে। বিএনপি ও তাদের মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের গতিবিধি আরও কঠোরভাবে নজরদারি করা হবে। একই সঙ্গে তাদের পালটা কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে আওয়ামী লীগ।
শাসক দলের লক্ষ্য নির্বাচন পর্যন্ত রাজনীতির মাঠ পুরোপুরি নিজেদের দখলে রাখা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ১৪ ফেব্রুয়ারি এক অনুষ্ঠানে বলেন, আমাদের (রাজনৈতিক) কর্মসূচি প্রতিদিন আছে, থাকবে নির্বাচন পর্যন্ত। ইউনিয়ন পর্যায়ে যে কর্মসূচি, তা পালটাপালটি নয়। জনগণের জানমাল রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য। তাই নির্বাচনের আগে আমাদের দলীয় কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আওয়ামী লীগ রাজপথের সংগঠন। দলের নেতাকর্মীরা এখনো রাজপথেই রয়েছে। তাই বিএনপি যদি মনে করে হুমকিধমকি দিয়ে তারা রাজনীতির মাঠ দখল করবে, সেই আশা তাদের পূরণ হবে না। তারা দেশে যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য আমরা সতর্ক রয়েছি।
আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সম্প্রতি ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। কারণ, আওয়ামী লীগ রাজপথের দল, ক্ষমতায় থাকলেও আমরা (আওয়ামী লীগ) কর্মসূচি দেব, ক্ষমতায় না থাকলেও কর্মসূচি দেব।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য অনুযায়ী ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনকে কঠিন ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের (এএলপিপি) সর্বশেষ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় এমপিদের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, এবার প্রার্থীদের নিজ যোগ্যতায় জয়ী হয়ে আসতে হবে।
টাকা খরচ করে বা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কাউকে টেনে তুলে আনা হবে না। তাই নির্বাচনের বাকি যে সময় রয়েছে, এলাকায় থেকে মানুষের জন্য কাজ করে ভোটারদের মন জয় করতে বলেন তিনি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মনে করছেন, ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি এবং তাদের মিত্ররা মাঠ দখলের চেষ্টা করছে। করোনা মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সংকটসহ বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম।
দেশের মানুষের দিন কাটছে এখন নানা সংকটের মধ্য দিয়ে। এই সুযোগে বিএনপিসহ তাদের মিত্র রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে জনসমর্থন নিজেদের পক্ষে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের পেছনে মদদ রয়েছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন শক্তির। তাই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জনমত সরকারের পক্ষে ধরে রাখার কোনো বিকল্প নেই। কারণ, এই নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে বলেই মনে হচ্ছে। সেখানে অতীতের মতো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না।
দলটির নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগ টানা ১৪ বছর ক্ষমতায় থাকায় দেশে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু সুশাসন, সব স্তরের নির্বাচনিব্যবস্থা, প্রশাসনসহ শিক্ষার মানের অবনতিতে মানুষ ক্ষুব্ধ। এই সত্য অস্বীকার করা যায় না। এসব তুলে ধরেই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে বিএনপি। তাদের কর্মসূচিগুলোয় মানুষের উপস্থিতি দিনদিন বাড়ছে। এক বছর আগেও দলটির নেতাকর্মীরা ভয়ে রাস্তায় নামেননি। কিন্তু সে অবস্থার দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। বিএনপি এখন রাজপথ দখলে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
তবে বিএনপির টানা কর্মসূচি মোকাবিলায় সরকার ও আওয়ামী লীগের চেষ্টার কমতি নেই। ক্ষমতাসীন দলটি ঘোষণা দিয়ে ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মসূচি পালন করছে। সামনে রোজার মধ্যেও আওয়ামী লীগ রাজপথে থাকবে। দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভাগীয় শহরে জনসভা করছেন। তিনি এসব জনসভায় সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে ভোটারদের কাছে ভোট চাচ্ছেন। শিগগির শেখ হাসিনা ঢাকার বাইরে আরও দুটি বড় জনসভায় বক্তৃতা করবেন বলে জানা গেছে।
এদিকে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণায় আওয়ামী লীগ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার বিষয়ে তাদের সরকারের ভূমিকা সামনে তুলে ধরার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। করোনা মহামারিতে দেশের জনগণ এর সুফল কতটা পেয়েছে, প্রচারণায় সেই বিষয়টিও জোরালোভাবে উপস্থাপন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার জনসভাগুলোয় স্মার্ট বাংলাদেশ বিষয়ে দীর্ঘ বক্তৃতা করে যাচ্ছেন।
সোনালীনিউজ/এমটিআই