ঢাকা : আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূলকে শক্তিশালী করার নানা কৌশল গ্রহণ করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।
দলীয় সূত্র বলছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। এ জয় নিশ্চিত হলে টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় বসবে আওয়ামী লীগ।
জানা গেছে, নির্বাচনে জয় নিশ্চিতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের নিয়ে বিশেষ টিম গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। যাতে করে কেউ কোনো ধরনের নৈরাজ্য, সহিংসতা, সন্ত্রাস ও ষড়যন্ত্র করতে না পারে। আর এমন কোনো আভাস পেলেই স্থানীয় প্রশাসন ও দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের অবহিত করবে এই বিশেষ টিম।
এছাড়া এই বিশেষ টিম দলের টানা তৃতীয় দফায় সরকারে থাকায় দেশের যে উন্নয়ন ও অগ্রগতি হয়েছে তা ভোটারদের কাছে তুলে ধরবে।
সূত্র জানায়, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ক্ষমতাসীন দলটির কপালে চিন্তার ভাঁজ ততটাই স্পষ্ট হচ্ছে।
কারণ ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন যতটা না সহজ ছিল, তার চেয়ে এবার অনেক কঠিন পরিস্থিতি পার করতে হবে বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ। তাই আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করুক, এটি আওয়ামী লীগ মনে-প্রাণে চায়।
তবে নির্বাচনে না এসে বিএনপি-জামায়াত যদি কোনো ধরনের নৈরাজ্য, সহিংসতা, সন্ত্রাস ও ষড়যন্ত্র করে তাহলে তাদের মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে দলটি। আগামী ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন। ফলে আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ে যেন কোনো ধরনের নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব না থাকে তার জন্য শিগগিরই বিশেষ বার্তা দেবে দলটি।
তৃণমূল পর্যায়ের দলীয় প্রতীক নৌকা পেয়ে নির্বাচিত জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের এ বার্তা পৌঁছে দেওয়া হবে। একই সঙ্গে জেলা-উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের এ বার্তা দেওয়া হবে।
আরও জানা গেছে, এসব বিশেষ টিমের নেতৃত্ব পর্যায়ে থাকবেন জেলা-উপজেলা ও ইউপি চেয়ারম্যান এবং পৌরসভার মেয়ররা। সঙ্গে দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতারাও এই বিশেষ টিমের আওতায় আসবেন এবং করবেন তদারকি। এই টিম বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে সরকারের উন্নয়ন ও অগ্রগতির তথ্য প্রচার করবে ভোটারদের কাছে।
এছাড়া সারাদেশে সাংগঠনিক সফরের মাধ্যমে দলের বিভিন্ন শাখার দ্বন্দ্ব-কোন্দল নিরসন করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। পাশাপাশি সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কার্যক্রম চলমান থাকবে। দলটির একটাই লক্ষ্য, আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলকে শক্তিশালী করা। টানা তৃতীয় মেয়াদের সরকার চতুর্থ মেয়াদে যাতে ক্ষমতায় আসতে পারে, তার জন্য যা যা করা প্রয়োজন তাই করবে ক্ষমতাসীন দলটি।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা মনে করেন, ইতিমধ্যে দলের তৃণমূলকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে এবং নির্বাচনি প্রস্তুতি হিসেবে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন জনসভা করছেন। তিনি আগামী নির্বাচনের জন্য জনগণের কাছে ভোট চাইছেন। জনগণও আওয়ামী লীগকে ভোট দেবেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে এমন ওয়াদা করছেন।
এছাড়া এই মাসেই শুরু হবে রমজান। ফলে তৃণমূলকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে দলীয় নেতারা স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন ইফতার মাহফিলে অংশ নেবেন। এছাড়া ঈদ উদযাপনে কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রী ও এমপিরাও এলাকায় যাবেন। তারা সরকারের উন্নয়ন ও অগ্রগতি তুলে ধরবেন। তৃণমূলে কোথাও যদি নেতায় নেতায় দ্বন্দ্ব ও অনৈক্য থাকে, সেখানে হস্তক্ষেপ করবেন।
এছাড়া নির্বাচনকে সামনে রেখে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও তৃণমূল নেতাদের নিয়ে করা হবে বিশেষ টিম। শিগগিরই তাদের বিশেষ বার্তা দেওয়া হবে।
এ বার্তায় উল্লেখ থাকবে, বিএনপি-জামায়াত যেখানেই নৈরাজ্য, সহিংসতা, সন্ত্রাস ও ষড়যন্ত্র করবে, সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আওয়ামী লীগের তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সবাই ঐক্যবদ্ধ। ফলে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগকে কেউ পরাজিত করতে পারবে না।
তারা বলেন, সরকারের এত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড রয়েছে, এ সম্পর্কে দেশের মানুষের কাছে তথ্য তুলে ধরা হবে। বিএনপি-জামায়াত সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। তারা দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্র করছে।
এই অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং তৃণমূল পর্যায়ের দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সতর্ক থাকবে, এমন নির্দেশনা দেওয়া হবে। কারণ বিএনপি-জামায়াতকে অনেক ছাড় দেওয়া হয়েছে। তাদের এই ধরনের অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র করে দেশের মানুষকে আর বিভ্রান্ত করার সুযোগ দেওয়া হবে না। আমাদের দলের নেতাকর্মীরা এ বিষয়ে সতর্ক রয়েছে। তাদের সামনের দিনগুলোতে সব অপপ্রচারের জবাব দিতে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় থাকবে আওয়ামী লীগ।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা তৃণমূলকে শক্তিশালী করার নানা চেষ্টা করছি। তৃণমূল নেতাদের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব রয়েছে, সেটি নিরসনে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরা কাজ করছেন। একই সঙ্গে তৃণমূলকে আরও শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
ইতিমধ্যে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়েছেন, তৃণমূল পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি, দল ও সহযোগীদের সংগঠিত করার।
যাতে আগামী নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত কোনো ধরনের সহিংসতা ও ষড়যন্ত্র করতে না পারে। ফলে আগামী নির্বাচন বিএনপি-জামায়াত বানচালের চেষ্টা করলে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের প্রতিহত করবে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতারাই মূল শক্তি। তাই তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করতে ইতিমধ্যে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের জনপ্রতিনিধি, দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা কাজ করছেন।
ভবিষ্যতে বিএনপি-জামায়াতের যেকোনো সহিংসতা, অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে মাঠে রয়েছে। এর সবকিছু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী বাস্তবায়ন হচ্ছে। তাই আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে কেউ পরাজিত করতে পারবে না।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, বিএনপি-জামায়াতের কোনো ষড়যন্ত্রকে ভয় পায় না আওয়ামী লীগ। কারণ এখন আওয়ামী লীগ কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত অনেক শক্তিশালী।
ইতিমধ্যে তৃণমূলকে আরও শক্তিশালী করতে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্থানীয় পর্যায়ে জনসভা করছেন। এতে তৃণমূল পর্যায়ে নেতাদের মধ্যে শক্তি সঞ্চয় হচ্ছে।
এছাড়া নির্বাচনের আগে তৃণমূল নেতাদের শক্তিশালী করতে আরও বেশ কিছু নির্দেশনা দেবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। সেই নির্দেশনা স্থানীয় পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া হবে। ফলে বিএনপি-জামায়াত ভবিষ্যতে আরও অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র করলে আমাদের নেতাকর্মীরা কঠোর জবাব দেবে।
সোনালীনিউজ/এমটিআই