বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ড

‘নিচে দাঁড়ানো যায় না, গরমে চামড়া পুড়ে যায়’

  • লাইজুল ইসলাম | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: এপ্রিল ১২, ২০২৩, ০৮:০৭ পিএম

ঢাকা : বঙ্গবাজারে ব্যবসায়ীদের বসার জন্য বালু ও ইট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে মাঠ। এই মাঠে খাট বিছিয়ে পণ্য বিক্রি করবেন ব্যবসায়ীরা। এতে কোনো বিপত্তি না থাকলেও বিপত্তি আছে গরম নিয়ে। তীব্র গরমে বালু আর ইটের মধ্যে খাট বিছিয়ে বসতে চাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। যারাও বসছেন তারও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। কিন্তু কিছুই বলতে পারছেন না। মার্কেটের সমিতি এতদিন যে টাকা সার্ভিসের নামে নিয়েছে সেই টাকার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারা।

রাজধানীর বঙ্গবাজার আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে বেশ কয়েকদিন আগে। এই আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে হাজার হাজার ব্যবসায়ীর স্বপ্ন। সেই স্বপ্নের সঙ্গে পুড়ছে পুরো দেশ। দেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে হিজড়া সম্প্রদায়ও বঙ্গবাজারের ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের সহায়তায় এগিয়ে আসেনি বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ী সমিতি। উপরন্ত ব্যবসায়ী নেতাদের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।

বঙ্গবাজারে কত দোকান পুরেছে তা এখনো নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারেনি। আসলেই কত দোকান রয়েছে তা নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যেই রয়েছে মতবিরোধ। এই মতবিরোধের জেরে সংঘর্ষও হয়েছে তাদের মধ্যে। যা সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। সাধারণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, হাজার হাজার দোকানীর বিপদে এগিয়ে না এসে তাদের সংঘর্ষে জড়িয়ে পরা প্রশ্নে জন্ম দিয়েছে

এদিকে, দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের জন্য পোড়া স্থানে খাট বিছিয়ে ব্যবসায় করার ব্যবস্থা করেছে। এই স্থানে বেশ কিছু ব্যবসায়ী ইতোমধ্যে খাট বিছিয়ে বসেছেন। তবে এভাবে বসে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করেছেন তারা। পরিবারকে নিয়ে বাঁচতে এখানে বসবেন, কিন্তু এই মাঠে বসে ব্যবসা করা সম্ভব না বলেই জানান তারা।

সরেজমিন পরিদর্শনে এক ব্যবসায়ী বলেন, আপাতত এখানে বসা যায়। কিন্তু সব সময়ের জন্য না। এই স্থানে ব্যবসা করতেই হবে। কারণ পরিবার নিয়ে আমাদের বাঁচতে হবে। পরিবারের আমিই একমাত্র উপার্যনক্ষম ব্যক্তি। আমি যদি না বসি তাহলে পুরো পরিবার না খেয়ে থাকবে। আমি কষ্ট হলেও এখানে বসে ব্যবসা করবো।

বঙ্গবাজারে চারটি দোকানের মালিক আক্তার সোনালীনিউজকে বলেন, ‘এখানে দাড়িয়ে ব্যবসা করতে পারবো না। দাড়ানো যাচ্ছে না। এটা দাড়ানোর পরিবেশ না। এখানে নিচ থেকে গড়ম উঠছে, উপর থেকে গরম পরছে। যা কিছু নিয়ে এখানে বসেছি সব কিছু নষ্ট হয়ে যাবে। আমরাও অসুস্থ্য হয়ে পরবো। এই অবস্থায় এখানে ব্যবসা করা কঠিন। সাধারণ ক্রেতারা এখানে আসবেই না। এত গরমের মধ্যে তারা রোজা রেখে কেনাকাটা করতে আসবে না।’

তিনি আরো বলেন, প্রতি মাসে মার্কেট কমিটি দোকান প্রতি ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত নিতো। এই টাকা নিয়ে তারা কি করেছে আমি জানিনা। আমাদের বিপদে তারা এখনো এগিয়ে আসেনি। সামনে কবে এগিয়ে আসবে জানিনা। আমাদের বসার ব্যবস্থা করলেই হবে না। আমাদের পুঁজিও লাগবে। দোকান পুরে নিস্ব হয়ে গেছি। এখন যদি আর্থিক সাহায্য না পাই তাহলে টিকতে পারবো না।

একই সময় পাশের দোকানি বলেন, এখানে দাড়ালে পায়ের ও মুখেড় চামড়া জ্বালাপোড়া করছে। একে তো তীব্র রোদ তার ওপর নিচে সব বালু। রোদের আলোয় এই বালু আগুন হয়ে উঠছে। নিচ থেকে গরম উঠছে। এর মধ্যে একদিন দাড়িয়ে থাকলে মরে যেতে হবে। এই ভাবে দোকান করা যাবে না। কাপড় নিয়ে আসলে তাও রোদের কারণে নষ্ট হয়ে যাবে। তাই আমাদের এখানে অবশ্যই ছাউনি দিতে হবে।

তিনি আরো বলেন, আমাদের নেতারা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছেন এটা দুর্ভাগ্যজনক। আমাদের বিপদে তারা কেউ এগিয়ে আসেনি। কাউকেই কোনো ধরণের আর্থিক সহায়তা করেননি।  আমাদের এখন আর্থিক সহায়তা খুব প্রয়োজন।

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের হিসেব অনুযায়ী ৩ হাজার ৮৪৫টি দোকান ছিলো। বঙ্গবাজারের ১.৭৯ একর জায়গাজুড়ে  প্রায় ২.৫ লাখ ইট বিছানো হয়েছে এবং প্রায় ১৫০ গাড়ি বালি ফেলছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এর আগে অগ্নিকাণ্ডস্থলে বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। অগ্নিকাণ্ডস্থল থেকে ১০৬০ টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে।

গত ৪ এপ্রিল সকাল ৬টা ১০ মিনিটে বঙ্গবাজারে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। পরে প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিসের ৫০টি ইউনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে তার আগেই আগুন কেড়ে নেয় সব। আগুনের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে আশপাশের মার্কেটগুলোতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

সোনালীনিউজ/এম