ঢাকা: বাংলাদেশ থেকে বিকাশের মাধ্যমে হুন্ডি হয় এমন অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। এই অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া গেছে বিভিন্ন সময়। এখনো বিকাশের মাধ্যমে হুন্ডি হচ্ছে এমন তথ্যও পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিয়ে বিকাশ কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা চেষ্টা করে যাচ্ছে হুন্ডি থামাতে। এজন্য একটি বিশেষ সমন্বিত দল কাজ করছে। বিকাশে হুন্ডি হচ্ছে এটা ধরার প্রক্রিয়া বেশ জটিল ও দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন বলে জানিয়েছে বিকাশ কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি পর্যটক যায় ভারতে। প্রতিদিন তিন চারটি স্থল, আকাশ ও রেলপথ দিয়ে কয়েক হাজার যাত্রী বাংলাদেশ থেকে ভারতে যান। আবার ভারতে চিকিৎসা ও পড়াশুনা করতেও যান অনেকে। এক্ষেত্রে তারা ব্যাংক থেকে ডলার কিনে নিয়ে যান। পর্যাপ্ত ডলার নিয়ে না গেলে ভারতে গিয়ে বিকাশের মাধ্যমে টাকা নেন বাংলাদেশীরা। টাকা বিকাশের মাধ্যমে হুন্ডি হওয়ার প্রক্রিয়াটি জানা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় অপরাধীরা।
শুধু ভারত নয় মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কিছু দেশেও বিকাশের মাধ্যমে হুন্ডি হয়। সৌদি, কুয়েত, দুবাইসহ বেশ কিছু দেশে বিকাশের মাধ্যমে টাকা লেনদেন হয়। হাজার এমনকি লাখ টাকার লেনদেনের ঘটনা আছে বিকাশের মাধ্যমে। এই অবস্থায় হুন্ডি ঠেকাতে বিকাশ অভ্যন্তরীণ একটি টিম দিয়ে কাজ চালাচ্ছে। কিন্তু হুন্ডিতে জড়িত এমন বিকাশ একাউন্ট চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া বেশ জটিল। তাই অপরাধীদের তথ্য প্রমাণসহ গ্রেপ্তার করা কঠিন।
ভারতের কোলকাতা, দার্জেলিং, সিকিম, চেন্নাই, শিলিগুড়িসহ বেশ কিছু শহরে চাইলেই বিকাশ পেমেন্টের মাধ্যমে টাকা নেয়া যায়। টাকার বিনিময়ে রুপি দেয়া হয় ঐ দিনের ডলারের বিনিময় রেট অনুযায়ী। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও একই ভাবে টাকার লেনদেন হয় বিকাশে। ম্যধপ্রাচ্য থেকে বেশির ভাগ সময় হুন্ডির মাধ্যমে দেশে টাকা আসে। যার কারণে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারায় দেশ। ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের অর্থনীতি।
পুলিশের একটি গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তা নাম পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, হুন্ডির টাকা বেশির ভাগই আসে বিকাশের মাধ্যমে। আর পাশের দেশ ভারতেও যায় হুন্ডির মাধ্যমে। এই অর্থ পাচারের মূল হোতা কখনোই ধরা পরে না। বিকাশের কিছু এজেন্ট রয়েছে এই লিস্টে। তবে একই সিম দিয়ে বা একই নম্বর দিয়ে তারা লেনদেন করে না।
বিকাশের হেড অব কর্পোরেট কমিউনিকেশনের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম সোনালীনিউজকে বলেন, বিকাশের প্রত্যেকটি এ্যাকাউন্ট আমাদের নজরদারিতে থাকে। কোন একাউন্ট থেকে কী পরিমাণ টাকা লেনদেন হয় সেটাও আমরা জানি। সার্ভারে আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স আছে। কোনো এ্যাকাউন্ট থেকে সন্দেহজনক লেনদেন হলেই এলার্ট করা হয়। আমরা ইতোমধ্যে প্রচুর এ্যাকাউন্টের তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও আইন-শৃঙ্খলা বাহীনিকে দিয়েছি। যার কারণে অনেকে আইনের আওতায় এসেছে।
বিকাশের মাধ্যমে হুন্ডি হচ্ছে এটা কর্তৃপক্ষ জানে বলেই বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এমনটাই এই কর্মকর্তার বক্তব্যে ফুটে উঠে। তবে তিনি দাবি করেন, কর্তৃপক্ষ হুন্ডির সঙ্গে জড়িত নয়। কর্তৃপক্ষ কোনো ভাবেই চায় না হুন্ডি কার্যক্রমের জন্য বিকাশ ব্যবহৃত হোক। তারপরও কিছু অসাধু মানুষ এই কাজটি করে চলেছে। যাতে কোনো ভাবেই বিকাশের মাধ্যমে হুন্ডি না হয় সেজন্য কর্তৃপক্ষ আলাদা একটি ডিপার্টমেন্ট খুলে রেখেছে।
বিকাশের কর্মকর্তাদের এখন পর্যন্ত হুন্ডির সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে এই কর্মকর্তা বলেন, আমাদের কোনো সদস্য এই কাজের সঙ্গে যুক্ত নয়। এ্যাকাউন্ট থেকে চাইলেই যে কেউ টাকা পাঠাতে পারবে না। এর জন্য আমাদের সার্ভার ব্যবহার করতে হবে। এই সার্ভারে সব তথ্য সংরক্ষণ থাকে। তাই আমাদের বেতরের কেউ হুন্ডি করতে পারে না। কিছু এজেন্ট পাওয়া যায়, যারা হুন্ডির সঙ্গে জড়িয়ে পরে।
তিনি বলেন, আমাদের আন্ত:অফিস দুটি ডিপার্টমেন্ট আছে। একটি সাসপিশাস এক্টিভিটি রিপোর্ট (এসএআর), আরেকটি সাসপিশাস ট্রানজিকশন রিপোর্ট (এসটিআর)। অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের লোকজন নিয়ে এই দুটি ডিপার্টমেন্ট গড়ে তোলা হয়েছে। যারা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিটের সঙ্গে একত্রিত হয়ে কাজ করে।
ডালিম বলেন, এই দলটির কাজ শুধু হুন্ডি লেনদেন খুঁজে বের করা। কোথাও কোনো একাউন্ট থেকে সন্দেহজনক লেনদেন হলে এই দলটি কাজ শুরু করে। তবে চাইলে যে কাউকে ধরা যায় না। কাউকে সন্দেহ হলে তাকে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আইনের আওতায় আনতে হয়। আসলে বিকাশ থেকে হুন্ডি হচ্ছে এটা খুঁজে বের করা বেশ সময় সাপেক্ষ ও কাষ্টসাধ্য কাজ। দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এদেরকে হাতের মধ্যে আনা হয়। এরপর তথ্য দেয়া হয় বাংলাদেশ ব্যাংক ও আইন-শৃঙ্খলা বাহীনির হাতে। তারাই পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহীনির এক কর্মকর্তা এই বিষয়টি নিয়ে সোনালীনিউজকে জানান, বিকাশের মাধ্যমে হুন্ডি হয় এটা সবাই কম বেশি জানে। যারা করে তারা বিকাশ একাউন্ট ব্যবহারও করে। বেশির ভাগই এজেন্ট। তাদের লেনদেন চলমান থাকে। কিন্তু এরমধ্যেই হুন্ডির টাকা লেনদেন হয়ে যায়। এই লেনদেনটি সার্ভিলেন্সে আনা বেশ কঠিন। তারপরও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। হুন্ডি চক্রের অনেকে আইনের আওতায় আসে। তবে আমাদের আরো সচেতন হওয়া দরকার।
সোনালীনিউজ/এলআই/আইএ