ঢাকা: ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিতে শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠরা। তাদের নিয়ে চিন্তত না এমন কোনো পরিবার দেশে নেই। চিন্তার ভাজ আরো বাড়ছে স্কুল খোলা নিয়ে। ১০ জুলাই থেকে সারাদেশে এক যোগে স্কুল ও মাদ্রাসা খুলছে।
আর ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে দিগুণ হারে। এই অবস্থায় অভিভাবকদের মনে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। আদতে এই পরিস্থিতিতে স্কুল কতটা নিরাপদ তা জানতে চায় পরিবারগুলো। কিন্তু এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা স্কুল কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কিছুই জানায়নি অভিভাবকদের। বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানো বা না পাঠানো নিয়ে সন্দিহান তারা।
এদিকে, স্কুল খোলা নিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও কীটতত্ববীদরাও বলছেন বিশেষ সতর্কতা গ্রহণ করতে। স্কুল খোলার আগেই পুরো স্কুল ভালো ভাবে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। প্রতিটি ক্লাসরুম, আশ-পাশের খালি স্থান ভালো ভাবে ধুয়ে মুছে পরিস্কার করতে হবে। মশা মারার ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজনে সিটি করপোরেশনের সহযোগিতা চাইতে হবে। তাদের দিয়ে লার্ভিসাইট ও ফগিং করতে হবে। ফগিং ভালো ভাবে করতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো তথ্যে দেখা যায়, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট হাসপাতালে চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৬ জুলাই পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন ১৩৪ জন। ছাড়পত্র পেয়েছেন ৯৯। বর্তমানে ভর্তি আছেন ৩৪ জন। ৬ জুলাই নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ১৩ জন। এরমধ্যে মারা গেছেন ১ জন।
[202577]
শিশুদের হাসপাতাল আরেকটি আদ-দিন মেডিকেল কলেজ হাসপতাল। এখানে ৬ জুলাই পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন ১০২ জন। ছাড়পত্র পেয়েছেন ৭৪ জন। ভর্তি আছেন ২৮ জন। ৬ জুলাই নতুন ভর্তি হয়েছেন ৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো হিসেব অনুযায়ী, ৬ জুলাই পর্যন্ত রাজধানীর সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৭ হাজার ৮৯৯ জন। ছাড়পত্র পেয়েছেন ৬ হাজার ৩৫৯ জন। এখন ভর্তি আছেন ১ হাজার ৪৯০ জন। এপর্যন্ত মারা গেছেন ৫০ জন। শুধু ৬ জুলাই রাজধানীতেই নতুন ভর্তি রোগির সংখ্যা ৪৩৩ জন।
রাজধানীর সবচেয়ে পুরাতন ও বড় স্কুলগুলোর মধ্যে একটি ভিকারুননিসা নুন স্কুল এন্ড কলেজ। বেইলী রোডে অবস্থিত এই স্কুলের পড়ুয়া এক শিক্ষর্থীর অভিভাবক বলেন, স্কুল অনেক বড় জায়গা নিয়ে। মাঠ আছে বিশাল। ক্যাম্পাসে প্রচুর গাছ আছে। পানিও জমে থাকে ভেতরের মাঠে। এই অবস্থায় ১০ তারিখ থেকে স্কুল খুলছে। আমরা জানিনা স্কুল কি পদক্ষেপ নিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্কুলের পাঠদানের সঙ্গে সম্পৃক্ত একজন বলেন, স্কুলে এত শিক্ষার্থী আছে। তাদের নিরাপত্তার কথা ইতোমধ্যে ভাবা হয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ ডেঙ্গু বা এডিস নিধনে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে বলেই আমি জানি।
এডিস মশা ও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. রিদওয়ান উদ রহমান সোনালীনিউজকে বলেন, এখন বাচ্চাদের নিয়ে চিন্তা করতে হবে। বিভিন্ন হাসপাতালে বড়দের পাশা-পাশি শিশুরোগীও বাড়ছে। শিশুদের যাতে এডিস মশা কমড়াতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বাসায় সন্ধ্যার আগে ও ভোরে মশা আটকাতে মশারি টাঙাতে হবে। মশা মারার সব ধরনের প্রস্তুতি রাখতে হবে।
শিশুর জ্বর হলে অবশ্যই সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। একটি টেস্ট করাতে হবে। ডেঙ্গু না হলে ভালো, আর হলে পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে।
কীটতত্ববীদ অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার সোনালীনিউজকে বলেন, স্কুল কর্তৃপক্ষ অবশ্যই বাচ্চাদের কথা আগে ভাববে। স্কুল খোলার আগে অবশ্যই পুরোপুরি এডিস নিধন করতে হবে। না হলে পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যেতে পারে। তাই স্কুল কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনে সিটি করপোরেশনের সহযোগিতা নিতে হবে।
তিনি বলেন, এই ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য অনেকাংশে আমরাই দায়ী। তাই এখন আমাদের নিরাপত্তা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। শুধু সিটি করপোরেশন এডিস নিধন করতে পারবে না। বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানোর সময় ফুল হাতা শার্ট ও ড্রেস পরাতে হবে। ছেলেদের ক্ষেত্রে ফুল প্যান্ট ও মেয়দের ক্ষেত্রেও ফুল প্যান্ট বা পাজামা পড়াতে হবে। এর সঙ্গে হাটু পর্যন্ত বড় মুজা পারাতে হবে। বাবা-মায়েদেরই প্রথম নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
সোনালীনিউজ/এআর