ঢাকা : বাংলাদেশের নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নীতি ঘোষণা করে গত ২৪ মে।
এর চার মাসের মাথায় গত শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বাধাদানে দায়ী ও জড়িত ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এসব ব্যক্তির মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ও বিরোধীদলের সদস্যও রয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্র ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করায় আওয়ামী লীগ সরকার একধরনের চাপে পড়েছে। তবে ক্ষমতাসীন দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা প্রকাশ্যে চাপের বিষয়টি স্বীকার করতে চান না। তারা যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকার কথা বলছেন।
অন্যদিকে, বিএনপি এই পরিস্থিতির জন্য এককভাবে সরকারকে দায়ী করছে। পাশাপাশি বর্তমান পরিস্থিতি সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে দলটি।
[207608]
সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি অবশ্য মনে করছে, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ তাদের জন্য রাজনৈতিকভাবে কিছুটা সুবিধাজনক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। কিন্তু আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের কেউ কেউ যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি প্রয়োগের বিষয়টিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।
সরকারের জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ দেশের জন্য লজ্জাজনক। এটা যেকোনো দেশের জন্য লজ্জাজনক হবে। তবে এর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে।’
আওয়ামী লীগের এই নেতা যুক্তরাষ্ট্রের নেওয়া পদক্ষেপের জন্য দায়ী করছেন বিএনপি ও জামায়াতকে।
অন্যদিকে, বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা অভিযোগ করছেন, আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক মহলের মুখোমুখি দাঁড় করাচ্ছে। এবিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বিধিনিষেধের জন্য এককভাবে সরকার দায়ী। এ ঘটনা দেশের জন্য অপমানজনক ও লজ্জাজনক।
[207544]
মির্জা ফখরুল বলেন, স্বাধীনতার ৫২ বছর পর এসে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বিধিনিষেধ এসেছে। এটি আমাদের দেশের জন্য প্রাপ্য নয়। এজন্য বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো দায় নেই, এককভাবে সরকারই দায়ী।
ভিসা বিধিনিষেধে বিরোধীদলের সদস্যদের ব্যাপারে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ নিয়ে বিএনপি চিন্তিত নয়। কারণ, সরকারের কারণেই এ ধরনের পরিস্থিতি হয়েছে। ফলে ক্ষমতাসীনদের জন্যই এটি চিন্তার বিষয়।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেন, আমরা যখন এই ভিসানীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।
[207485]
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না- জানতে চাইলে দূতাবাসের মুখপাত্র বলেন, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করবে না যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়তার কারণে নাম প্রকাশ করবে না যুক্তরাষ্ট্র বলে জানালেন ব্রায়ান শিলার।
এর আগে, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। যে সাতজনের ওপর ওই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন পুলিশের তৎকালীন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ। ওই নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা র্যাবের তৎকালীন মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এখন পুলিশের আইজি।
এমটিআই