তৃণমূলের রাজনীতি: ঠাকুরগাঁও-১

বিএনপি: আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে হটানোই মূল লক্ষ্য

  • এস. এম. মনিরুজ্জামান মিলন | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ৮, ২০২৩, ০৩:২১ পিএম

ঠাকুরগাঁও: আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজেদের ঘর গোছাতে ব্যস্ত সময় পার করছে ঠাকুরগাঁওয়ের রাজনৈতিক দলগুলো। জেলা আওয়ামী লীগ ওয়ার্ড থেকে শুরু করে ইউনিয়ন, উপজেলা সম্মেলন প্রায় শেষের দিকে। জেলার তিনটি আসনেই এবার তাদের দখলে রাখতে চায়। পাশাপাশি দেড়যুগ ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপিও তাদের শক্তির মহড়া দিতে সম্মেলন শুরু করেছে। হামলা-মামলা যতই হোক নেতা-কর্মীরা রাজপথে নতুন উদ্যমে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বিএনপি। তৃতীয় শক্তি হিসেবে জাতীয় পার্টিও তাদের শক্তির জানান দিতে সাংগঠনিক কাঠামো শক্তিশালী করতে আট-ঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছে। অন্যদিকে, রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হলেও ভিতরে ভিতরে তারা ঘর গোছাতে দু’পা এগিয়ে রয়েছেন।

রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি এস. এম. মনিরুজ্জামান মিলন।

১৯৯১ সালে ঠাকুরগাঁও সদর আসনটিতে প্রথম নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ প্রার্থী খাদেমুল ইসলামের কাছে হারেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ১৯৯৬ সালের  আওয়ামী লীগের একই প্রার্থীর কাছে হারার পর ২০০১ সালে বর্তমান এমপি রমেশ চন্দ্র সেনকে হারান তিনি। এরপর ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে আবার রমেশ চন্দ্র সেনের কাছে হেরে যান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ আসনে নানা চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তাকে। একবারবার জিতেছেন, হেরেছেন একাধিকবার। ঠাকুরগাঁও-১ আসন যেন প্রবীণ এ নেতার উত্থান-পতনের চক্রে ঘোরার গল্প।

[208498]

২০০৯ সালের ডিসেম্বরে বিএনপির ৫ম জাতীয় সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব পদে নির্বাচিত হন। মির্জা ফখরুল বিরোধী দলীয় মুখপাত্র হিসেবে গণমাধ্যমে পরিচিতি পান। ২০১১ সালের ২০শে মার্চ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ঘোষণা করা হয়। ২০১৬ সালের ১৯শে মার্চ দলটির ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেলনে মির্জা ফখরুল মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত হন।

বিরোধী দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পালনকালে মির্জা ফখরুল বিভিন্ন ইস্যুতে আওয়ামী লীগ সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন। এছাড়া দেশব্যাপী বিএনপির একাধিক বিক্ষোভ ও আন্দোলন কর্মসূচীর নেতৃত্ব দেন, যেগুলো অধিকাংশেরই কেন্দ্রে ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবী।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে অনেক বেশি পরিণত মনে হচ্ছে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে। সারাদেশের কর্মী-সমর্থকদের নজর কেড়েছেন জাতীয় রাজনীতিতে একজন পরিণত নেতা রূপে আবির্ভূত হয়েছেন তিনি। বিএনপি নির্বাচনে গেলে এবার এ আসনের ভোটারদের নিজের দিকে টেনে নিতে পারেন মির্জা ফখরুল।

ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা তৈমুর রহমান বলেন, ‘বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঠাকুরগাঁওয়ের কৃতী সন্তান। তিনি একসময় জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এ জেলার মানুষ তাঁকে অনেক সম্মান করে ও ভালোবাসে। তাই এ আসনে আগামী জাতীয় নির্বাচনে তিনিই বিএনপির একমাত্র যোগ্য প্রার্থী। নির্বাচন যদি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়, তবে বিএনপি বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপি আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন অনেক শক্তিশালী ও সুসংগঠিত। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানের নির্দেশনায় নির্বাচনের মাধ্যমে জেলা কমিটি গঠিত হয়েছে। নেতা-কর্মীরা একযোগে সরকার বিরোধী আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন। ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে কাউন্সিল করে প্রতিটা সংগঠন এখন সুসংগঠিত।’

[208499]

সোনালীনিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি বলেন, ‘সরকার বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও মামলা দিয়ে হয়রানি করে আসছে। এই ফ্যাসিস্ট সরকারের অরাজনৈতিক আচরণে আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এখন আর পেছানোর সুযোগ নাই। দুর্বার আন্দোলন করে এ সরকারকে হটানোই আমাদের মূল লক্ষ্য। মামলা-হামলা মাথায় নিয়েই নেতা-কর্মীরা মাঠে কাজ করছেন। প্রত্যেক নেতার বিরুদ্ধে ডজনখানেক করে মামলা রয়েছে। এর পরও তারা জীবন বাজি রেখে রাজপথে লড়াই করে যাচ্ছেন।’

তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচন ও বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে জেলার তৃণমূল নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে জনগণও স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজপথে নেমে এসেছে। এর প্রমাণ বিভাগীয় সম্মেলনগুলো। সরকার পরিকল্পিতভাবে জনসমাবেশ ঠেকাতে যানবাহন বন্ধ এবং যেতে বাধা দেওয়ার পরও সমাবেশগুলো মহাসমাবেশে পরিণত হচ্ছে।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে। ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপি প্রতিটি জেলা উপজেলা এবং ওয়ার্ডে কমিটি করেছে। প্রায় ৯০ ভাগ কমিটির কাজ শেষ হয়েছে।’ 

এমএস