ঢাকা : বিএনপিসহ সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে সমমনা দল ও জোটে চলছে অস্থিরতা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে নানামুখী ‘চাপে’ পড়ে এ পরিস্থিতিতে পড়েছে দলগুলো। বিশেষ করে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে নিয়ে সন্দেহের দানা বাঁধছে সমমনা দলগুলোতে। এসব দলের মধ্যে বেশ কয়েকটি শেষ পর্যন্ত লোভ-লালসার ফাঁদে পড়ে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণাও দিতে পারে বলে জানিয়েছেন নেতারা।
এর মধ্যে যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপির সমমনা ১২ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দলটির নেতৃত্বে রয়েছেন মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম।
বুধবার (২২ নভেম্বর) সংবাদ সম্মেলন থেকে এ ঘোষণা দিতে পারেন তারা। একই সঙ্গে জোটের আরেক শরিক বাংলাদেশ মুসলিম লীগও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সমমনা দলগুলোর অন্যতম এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ গতকাল এক বিবৃতিতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বার্থে সরকারের কোনো লাভ-লালসায় পা না দিয়ে চলমান আন্দোলন সফল করার আহ্বান জানিয়েছেন।
[211742]
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপিকে ভাঙার জন্য প্রতিষ্ঠার পর থেকে বারবার চেষ্টা করা হয়েছে, তবে কেউ সফল হতে পারেনি। কারণ এর ভিত্তি তৃণমূলে ছড়িয়ে আছে। এখন গণতান্ত্রিক আন্দোলন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেওয়ার জন্য ক্ষমতাসীনরা হালুয়া-রুটির ভাগ নিয়ে বসে আছেন। কিন্তু জাতীয়তাবাদী আদর্শের কেউ সেই লোভে, ভয়ে পা দেবে না।
সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে বিএনপির সমমনা প্রায় ৩৭টি দল যুগপৎ রাজপথে আছে।
এর মধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, এলডিপি, সমমনা জাতীয়তাবাদী জোট, গণফোরাম, গণঅধিকার পরিষদসহ অনেকে রয়েছে।
২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসামবেশ পণ্ড হয়ে যাওয়ার পর সর্বাত্মক আন্দোলনে নামে এসব দল ও জোট। যুগপৎ আন্দোলনে না থাকলেও জামায়াতে ইসলামী একই কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
এ ছাড়া অবরোধ কর্মসূচিকে সমর্থন জানিয়েছে ইসলামী আন্দোলন ও এবি পার্টি। এসব জোটের মধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চে ২টি নিবন্ধিত দল, ১২ দলীয় জোটে ২টি নিবন্ধিত দল রয়েছে। এ ছাড়া এলডিপি ও এনডিএম নিবন্ধিত। এর বাইরে ছয় দলীয় সমমনা ইসলামী দলের মধ্যে পাঁচটি নিবন্ধিত দল রয়েছে।
জোট নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য তাদের ওপর প্রচণ্ড চাপ রয়েছে। সরকারের বিভিন্ন জায়গা থেকে এ চাপ দেওয়া হচ্ছে এবং নির্বাচনে অংশ নিলে আসন থেকে শুরু করে আরও অনেক সুবিধা দেওয়ার লোভনীয় প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তারা। এখন পর্যন্ত তারা কৌশলী ভূমিকায় রয়েছেন। অনেকে আত্মগোপনে চলে গেছেন। অনেকে নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে স্পষ্ট জানান দিয়েছেন; অনেকে আছেন সংশয়ে। আগামী দু’এক দিনের মধ্যে তাদের বিষয় স্পষ্ট হতে পারে বলে জানা গেছে।
জোট নেতারা জানান, গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক দলগুলোকে এখন পর্যন্ত নির্বাচনে আনার কোনো তৎপরতা না থাকলেও ১২ দলীয় জোটের শরিকদের টার্গেট করা হয়েছে। ওই জোটের নিবন্ধিত দুই দল ছাড়াও জনপ্রিয় নেতাদের বিভিন্ন ‘টোপ’ দেওয়া হচ্ছে।
সূত্র জানায়, ১২ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগ নেতাদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য চাপ রয়েছে। সম্প্রতি ওই দুই দলের নেতাকর্মী কর্মসূচিতেও গরহাজির। জোটের সঙ্গেও তেমন একটা যোগাযোগ নেই ওই দুই দলের শীর্ষ নেতাদের। আর এটা নিয়েই অন্যদের মধ্যে সন্দেহ বাড়ছে।
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম জানান, তারা এখন এক দফা আন্দোলনে আছেন। নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে সবাইকে জানিয়েই নেবেন তারা।
তবে দলটির এক নেতা সমকালকে নিশ্চিত করেছেন, আজ বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা জানানো হবে। ওই নেতা জানান, তারা ১২ দলীয় জোটে আর নেই। তাদের নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টের ব্যানারে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।
মুসলিম লীগের নেতাকর্মী জানান, যে পরিমাণ চাপ রয়েছে, তা সামলানো তাদের পক্ষে অনেকটা দুষ্কর। এর পরও তারা চেষ্টা করছেন। গণতন্ত্রকামী জনগণের কাছে নিজেদের বেইমান হিসেবে উপস্থাপন করতে তারাও চান না। তবে সবকিছু আগামী দুই-এক দিনের মধ্যেই স্পষ্ট হবে।
মুসলিম লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট শেখ জুলফিকার চৌধুরী বুলবুল বলেন, তারা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছেন। সেই দাবি মানা হলে সবাইকে নিয়ে নির্বাচন করতে চান। একই সঙ্গে তিনি বলেন, তবে তাদের সামনে অনেক প্রতিবন্ধকতা আছে। এর বেশি কিছু এখন আর বলতে পারবেন না বলে জানান।
কোনো চাপ আছে কিনা, কারা চাপ দিচ্ছে– এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়েও তিনি কিছু বলবেন না। তবে সবাই বোঝে, কারা চাপ দিতে পারে। এর পরও তিনি শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করবেন ইমানের সঙ্গে রাজনীতি করতে। কতটুকু পারবেন– তা কয়েক দিনের মধ্যে জানতে পারবেন।
এমটিআই