ভোটের ব্যয় ২ হাজার কোটি টাকা ছাড়াচ্ছে

  • বিশেষ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩, ২০২৪, ১১:৩৬ এএম

ঢাকা : দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ব্যয় শুরুতে দেড় হাজার কোটি টাকা ধরা হলেও তা বেড়ে দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।

নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানান, নির্বাচন পরিচালনা ও আইনশৃঙ্খলা খাত মিলিয়ে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছিল। পরে বরাদ্দের চাহিদা বেড়ে সব মিলিয়ে ব্যয় ২০০০ থেকে ২২০০ কোটি টাকায় দাঁড়াতে পারে।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২ হাজার ২৭৬ কোটি ২২ লাখ টাকা। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চাহিদা অনুযায়ী সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ২২৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা। নির্বাচন পরিচালনা খাতে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫০ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

প্রায় ১২ কোটি ভোটারের এবারের নির্বাচনে ব্যালট পেপার ছাপানোসহ সার্বিক প্রস্তুতি গুছিয়ে এনেছে নির্বাচন কমিশন। ৬৬ জন রিটার্নিং অফিসার, ৫৯২ জন সহকারী রিটার্নিং অফিসার, প্রায় তিন হাজার নির্বাহী হাকিম এবং হাজারো বিচারিক হাকিম নিয়োজিত হয়েছে।

ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে নয় লাখের মতো জনবল থাকছেন। সেই সঙ্গে প্রায় আট লক্ষাধিক আইন শৃঙ্খলাবাহিনী ও সশস্ত্রবাহিনীর সদস্য মোতায়েন হয়েছে।

[214488]

সবশেষ ২০১৮ সালের একাদশ সংসদের তুলনায় ২০২৪ সালে ভোটার, ভোটকেন্দ্র, ভোটকক্ষ যেমন বেড়েছে; তেমনই ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, নির্বাচনি কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনি সরঞ্জামও বেশি ব্যবস্থাপনা করতে হয়েছে।

তাছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনের ব্যাপ্তি ১০ দিন থেকে বাড়িয়ে ১৩ দিন করা হয়েছে। নির্বাচন  সংশ্লিষ্টদের সম্মানীসহ জ্বালানি, পরিবহন খাতের বরাদ্দও বেড়েছে।

মঙ্গলবার বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়ে ঢাকায় নির্বাহী হাকিমদের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ইসির জন্য ১৪৫৪ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি যে-সময় বাড়ানো, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা বাড়ানো ইত্যাদি কারণে ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে।

দুই হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় লাগতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ইসি সচিব মহোদয়ের সঙ্গে আলোচনা করে ৭০২ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে দিয়েছি। বাকিটাও দেব।

# এবার ১১ কোটি ৯৭ লাখ ভোটারের এ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র ৪২ হাজারের বেশি, ভোটকক্ষ ২ লাখ ৬১ হাজারের বেশি;

# প্রতিকেন্দ্রে থাকবেন ১৫-১৭ জন নিরাপত্তা সদস্য;

# আনসার সদস্য থাকবেন ৫ লাখ ১৬ হাজার জন, পুলিশ ও র‌্যাব থাকছেন এক লাখ ৮২ হাজার ৯১ জন, কোস্টগার্ড দুই হাজার ৩৫০ জন এবং ৪৬ হাজার ৮৭৬ জন বিজিবি সদস্য থাকবেন;

# সশস্ত্রবাহিনীর সদস্য থাকছেন প্রায় অর্ধলাখ;

# চার লাখ ছয় হাজার ৩৬৪ জন প্রিজাইডিং অফিসার, দুই লাখ ৮৭ হাজার ৭২২ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং পাঁচ লাখ ৭৫ হাজার ৪৪৩ জন পোলিং অফিসার মিলিয়ে মোট নয় লাখ নয় হাজার ৫২৯ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

# ভোটারের সমপরিমাণ ব্যালট পেপার মুদ্রণ ও নির্বাচনি সরঞ্জাম কেনাকাটা করতে হয়েছে, ভোট সম্পৃক্ত সব কর্মকর্তাদের সম্মানী ভাতা বেড়েছে।

# বিদেশি পর্যবেক্ষকদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা এবং ইসি সচিবালয় ও প্রশিক্ষণেও বিপুল অর্থ খরচ হচ্ছে।

[214483]

দলীয় ও স্বতন্ত্র মিলে এবার ১৯৪০ জনের বেশি প্রার্থী রয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিসহ অংশ নিচ্ছে ২৭টি দল। বিএনপি ও সমমনাদের ভোট বর্জনের মুখে এবারও আইনশৃঙ্খলায় বেশি সময় ধরে নিরাপত্তা সদস্য মোতায়েন রাখা হচ্ছে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল রোববার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে নির্বাহী হাকিমদের প্রশিক্ষণ কর্মশালা উদ্বোধনকালে জানান, ভোট আয়োজনে প্রায় ১৬ লাখ মানুষ নানা ধরনের দায়িত্বে আছেন। এর মধ্যে ৮ লাখ সরাসরি ভোটের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বাকি অংশ আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর, তারা ভোটের অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে কাজ করছেন।

নওগাঁ-২ আসনের একজন প্রার্থী মারা যাওয়ায় ৭ জানুয়ারি ২৯৯ আসনে ভোট হবে। ওই আসনের নির্বাচন পরে অনুষ্ঠিত হবে।

যে কারণে ব্যয় বেড়েছে : ব্যয়ের দুই-তৃতীয়াংশই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পেছনে খরচ হবে বলে হিসাবে দেখা যায়।

ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার বলছেন, ভোটার সংখ্যা বাড়ায় কেন্দ্রও বেড়েছে, সেক্ষেত্রে নিরাপত্তা ব্যয়ও বাড়বে। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের সম্মানী ভাতাও বেড়েছে। নির্বাচন পরিচালনা খাতে ব্যয় যেমন বেশি হচ্ছে, নিরাপত্তা ব্যয়ও বাড়ছে।

অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান বলেছেন, এবার নির্বাচন উপলক্ষে গত নির্বাচনের প্রেক্ষিতে আরও ২০% গ্রোথ দিয়ে একটা বরাদ্দ দিয়ে রেখেছি। তারপরও এবার ইসির নির্দেশনায় ডিউটির সংখ্যা বেড়েছে, সময় বেড়েছে; এ কারণে ব্যয়ও বেড়ে গেছে।

আগের ১১ নির্বাচনের যত ব্যয়  

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: ২০১৮ সালে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা ও নির্বাচন পরিচালনার জন্য মোট ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। পরে তা আরও বেড়েছিল।

দশম সংসদ নির্বাচন: ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভোটে মোট ব্যয়ের পরিমাণ ছিল প্রায় ২৬৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে নির্বাচন পরিচালনায় ৮১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পেছনে ব্যয় হয় ১৮৩ কোটি টাকা। এ নির্বাচনে ১৪৭ আসনে ভোট হয়, ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন একক প্রার্থীরা। অর্ধেক এলাকায় ভোট করতে হওয়ায় বরাদ্দের তুলনায় খরচ অনেক কমে আসে।

[214486]

নবম সংসদ নির্বাচন: ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের ভোটে ১৬৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়; যাতে ভোটার ছিল ৮ কোটি ১০ লাখের বেশি। উপকরণ ও ব্যবস্থাপনাসহ সব খাতে ব্যয় বাড়ার কারণে ধীরে ধীরে নির্বাচনী বরাদ্দও বাড়ে।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: মোট ব্যয় হয় ৭২ কোটি ৭১ লাখ টাকা।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: পরিচালনা বাবদ ব্যয় ১১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।

ষষ্ঠ জাতীয় নির্বাচন: মোট ৩৭ কোটি টাকা ব্যয় হয়।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: পরিচালনা ও আইনশৃঙ্খলা খাতে ব্যয় হয় ২৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।

চতুর্থ সংসদ নির্বাচন: ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা।

তৃতীয় সংসদ নির্বাচন: ৫ কোটি ১৬ লাখ টাকা।

দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন: ব্যয় হয় ২ কোটি ৫২ লাখ টাকা।

প্রথম সংসদ নির্বাচন: ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ ৩ কোটি ৫২ লাখ ৫ হাজার ৬৪২ জন ভোটারের এ নির্বাচনে ব্যয় ছিল ৮১ লাখ ৩৬ হাজার টাকা।

এমটিআই