ফৌজদারি মামলায় ‘সাক্ষ্যভাতা’ চালুর উদ্যোগ

  • রোকসানা পারভীন | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ২০, ২০২৪, ০৬:২৪ পিএম
ছবি প্রতীকী।

ঢাকা: ফৌজদারি মামলায় সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত একাধিক সাক্ষী থাকেন। কোনো কোনো মামলায় একবার সাক্ষ্য দেয়ার পর আদালত পুনরায় সাক্ষী তলব করেন। আবার পুলিশের সাক্ষীদের একটা অংশ অবসরজনিত কারণে নিজ জেলায় চলে যান। ফলে দূরের জেলা থেকে কর্মস্থলের জেলায় সাক্ষী দিতে তাদের অনেক টাকার দরকার হয়। এসব কারণে সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিতে অনীহা দেখান। এমন পরিস্থিতিতে ফৌজদারী আদালতে সাক্ষীদের জন্য সাক্ষ্যভাতা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। 

গত ৩-৬ মার্চ অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসক সম্মেলনের তৃতীয় দিনের দ্বিতীয় কার্যঅধিবেশনে মাঠ প্রশাসনের পক্ষ থেকে এমন প্রস্তাব করা হলে তা বাস্তবায়নে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

[225924]

সম্মেলনের তৃতীয় দিনের দ্বিতীয় কার্য অধিবেশনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়; আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত বিষয়াবলির এই অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন  মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, বিশেষ অতিথি ছিলেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, আ্যটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন। এতে সভাপত্বি করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো: মাহবুব হোসেন।

সূত্র জানায়, ১৮৯৮ সালে প্রণয়ন করা ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ৫৪৪ ধারায় বাদী এবং সাক্ষীদের খরচ দেয়ার কথা উল্লেখ আছে। তবে এই আইনে বলা হয়েছে সরকারের প্রণয়ন করা কোনো বিধি সাপেক্ষে এই খরচ দেয়া যাবে। কিন্তু আইনটি প্রণয়নের একশ’বছর পরও কোনো বিধি প্রণয়ন করেনি দেশের কোনো সরকার।

[225914]

তবে ১৯৮২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ও একই বছরের ৬ অক্টোবর তৎকালীন সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের (বর্তমান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়) সংস্থাপন বিভাগ দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করে সাক্ষীদের দৈনিক খাবার বাবদ ২০ টাকা, রাত্রি অবস্থানের জন্য হোটেল খরচ বাবদ ১০ টাকা, ৫ মাইলের মধ্যে আসা-যাওয়ার গাড়ি ভাড়া ৫ টাকা, ১০ মাইলের মধ্যে সাড়ে ৭ টাকা, ২০ মাইলের মধ্যে সাড়ে ১২ টাকা ও ২০ মাইলের অধিকের জন্য ১৫ টাকা গাড়ি ভাড়া বাবদ খরচ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলো। তবে ২০০৭ সালে বিচার বিভাগ পৃথক হওয়ার পর তা বন্ধ রয়েছে।

এছাড়া জেলা প্রশাসক সম্মেলনে আদালত অবমাননার মামলা যাতে শুধুমাত্র মূল অবমাননাকারির বিরুদ্ধে হয় সে বিষয়ে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষের প্রস্তাব করেন চাপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক। 

খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক বলেন, বিচারিক আদালতের রায় বাংলায় প্রদান করা যেতে পারে। এছাড়া রায়ের অনুলিপি যাতে অনলাইনে সংগ্রহ করা যায় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।

[225903]

সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব বলেন, ফৌজদারি আদালতে সাক্ষীদের জন্য সাক্ষ্যভাতা প্রদানের জন্য কার্যক্রম চলমান আছে। আগামি বছর থেকে বরাদ্দ প্রদান করা হবে। আইন ও বিচার বিভাগ কর্তৃক অনলাইনে বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রেশনের জন্য এটুআই এর সহযোগীতায় সফটওয়্যার নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রাথমিক পর্যায়ে দশটি উপজেলায় পাইলটিং করা হবে। পরবর্তীতে সারাদেশে এর কার্যক্রম শুরু হবে। ইতমধ্যে ১৭টি সাব রেজিস্ট্রি অফিস ও উপজেলা ভূমি অফিসের মধ্যে আন্ত:সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া অচিরেই ই রেজিস্ট্রেশন এর কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।

আ্যটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন বলেন, সরকারি স্বার্থ সংশ্লিষ্ট মামলাসমূহের জবাব সলিসিটর উইং এর মাধ্যমে প্রেরণ করা হয়ে থাকে। অনেক সময় জবাবের কাগজ পেতে বিলম্ব হয়, সেক্ষেত্রে সলিসিটর উইং এ প্রেরনের পাশাপাশি একটি করে কপি আ্যটর্নি জেনারেল অফিসে পাঠানোর জন্য তিনি অনুরোধ করেন। রীট পিটিশন সাধারণত কোন পদের বিপরীতে হয়ে থাকে তবে কারো নামের বিপরীতে হয়ে থাকলে আ্যটর্নি জেনারেল অফিসে জানাতে হবে। 

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ইনডিপেনডেন্ট প্রসিকিউশন সার্ভিস চালুর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন করা হলে অভিজ্ঞরা সরকারি মামলা মোকদ্দমা পরিচালনা কার্যক্রম করতে পারবে। কোন সরকারি মামলা যাতে তামাদি বা দোষে বারিত না নয় সে বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে ও গুরুত্ব সহকারে কার্যক্রম নিতে হবে। আইন মন্ত্রণালয় কর্তৃক তৈরিকৃত সফটওয়্যার ব্যবহারের জন্য সবাইকে অনুরোধ করেন তিনি। এছাড়া মামলাজট কমানোর জন্য সঠিক সময়ে মামলার যথাযথভাবে জবাব আদালতে দাখিলের জন্য তিনি জেলা প্রশাসকদের সহযোগীতা চান।

এসআই/আইএ