ঢাকা : আন্দোলনে দলীয় ব্যর্থতার চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে যৌথসভায় বসছে আওয়ামী লীগ। ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ এবং সব সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে আগামীকাল মঙ্গলবার বৈঠকের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। ওইদিন বেলা ১১টায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করবেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
রোববার (২৮ জুলাই) আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়ার স্বাক্ষর করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাসময়ে সভায় উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকাসহ সারা দেশে রাজনৈতিক দুর্বলতা নিয়ে বড়-ছোট বৈঠক অব্যাহত রাখবে আওয়ামী লীগ। ঢাকা শেষ করে সারা দেশের বিভিন্ন পর্যায়েও বৈঠক শুরু করবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তবে এই প্রথম কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে চাপ সৃষ্টি করছেন আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা। কোনো কোনো কেন্দ্রীয় নেতার প্রতি আস্থা হারানোর মতো চিত্রও ফুটে উঠেছে কর্মী-সমর্থক একাংশের মধ্যে।
[228306]
বৈঠকের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য নাম প্রকাশ না করে বলেন, দুর্বলতা চিহ্নিত করা ও প্রতিকারের উপায় বের করার জন্যই এ সভা ডাকা হয়েছে। তবে অন্য সময়ের মতোই এ সভাগুলো নিষ্ফল হবে বলে তিনি মনে করেন।
সভাপতিমণ্ডলীর এ সদস্য বলেন, ‘আমরা প্রায় সবসময়ই যৌথসভা, সাংগঠনিক সভায় বসি। কিন্তু সেসব সভায় কোনো আলোচনা ছাড়াই একটি বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে যেত। সামনের সভাগুলোর অবস্থাও যদি ১৫ মিনিটের আলোচনায় শেষ হয়ে যায় তাহলে কোনো লাভ হবে না। বৈঠকগুলো কার্যকর হতে হবে।’
বৈঠক করে খুব উন্নতি করা সম্ভব হবে না বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে উপকমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘এগুলো মূলত দুর্বলতা ঢাকার এক ধরনের কৌশল।’
তার দাবি, গত ১৫ বছরে দলের মধ্যে একটি শ্রেণি গড়ে উঠেছে। তারা ছোট্ট ছয়টি শব্দ দিয়ে রাজনীতি করছে ‘কত নেবা, কত দিবা ও কত খাবা’? এ ছয়টি শব্দের রাজনীতির চর্চা যারা করে তাদের দল থেকে বের করতে না পারলে কোনো সুফল আসবে না।
[228313]
তিনি বলেন, এ ছয়টি শব্দের রাজনীতি করা সবাই প্রভাবশালী মন্ত্রী ও নেতাদের ছত্রছায়ায় বেড়ে উঠেছে। এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা থাকবেন না বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কর্মী-সমর্থকরা থাকবেন? এ সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগকেই নিতে হবে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একটি অংশও মনে করেন, লেনদেন পুঁজি করে যারা রাজনীতি করছেন তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে সাংগঠনিক অবস্থা কখনোই ভালো হবে না। সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হলে নির্মোহ হতে হবে, নির্মোহভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তা না হলে ঐতিহ্যের আওয়ামী লীগ ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারবে না।
নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এ নেতারা প্রায় সবাই নিশ্চিত করেছেন, দলকে শক্তিশালী করার বেশ কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। তবে এখন লক্ষ্য একটাই, তা হলো পরিস্থিতি সামাল দেওয়া। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নিজেও দলের দুর্বলতা ওয়াকিবহাল হলেও তার ধ্যানজ্ঞান এখন দেশের পরিস্থিতি সত্যিকার অর্থেই স্বাভাবিক করে তোলা।
[228307]
এমন মতের সমর্থক সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, কোটা আন্দোলনে দলের যে ভূমিকা তাতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতি পূরণ করতে হলে কর্মীদের মধ্য থেকে পরিবর্তনের যে আওয়াজ উঠছে সেটিকে গুরুত্ব দিতে হবে। কর্মীদের আর্তনাদ শুনতে হবে। তা না হলে নেতারা বিপদে পড়বে, দলকেও উদ্ধার করা সম্ভব হবে না। সময় এসেছে কর্মীদের পরামর্শ গ্রহণ করার।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, গত ১৫ বছর নেতাদের সিদ্ধান্তমতো কর্মীরা পরিচালিত হয়েছে। এখন এমন সময় সামনে এসেছে কর্মীদের পরামর্শ গ্রহণ না করলে অপূরণীয় ক্ষতি হবে। তিনি বলেন, ‘যেখানেই যাচ্ছি কর্মী-সমর্থকদের দাবি শুনতে পাচ্ছি সংগঠন সাজাতে হবে। সংগঠন শক্তিশালী না করলে কোনো কিছুই ঠিক থাকবে না।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, কর্মী-সমর্থকরা বেশ সোচ্চার সংগঠন শক্তিশালী করার ব্যাপারে। অনেকেই ফোন করে, মেসেজ দিয়ে সরাসরি দেখা হলে অনেকটা আকুতির ভঙ্গিতেই দল শক্তিশালী করার দাবি তুলছেন। কর্মীরাই আওয়ামী লীগের প্রাণ, ফলে নিশ্চয়ই কিছু একটা হবে।
দলের আরেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, সামনের দিনগুলোতে আওয়ামী লীগকে অনেক কাজ করতে হবে। এখন তারই কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। সূত্র : দেশ রূপান্তর
এমটিআই