নির্বাচনি রোডম্যাপ বিএনপির, সম্ভাব্য প্রার্থীদের খোঁজে হাইকমান্ড

  • বিশেষ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৫, ২০২৫, ১১:০৪ এএম

ঢাকা : গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যেতে দেশে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের জন্য বিএনপির দাবি জোরালো হচ্ছে।

‘নির্বাচন আগে নাকি সংস্কার আগে’ এই নিয়ে চায়ের টেবিলে যখন ঝড় তোলা হচ্ছে, এমন সময় নির্বাচনের জন্য জুলাই-আগস্টের মধ্যে সময় বেঁধে দিচ্ছে রাজপথের প্রধানদল বিএনপি। নির্বাচনের দাবিতে দলটি কর্মসূচিতে যাওয়ার বিষয়েও দলীয় ফোরামে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

দলীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে খুব শিগগিরই মাঠের কর্মসূচিতে সোচ্চার হবে বিএনপি। সংস্কারের বিষয়ে বিএনপি মনে করে, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। রাষ্ট্রের সংস্কারের জন্যে তারা ২০১৬ সালে ‘ভিশন-২০৩০’ উপস্থাপন করেছে। ২০২৩ সালে ৩১ দফা দিয়েছে। এর মধ্যেই সংস্কারের প্রস্তাবনা দেওয়া আছে।

[241790]

এছাড়া যুগপৎ আন্দোলনে থাকা রাজনৈতিকদল ও জোটের নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছেন দলটির দায়িত্বশীল জ্যেষ্ঠ নেতারা। ঐকমত্যের ভিত্তিতেই তারা নির্বাচনের দাবিতে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবেন।

এদিকে দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি স্বচ্ছ ও যোগ্য ব্যক্তিদের বাছাই করেই আগামীদিনে ভোটের মাঠে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিতে চান। বিতর্কিত ব্যক্তিদের এবারের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না দিয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন তিনি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলেন, ‘এটা খুবই সেনসেটিভ ইস্যু। এটা নিয়ে কথা বলা যাবে না। বিএনপি একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। বিএনপি ভোটের জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকে। ৩০০ আসনে সার্ভে করার জন্য একাধিক সংস্থা কাজ করছে। সবার সার্ভে করা তথ্য একত্রিত করে দলের সর্বোচ্চ নীতি নিধারণী ফোরামে আলোচনা করে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘গণতন্ত্রের প্রথম ধাপ হচ্ছে নির্বাচন। এটা দিয়েই সংস্কার শুরু করতে হবে। আগামী দিনে সবার পরিবর্তনের যে আকাঙ্খা এটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াই হতে হবে।’

আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা শরিকদলগুলোকে সমান সুযোগ দিতে চায় দলটি। ফলে শরিক দলগুলো যাতে নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায় নির্বিঘ্নে গণসংযোগ করতে পারে সেজন্য বিএনপির কেন্দ্র থেকে দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া আছে। কোথাও কোথাও ইতোমধ্যে চিঠির মাধ্যমেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।

[241743]

আগামী জুলাই-আগস্টের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা সম্ভব এবং এ ব্যাপারে উদ্যোগে নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এ আহ্বান জানান।

এসময় মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘আমরা বার বার করে বলছি যে, নির্বাচিত সরকারের কোনো বিকল্প নাই। এটা গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা মনে করি যে, এই বছরের মাঝামাঝি সময়ে অর্থাৎ জুলাই-আগস্টের মধ্যেই নির্বাচন সম্ভব।’

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘আমরা সরকারকে আহ্বান জানাতে চাচ্ছি, নির্বাচন কমিশনকেও আহ্বান জানাচ্ছি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিও আহ্বান জানাচ্ছি; দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এই বছরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি।’

বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, ‘নির্বাচন বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার যে বক্তব্য ছিল, এই বছরের শেষের দিকে অথবা পরবর্তী বছরের অর্থাৎ ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে… এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে গতকাল (সোমবার) দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হয়েছে। আমরা মনে করি যে, এত বিলম্বিত করার কোনো কারণ নেই।’

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সংস্কার সংক্রান্ত কমিশনের রিপোর্ট এসে যাবে এমনটা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সুতরাং মনে হয় না, আর বিলম্বিত করার কোনো কারণ আছে। যত বিলম্ব হচ্ছে ততই রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট বৃদ্ধি পাচ্ছে।’

[241734]

বিএনপি আগে সংসদ নির্বাচন চায় : বিএনপি দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে নির্বাচিত সরকারের প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছে। যে কারণে দলটি জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন চাচ্ছে না। ফলে দলটি পরিষ্কার ঘোষণা দিয়েছে ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রশ্নই ওঠে না।’

এ প্রসঙ্গে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রশ্নই ওঠে না। আমরা আগে সংসদ নির্বাচন চাই।’

দলটির আরেক নেতা ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, স্থানীয় সরকারের তৃণমূল স্তর হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ। সেই ইউনিয়ন পরিষদই তো সরকার বাতিলই করেনি। সেটা যদি বাতিল না করে সেখানে কীভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হবে?’

বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিশ্ব মহলের আগ্রহ : দেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন কবে হতে যাচ্ছে এই নিয়ে বিশ্বমহলেরও আগ্রহ রয়েছে। সম্প্রতি এই নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের আলোচনা হয়।

গত রোববার (১২ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে বিএনপির মহাসচিবসহ দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ অংশ নেন।

বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, বৈঠকে নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যত তাড়াতাড়ি ফিরে যাওয়া সম্ভব, বিএনপির পক্ষ থেকে সেদিকেই জোর দেওয়া হয়েছে।

বৈঠকের পর আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে যে বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ, সবার মনে প্রশ্ন আছে, সেই বিষয়গুলো বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে। একটি হচ্ছে নির্বাচন, কবে নির্বাচন হতে যাচ্ছে, আমাদের ভাবনা কী? সংস্কারের ব্যাপারে আমাদের ভাবনা কী? মূলত নির্বাচনের রোডম্যাপ—এই বিষয়টা নিয়েই আলোচনা হয়েছে।

আমাদের পক্ষ থেকে আমরা যেটা বলে আসছি, এই বছরের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন হওয়া অত্যন্ত জরুরি। অন্য কোনো ভাবনার দিকে না গিয়ে সরাসরি জাতীয় নির্বাচনের দিকে গিয়ে দেশে আগামীদিনে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার জন্য একটা নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা প্রয়োজন।’

আমীর খসরু আরও বলেন, ‘অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একটি দেশ বেশি দিন চলতে পারে না। অগণতান্ত্রিক সরকারের রাজনৈতিক ওয়েট (ওজন) থাকে না, মবিলাইজেশন প্রসেস (সংহত করার প্রক্রিয়া) থাকে না, জনগণের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকে না, জনগণের কাছ থেকে কোনো ফিডব্যাক (প্রতিক্রিয়া বা মতামত) পাওয়া যায় না। সুতরাং একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যত তাড়াতাড়ি ফিরে যাওয়া সম্ভব, সেদিকে আমরা জোর দিয়েছি।’

[241764]

নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত শরিকরাও : এদিকে দ্রুত জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সমমনা রাজনৈতিকদল, যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদলগুলোর আগ্রহ বাড়ছে। তারাও চলতি বছরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন চায়। নির্বাচন নিয়ে তাদের রাজনৈতিক প্রস্তুতিও আছে। সাংগঠনিক প্রস্তুতি নিতে দলগুলোর নেতারা নিজ নিজ এলাকায় গণসংযোগ করে যাচ্ছেন বলেও জানা গেছে।

জানতে চাইলে গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, নির্বাচনের জন্য আমাদের রাজনৈতিক প্রস্তুতি আছে।

এখন সংগঠন গোছানো, এলাকায় যাওয়া ও গণসংযোগের কাজ চলছে। এখন বিভিন্ন এলাকায় আমাদের নেতৃবৃন্দ যাচ্ছেন, কথা বলছেন, নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

যুগপৎভাবে নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নে সাইফুল হক বলেন, আমরা প্রথমত দলগতভাবে যাব। তবে বাকিদের সাথে বোঝাপড়াটা কীভাবে হবে, সেটা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

[241789]

কখন নির্বাচন হতে পারে সে ব্যাপারে জানতে চাইলে সাইফুল হক আরও বলেন, সরকারের সদিচ্ছা থাকলে জুলাই-আগস্টের আগেও করা সম্ভব। এটা সরকারের সাথে আলাপ-আলোচনা করে এক-দুমাস এদিক-ওদিক হতে পারে। সরকার যদি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখে এটা নিয়ে সমস্যা হবে না।

বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, ডিসেম্বরের ১ তারিখ ১২ দলীয় জোট প্রথম দাবি তুলে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন দেওয়ার জন্য। বিএনপিও কাছাকাছি সময়ের মধ্য আজকে দাবি জানাল। আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। আমরা বিশ্বাস করি, এই সময়ের মধ্যে অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেওয়া সম্ভব।

এমটিআই