বাঁকানো ফ্রি কিকে দেখার মতো এক গোল করলেন লিওনেল মেসি। দল হলো আরও উজ্জীবিত। খেলায় ফিরতে মরিয়া চিলির রক্ষণ স্বাভাবিকভাবেই আগের মতো আঁটসাঁট থাকলো না আর। কিন্তু সেই সুযোগটা আর্জেন্টিনা নিতে তো পারলোই না, উল্টো হজম করলো গোল! এরপর আরও কত চেষ্টা, কিন্তু কিছুতেই খুললো না চিলির রক্ষণ-দুয়ার। ফলে ২০২১ কোপা আমেরিকা মিশন শুরু হলো আর্জেন্টিনার পয়েন্ট হারিয়ে।
সোমবার রাতে নিলতন সান্তোস স্টেডিয়ামে চিলির সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করেছে আর্জেন্টিনা। প্রথমার্ধে মেসির ফ্রি কিক গোলে আলবিসেলেস্তেরা এগিয়ে গেলেও দ্বিতীয়ার্ধে এদুয়ার্দো ভার্গাসের গোলে সমতায় ফেরে চিলি। চলতি মাসের শুরুতে এই চিলির বিপক্ষে লাতিন আমেরিকার বিশ্বকাপ বাছাইয়েও একই স্কোরলাইনে ড্র করেছিল আর্জেন্টিনা।
চিলির বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাই ম্যাচে পয়েন্ট হারানোর পরও তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলেছিলেন মেসি। কারণ একটাই- তরুণ দলের ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠা। সেই চিলির বিপক্ষে কোপা আমেরিকায় নিজেদের উদ্বোধনী খেলায় দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিলেন সময়ের সেরা খেলোয়াড়। বড় ক্যানভাস বাঁ পায়ের তুলিতে আঁকলেন আপন মনে। শুধু বার্সেলোনায় নয়, আর্জেন্টিনার জার্সিতেও পাওয়া গেলো সেই চিরচেনা বাঁকানো ফ্রি কিক। তাতে তিনি গোল করে দারুণ ভিত তো গড়ে দিলেন, তবে সেখানে দাঁড়িয়ে পারফর্ম করতে পারলো না আর্জেন্টিনা। ফলে ড্র করে পয়েন্ট হারালো চিলির কাছে।
১৬ মিনিটে আর্জেন্টিনা পায় ম্যাচের প্রথম ভালো সুযোগ। কিন্তু দুর্বল শটে তা নষ্ট করেন লাউতারো মার্তিনেস। মিনিট দুয়েক পর আরও বড় ভুল ইন্টার মিলান ফরোয়ার্ডের। এবারও ফাঁকায় থেকেও ঠিকমতো শট নিতে পারেননি তিনি।
সুযোগ নষ্টের ধারার বিপরীতে এসে ৩২ মিনিটে আলবিসেলেস্তেরা পায় কাঙ্ক্ষিত গোল। এবং যথারীতি মেসির সৌজন্যে। নিজেদের বক্সের ঠিক সামনে চিলি মিডফিল্ডার এরিক পুলগার বাধা দিতে গিয়ে ফাউল করে বসেন জিওভানি লো সেলসোকে। তাতে ফ্রি কিক পেলে মেসি বাঁকানো শটে করেন দেখার মতো এক গোল। চিলির বানানো মানব দেয়ালের ওপর দিয়ে তার মাপা শট জালে জড়িয়ে যায়, গোলকিপার ক্লাউদিও ব্রাভো লাফিয়েও কিছু করতে পারেননি।
ওই গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় আর্জেন্টিনা। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে যেন তারা অন্য দল! বিপরীতে চিলি হয়ে ওঠে মারাত্মক আক্রমণাত্মক। এগিয়ে আছে বলে আর্জেন্টিনা বেশিমাত্রায় রক্ষণশীল হয়ে উঠলো নাকি চিলি ঝাঁপিয়ে পড়লো, সেই প্রশ্ন মেলানোর আগেই চিলির ছোবল। আর্জেন্টিনার দুর্বল রক্ষণের ফায়দা তুলতে না পারলেও ঠিকই পেনাল্টি আদায় করে নেয় লা রোজা। ৫৩ মিনিট থেকে রিও ডি জেনেইরোয় নিলতন স্টেডিয়ামে নাটকীয় পরিস্থিতি!
আর্জেন্টিনার রক্ষণের ভুলে একেবারে ফাঁকায় বল পেয়ে যান ভার্গাস, কিন্তু তার শট গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেস দারুণ দক্ষতায় প্রতিহত করেন। ফিরতি বলে আর্তুলো ভিদাল শট নিলে তাকে ফাউল করে বসেন নিকোলাস তাগিয়াফিকো। জমে যায় নাটক। চিলি পেনাল্টির আবেদন করলে সিদ্ধান্ত যায় ভিএআরের কাছে। পরবর্তীতে রেফারি সাইড স্ক্রিনে দেখে সিদ্ধান্ত দেন পেনাল্টির।
এখানেই শেষ নয়, পেনাল্টিতে আরেক নাটক। আগের পাঁচ স্পট কিকের সবক’টি জাল খুঁজে নেওয়া ভিদালকে রুখে দেন আর্জেন্টাইন গোলকিপার এমিলিয়ানো। কিন্তু দুর্ভাগ্য আলবিসেলেস্তেদের, গোলকিপারের হাতে লেগে বল বারে প্রতিহত হয়ে ফিরে এলে ফিরতি বল হেডে জালে জড়িয়ে দেন ভার্গাস ৫৭তম মিনিটে। আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়রা ‘আপত্তি’ জানালে আবার ভিএআরের সাহায্য। কিন্তু সিদ্ধান্ত আর্জেন্টিনার পক্ষে আসেনি। গোল বহাল রাখলে সমতায় ফেরে চিলি।
আরেকটি গোলের জন্য মেসিরা কম চেষ্টা করেনি। মেসি একের পর এক বল বানিয়ে দিয়েছেন কিংবা নিজে শট নিয়েছেন, কিছুতেই কাজ হয়নি। ৭১ মিনিটে যেমন বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া বার্সেলোনা ফরোয়ার্ডের শট ঝাঁপিয়ে প্রতিহত করেন ক্লাউদিও ব্রাভো। চিলি গোলকিপার বল গ্রিপে নিতে না পারলেও অসুবিধা হয়নি সামনে কোনও আকাশি-সাদা জার্সি খেলোয়াড় না থাকায়।
মিনিট দশেক পর আর্জেন্টিনার এগিয়ে যাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু ওই যে ফরোয়ার্ডে গোল করার কেউ ছিলেন না! মেসির বাড়ানো চমৎকার লব হেলায় নষ্ট করেন নিকোলাস গনসালেস। একেবারে ফাঁকায় বল পেয়েও হেড করেন বারের ওপর দিয়ে। হতাশা বাড়ে আর্জেন্টিনা ক্যাম্পে।
সেই হতাশা দ্বিতীয়ার্ধের ইনজুরি টাইমের ৯ মিনিটের শেষ পর্যন্ত চলেছে। সের্হিয়ো আগুয়েরো ও আনহেল দি মারিয়াকে নামিয়েও কাজ হয়নি আর্জেন্টিনায়। ফলে পয়েন্ট হারিয়ে কোপা অভিযান শুরু হলো মেসিদের।
সোনালীনিউজ/এইচএন