ঢাকা : বাংলাদেশে খেলতে এসে অদ্ভূত সব শর্ত জুড়ে দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। যার মধ্যে ছিল ছক্কার মাধ্যমে গ্যালারিতে যাওয়া বলও আর মাঠে ঢুকতে পারবে না। পাঁচ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের জন্য ম্যাচ অফিসিয়ালদের মজুত রাখতে হয়েছে অনেকগুলো বল।
যদিও করোনার কারণে সিরিজে দর্শক ছিলনা, গ্যালারি ছিল ফাঁকাই। ফলে গ্যালারিতে আছড়ে পড়া বল কুড়িয়ে আনলে ঝুঁকির কিছু ছিল না। এরপরও অজিদের কঠোর শর্ত অনুযায়ী মাঠের বাইরে গেলে সেই বল আর মাঠে ঢোকানো হয়নি। সেই বল স্যানিটারাইজ করে পরের ম্যাচে ব্যবহারের জন্য রেখে দেওয়া হয়েছে। ’
এমনকি বল বয়ের মত মাঠ ঘেঁষে থাকার অনুমতি ছিলনা সম্প্রচারের দায়িত্বে থাকা কর্মীদেরও। মাঠে ছিল ২০টি ক্যামেরা। আর প্রত্যেক ক্যামেরা ক্রুকে বাউন্ডারি লাইন থেকে ১৫ মিটার দূরে নিজেদের যন্ত্রপাতি নিয়ে অবস্থান করতে হয়েছে। খেলা চলাকালে মাঠের ভেতর কোনো ক্রুকে থাকতে দেওয়া হয়নি।
এছাড়া পাঁচ তারকা হোটেল সম্পূর্ণ খালি করে পুরোটাই ভাড়া নেওয়া হয়। সেই সাথে কঠোর জৈব সুরক্ষা বলয় তৈরিসহ নানান নিয়মে বাংলাদেশকে বেধে দেয় অস্ট্রেলিয়া। দলের অনুশীলনের সময় মাঠেও অন্য কাউকে ঢুকতে নিষেধ করে তারা।
এমনকি বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের ওপরেও তারা নানান নিয়মের বেড়াজাল চাপিয়ে দিয়েছে। সিরিজ শুরুর ১০ দিন আগে জৈব সুরক্ষা বলয়ে ঢুকতে না পারায় তো দলেই ঢুকতে পারলেন না মুশফিকুর রহিম। আবার মাঠে বাংলাদেশ দলকেও পানীয় ব্যতীত কোনো খাবার খেতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে অস্ট্রেলিয়া।
এমন সব শর্তে সফরত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৫ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ দল। ৫ ম্যাচে টি-টোয়েন্টি সিরিজ ৪-১ এ জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচে ১৪ রানে শেষ ৭ উইকেট হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের সর্বনিম্ন ৬২ রানে অল-আউট হল অজিরা।
এই সিরিজে তাদের নিয়মিত অধিনায়কসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র ক্রিকেটার আসেনি। কেন তারা এই সিরিজকে তেমন গুরুত্বই দেনি। এই সিরিজ হারাকে তেমন কিছুই মনে করেনিন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক উইকেটকিপার–ব্যাটসম্যান অ্যাডাম গিলক্রিস্ট।
উল্টো তিনি বললেন, বাংলাদেশে যে কন্ডিশনে অস্ট্রেলিয়া খেলছে, আগামী টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কন্ডিশন এর চেয়ে অবশ্যই অনেকটা ভালো থাকবে, ‘আমি মনে করি না বাংলাদেশে অস্ট্রেলীয় দলের পারফরম্যান্স, সিরিজ হার এসব নিয়ে চিন্তিত হওয়ার খুব একটা কারণ আছে। এ দলে অ্যারন ফিঞ্চ ফিরবে, ডেভিড ওয়ার্নার, স্টিভ স্মিথরাও ফিরবে। মারনাস লাবুশেন কিংবা মার্কাস স্টয়নিসদেরও যদি যোগ করা হয়, তাহলে ব্যাটিংয়ের চেহারাটা তো এমন থাকবে না।’
সাবেক এই তারকা আরো বলেছেন, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এশিয়াতে হলেও সেখানে কোনোমতেই বাংলাদেশের মতো কন্ডিশনের মুখোমুখি কাউকে হতে হবে না, ‘টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কন্ডিশন পুরোপুরি ভিন্ন হবে। সেখানে বল নিয়ে না ভেবে সবাই ব্যাটিংয়ে কীভাবে চার-ছয় মারবে, সেটি নিয়েই ভাববে।’
এদিকে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ শেষ হতে না হতেই বাংলাদেশ সফরের আসছে নিউজিল্যান্ড। এরই মধ্যে বাংলাদেশ সফরের জন্য দল ঘোষণা করেছে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড। আগামী ২৪ আগস্ট কিউইরা বাংলাদেশ সফরে আসবে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে।
তবে বাংলাদেশ সফরের দলে কিউইদের নিয়মিত অধিনায়ক কেইন উইলিয়ামসন আসছে না। এ ছাড়াও ১০ জন ক্রিকেটারকে পাচ্ছে না দল। টম ল্যাথামকে অধিনায়ক করে ১৫ সদস্যের দল দিয়েছে কিউই ক্রিকেট।
তাদের ঘোষিত দলে রয়েছে টম ল্যাথামকে অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দলে রয়েছেন ফিন অ্যালেন, হামিশ বেনেট, টম ব্লান্ডেল (উইকেট রক্ষক), ডগ ব্রেসওয়েল, কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম, জ্যাকব ডাফি, স্কট কুগেলেজন, কোল ম্যাকননিক, হেনরি নিকোলস, আজাজ প্যাটেল, রচীন রবীন্দ্র, বেন সিয়ার্স, ব্লেয়ার টিকনার এবং উইল ইয়াং।
যাদের মধ্যে দুই একজন ছাড়া বেশির ভাগই নতুন। এমনকি টি-২০ বিশ্বকাপের জন্য ঘোষিত দলে একজনও নেই। সুতরাং বুঝায়ই যাচ্ছে বাংলাদেশ সিরিজ নিয়ে তাদের কোন গুরুত্ব নেই। শুধু খেলার জন্য খেলা। তাদের এমন আচরণ বুঝায় যাচ্ছে বাংলাদেশকে কোন ভালো দলের মধ্যেই গন্য করা হয় না। যা বাংলাদেশের জন্য অপমানের।
নিউজিল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দল : কেন উইলিয়ামসন (অধিনায়ক), টড অ্যাস্টল, ট্রেন্ট বোল্ট, মার্ক চ্যাপম্যান, ডেভন কনওয়ে, লকি ফার্গুসন, মার্টিন গাপটিল, কাইল জেমিসন, ডেরিল মিচেল, জিমি নিশাম, গ্লেন ফিলিপস, মিচেল স্যান্টনার, টিম সাইফার্ট, ইশ সোধি, অ্যাডাম মিলনে (১৬তম সদস্য)।
সোনালীনিউজ/এমএএইচ