ঢাকা: বিদায়বেলায় শরীরটা বড্ড কষ্ট দিয়েছে কিংবদন্তি ফুটবলার বাদল রায়কে। ২০১৭ সালে ব্রেন স্ট্রোক দিয়ে শুরু। এরপর গত বছরের শুরুতে আবারও করেন স্ট্রোক। এরপর চতুর্থ স্তরের লিভার ক্যান্সার ধরা পড়ে। শরীরের সঙ্গে না পেরে প্রাণের সংগঠন বাফুফের নির্বাচনে থাকতে পারেননি, থাকতে পারেননি পৃথিবীর বুকেও।
গত বছর ২২ নভেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। বাদল রায়ের চিকিৎসার সময়ে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৭ সালে বাদল রায় স্ট্রোক করলে তাকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে চিকিৎসা করানোর ব্যবস্থা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। মৃত্যুর পরও তার পরিবারের পাশে দাঁড়ালেন।
প্রয়াত তারকা ফুটবলার বাদল রায়ের পরিবারকে একটি ফ্ল্যাট ও ২৫ লাখ টাকা উপহার দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাদল রায়ের স্ত্রী মাধুরী রায় বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ফোন করে জানানো হয়েছে, আমাদের নামে একটা ফ্ল্যাট বরাদ্দ হয়েছে। এর বেশি বিস্তারিত জানি না। শুনেছি, সাথে অর্থ বরাদ্দও আছে।’
প্রধানমন্ত্রীর উপহার প্রসঙ্গে বাদল রায়ের স্ত্রী মাধুরী রায় বলেন, ‘আমি ও আমার পরিবার তার কাছে চিরকৃতজ্ঞ। তিনি বাদলের জন্য যা করেছেন এবং এখন করলেন তাতে প্রমাণ হলো, তিনি আমাদের মাথার ওপরই আছেন। তিনি যে উপহার দিচ্ছেন, এটা আমাদের জন্য বিরাট সম্মানের।’
প্রধানমন্ত্রীর এই উপহার পেতে যারা সহযোগিতা করেছেন তাদেরকেও ধন্যবাদ জানান বাদল রায়ের স্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সহায়তার জন্য আবেদন করা হয়েছিল, তা আমি জানতাম না। একদিন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ফোন করে বলা হলো, একটি আবেদন জমা পড়েছে। কিন্তু সেখানে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। আমাকে সেটা পাঠিয়ে দিতে বলেছিল। আমি দিয়েছি। কয়েকদিন পর আবার ফোন করে জানানো হয়, বরাদ্দ অনুমোদন হওয়ার কথা। যারা উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তাদের জানাই ধন্যবাদ।’
বাদল রায়ের পরিবারকে এই বরাদ্দ পাইয়ে দেয়ার উদ্যোক্তাদের অন্যতম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক হারুনুর রশিদ, সাবেক ফুটবলার আবদুল গাফফার এবং আবাহনী সমর্থক গোষ্ঠীর সহ-সভাপতি আসাদুজ্জামান বাদশা।
বাদল রায় ছাড়া আরও কয়েকজন ফুটবলার ও সংগঠককেও অর্থ সহায়তা দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সুভাস সাহাকে ৩০ লাখ (স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্য হিসেবে ২৫ লাখ ও চিকিৎসা বাবদ ৫ লাখ), জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক সহিদ উদ্দিন সেলিমকে চিকিৎসার জন্য ১০ লাখ, সাবেক ফুটবলার আজমতকে ১০ লাখ এবং সংগঠক সাব্বির হোসেনকে ৫ লাখ টাকা সহায়তা দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, ১৯৭৭ সালে আগা খান গোল্ডকাপে ফুটবলে ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে মোহামেডানের জার্সিতে নামেন প্রথম ম্যাচ খেলতে। থামেন ১৯৮৯ সালে। এর মাঝে সাদা কালো জার্সিধারীদের হয়ে অধিনায়কত্বও করেছেন। ১৯৮১ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত মোহামেডানকে নেতৃত্ব দিয়ে জিতিয়েছেন লিগ শিরোপা। এছাড়াও খেলোয়াড় হিসেবে মোহামেডানের জার্সিতে জিতেছেন ছয়টি শিরোপা। ক্যারিয়ারের শুরুতে স্ট্রাইকার হিসেবে খেললেও পরবর্তীতে হয়ে যান অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার। তবে গোল করার অভ্যাস ঠিকই ধরে রেখেছিলেন তিনি।
বিশেষ করে চির প্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীর জালে বল জড়াতে বেশ পটু ছিলেন বাদল রায়। এক যুগেরও বেশি ক্যারিয়ারে আবাহনীর বিপক্ষে ভিন্ন পাঁচ ম্যাচে করেছেন পাঁচ গোল। আর বাদলের গোল মানে দলের জয়। আবাহনীর বিপক্ষে ওই পাঁচ ম্যাচের মধ্যে মাত্র ১টিতে হেরেছে মোহামেডান।
বাদলের গোল মানে দলের জয়, জাতীয় দলের ক্ষেত্রেও কথাটি ছিল দারুণ সত্য। জাতীয় দলেও অ্যাটাকিং মিডফিল্ডে খেলা বাদল করিয়েছেন অনেক গোল। কিন্তু যখনই গোল করেছেন, জয় দেখেছে জাতীয় দল। ১৯৮২ সালে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসে তার গোলেই মালয়েশিয়াকে হারিয়ে প্রথম জয় পায় বাংলাদেশ। ১৯৮৬ সালে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ সাদা দলের। প্রেসিডেন্টস গোল্ড কাপ নামে এই টুর্নামেন্টে তার নেতৃত্বে এই ‘প্রায় মোহামেডান’ দলটিকে সেমিফাইনালে তোলেন অধিনায়ক বাদল।
ক্যারিয়ারে নিজের পারফরম্যান্সে নিজেকে নিয়ে যান কিংবদন্তিদের কাতারে। মাঠ ছাড়ার পরেও সংগঠক হিসেবে ফুটবলের সঙ্গেই ছিলেন। ক্যারিয়ারে যেমন মোহামেডানকে আঁকড়ে ধরেছিলেন, ক্রীড়া সংগঠক হিসেবেও সাদা কালোদের শিবিরে ছিলেন। ক্লাবটির ম্যানেজার থেকে শুরু করে বিভিন্ন পদেই ছিলেন লম্বা সময় ধরে। বাফুফের সহসভাপতি পদও রাঙিয়েছিলেন।
সোনালীনিউজ/এআর