ঢাকা : তবে কি মুমিনুল হকের পথেই হাঁটবেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ? টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে জিম্বাবুয়ে সফরে গিয়ে কিংবা তার আগেই নিজ থেকে ক্যাপ্টেন্সি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেবেন বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক?
গত ১৬ জুলাই বিসিবির পরিচালক পর্ষদের সভায় তো টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক বদল নিয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি। সভা শেষে খোদ বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপনই বলেছেন, ‘মাহমুদউল্লাহর অধিনায়কত্ব নিয়ে বোর্ড মিটিংয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।’
তাহলে ওপরের কথা বলা কেন? কেন রিয়াদের মুমিনুলের পথে হাঁটার প্রশ্ন আসছে? নিশ্চয়ই মেলানো কঠিন হচ্ছে।
বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ঐটুকু বলে থামলে হয়তো মেলাতে কষ্ট হতো। কিন্তু তিনি তো আর ঐটুকু মানে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের টি-টোয়েন্টি ক্যাপ্টেন্সি বদল নিয়ে বিসিবিতে আলোচনা হয়নি, এটুকু বলেই থামেননি। আরো অনেক কথা বলেছেন। যা পর্যালোচনা আর ব্যাখ্যা করলে অন্য গন্ধ নাকে এসে লাগবেই।
বিসিবি বিগ বস ১৬ জুলাই বোর্ড সভা শেষে টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক প্রসঙ্গে আর কী কী বলেছেন? তিনি বলেছেন, ‘মাহমুদউল্লাহর অধিনায়কত্ব নিয়ে বোর্ড মিটিংয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।’ তবে তিনি যোগ করেন, ‘অধিনায়ক বদলের কোনো পরিকল্পনা আছে কি না সেটা বলা মুশকিল। তাই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কঠিন।’
বিসিবি সভাপতি বোঝানোর চেষ্টা করেন টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে হঠাৎ করে পরিবর্তন আনার চেয়ে দীর্ঘমেয়াদে চিন্তা-ভাবনার অবকাশ আছে।
তার ভাষায়, ‘টি-টোয়েন্টিতে হঠাৎ করেই কিছুটা একটা পরিবর্তন করলে আহামরি কিছু পরিবর্তন আসবে কি না তা নিশ্চিত নই। আমাদের লং টার্মে করতে হবে। যাই করি না কেন আমাদের আলাপ করে নিতে হবে। এখনো দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে আসেনি। আসার পর আলাপ আলোচনা করে দেখবো।’
প্রশ্ন ছিল, বর্তমান টি-টোয়েন্টি ক্যাপ্টেনের পারফরম্যান্সে আপনি বা বোর্ড কি সন্তুষ্ট? নাজমুল হাসান পাপন উত্তর দিতে গিয়ে টেস্ট অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়া মুমিনুল হক প্রসঙ্গ টেনে আনেন। বলেন, এটা তো কঠিন প্রশ্ন। আসলে ব্যাপারটা ঠিক তা না। মুমিনুলের অধিনায়কত্ব নিয়েও আমাদের কখনও অসন্তোষ ছিল না। সে রান পাচ্ছিল না সে জন্য ওখানে পরিবর্তন করা হয়েছিল। অধিনায়ক মুমিনুলের অধিনায়কত্বে কোনো সমস্যা আমরা দেখিনি। তবে নিশ্চিতভাবে আমরা ওয়ানডেতে তামিমের অধিনায়কত্ব দেখে খুব ভালো লেগেছে। মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে বেশি কথা হচ্ছে কারণ একটাই, ও নিজে রান পাচ্ছে না। আসল সমস্যাটা এখানে। ও আসলে ওর সঙ্গে কথা বলবো। আমার মনে হয় ও রান পেলেই ঠিক হয়ে যাবে। ও আসলে বসবো। শুনবো বিশ্বকাপ নিয়ে কী করা যায়। কিভাবে ভালো করা যায়।’
বিসিবি সভাপতির বলা কথার মানে রিয়াদের সঙ্গে তিনি খোলাখুলি বসবেন, যেমনটা বসেছিলেন মুমিনুলের সঙ্গে। সেখানে রিয়াদের অভিব্যক্তি, তার সিদ্ধান্তটাই হয়তো অনেক বড় ফ্যাক্টর হবে।
অধিনায়কের চাপে হোক র্কিংবা অফফর্মের কারণেই হোক, রিয়াদ রান পাচ্ছেন না- এটা দিবালোকের মতো পরিষ্কার। অধিনায়কের ব্যাট কথা না বলার অর্থ দাঁড়ায় তিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারছেন না। বোর্ড সভাপতি রিয়াদকে ওই কথা বললে তখন তার কিই-বা বলার থাকবে?
তিনি কি বলতে পারবেন, নাহ! আমি সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিচ্ছি? পারবেন না। তখন রিয়াদকে বিকল্প চিন্তা করতেই হবে। কাজেই অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, মুমিনুল হকের মতো বোর্ড সভাপতির সঙ্গে কথা বলে হয়তো রিয়াদও অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিতে পারেন।
সেক্ষেত্রে বিসিবির সামনে একটাই চয়েজ আছে। তা হলো সাকিব আল হাসান। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বিশ্বজোড়া নামিদামি ও ভালো পারফরমারদের ছোট্ট তালিকায়ও আছে সাকিবের নাম। তাকে বাদ দিয়ে আর কাউকে নেতৃত্ব দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। সেক্ষেত্রে রিয়াদ নিজ থেকে সরে গেলে কিংবা বোর্ড তাকে অব্যাহতি দিলে টেস্টের মত সাকিবই হবেন টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক।
সব বিচার বিশ্লেষণ ও ঘরোয়া ক্রিকেটে তার নেতৃত্বগুণ বিচার করে সাকিবের ডেপুটি করা হতে পারে উইকেটরক্ষক ব্যাটার নুরুল হাসান সোহানকে। সাহসী সোহান উইকেটের পেছনে এবং ধীরে ধীরে ব্যাট হাতেও নিজের অপরিহার্যতার প্রমাণ দিতে শুরু করেছেন। তার সহ-অধিনায়ক নির্বাচনও তাই বিতর্ক ছড়াবে না। ভেতরে ভেতরে সাকিবের ডেপুটি হিসেবে বোর্ডও হয়তো সোহানকেই বেছে নেওয়ার কথা ভাবছে।
সোনালীনিউজ/এমটিআই